খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার কারণে সরকারের নির্দেশে সাজা দেয়া হয়েছে - ড. খন্দকার মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩১ এএম, ১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৪ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে জোর করে আটকিয়ে রেখেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন দেশে এমনকি এশিয়ার মধ্যে এই চিকিৎসা সম্ভব নয়। উন্নত দেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। সরকার যদি বাধা দুর করে তাহলে হয়। বাধা তুলে নেন, ১৮ কোটি মানুষের নেত্রীকে মুক্তি দেন। গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন, প্রশাসন থেকে সবকিছু দলীয় করে রেখেছেন। দেশকে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পূণরুদ্ধার ছাড়া বিকল্প নেই। সরকারের কোন ভিত্তি নেই। অনতিবিলম্বে বাধা তুলে নেন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি করেন। এ দেশের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে নিদলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন। আওয়ামী লীগ মাঠে নাই। পুলিশ দিয়ে সব করাচ্ছে। জনগন তাদের পক্ষে নাই। চট্টগ্রাম থেকে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। এখন থেকে আন্দোলন শুরু করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাকলিয়া কালামিয়া বাজারের কে বি কনভেনশন হলে বেগম জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবীতে বিএনপির সমাবেশে এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার আজকে পঞ্চাশ বছর হয়েছে। আজকে আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য দাবি নিয়ে সমাবেশ করতে হচ্ছে। আজকে সরকার প্রধান ভয়ে ভীত হয়ে তাকে (বেগম খালেদা জিয়াকে) কারাগারে নিচ্ছে। একটা অস্থায়ীবাবে জামিন স্থগিত করেছে। এরমধ্যেও প্রতিহিংসার শর্ত দিয়েছে। এই শর্ত মানবাধিকার বিরোধী শর্ত, মৌলিখ অধিকার খর্ব করার শর্ত। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে আইনে বাধা নেই, সরকার বাধা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার কারণে সরকারের নির্দেশে সাজা দেয়া হয়েছে। আজকে বেগম জিয়া জীবন মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। হাসিনা বলেছিল, আইনে নেই, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা চাইতে। খালেদা জিয়া কোন দোষ করেন নাই। তাকে সরকারের ইচ্ছেতে একটা ভুয়া রায় দেয়া হয়েছে। যে ২ কোটি টাকা আত্বসাতের কথা বলা হেচ্ছ আজকে সেটা ৮ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। যদি ব্যাংক থেকে টাকা না তুলে তাহলে কিভাবে দোষী হয়? দোষ না করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাৗয়ার নেত্রী তিনি নন। তিনি আপস করবেন না। খালেদা জিয়া আপোসহীন নেত্রী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। যে নিয়মে আইনে সাময়িক সাজা স্থগিত করেছেন। ভূল ব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। আইনে কোন বাধা নেই, বাধা সরকারের। শর্ত দিয়ে অস্থায়ী জামিন দিয়েছে, শর্ত উঠিয়ে সে বাধা দুর করতে পারবে।
এক টাকা উত্তোলন না করেও কিভাবে এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন এমন প্রশ্ন করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আইনে বিনা শর্তে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো সম্ভব। দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বেগম জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
দেশের মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি সরকার। ২৯ তারিখ ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদার যে অসুস্থতা সেটা বাংলাদেশ নয় এশিয়া মহাদেশে পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। কোন রকমের প্রতি দয়া ও মোহাব্বত করার দরকার নেই।
বেগম জিয়ার বিনা শর্তে মুক্তি দাবি জানিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী সরকার দেশকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সরকারকে একটি ধাক্কা দিতে পারলেই কোন ধরনের অস্তিত্ব থাকবে না। পুলিশকে থানায় রাখেন, মাঠে আওয়ামী লীগকে পাঠান। তখন মাঠে প্রমাণ করবো।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা.শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশ শুরু হওয়ার অনেক আগে সমাবেশের মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন ফেনী, নোয়াখালি, লক্ষিপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, কসবাজার, চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরীর বিভিন থানা ওয়ার্ড থেকে ব্যানার ফেষ্টুন নিয়ে নেতা কর্মী সমর্থকরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে দেখা যায়।
ব্যানারে দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবী লেখা ছিল। দুপুর ২ টার পর সমাবেশের মাঠ পূর্ণ হয়ে রাস্তায় ভরে যায়।দুপুর ১টা৪০ মিনিটে ওলামাদলের সাধারণ সম্পাদক মওলানা হান্নান জিলানী কোরানতেলায়াত এর মধ্যে সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস. এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
বক্তব্য রাখেন লুৎপুর রহমান কাজল, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুন অর রশিদ, আবু সুফিয়ান, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, নুরিআরা ছাপা, সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, গোলাম হায়দার, মোছতাদুল করিম বাচ্ছু, মামুনুর রশিদ মামুন, শেখ ফরিদ বাহার, উদয় কুসুম বড়ুয়া, মোশারফ হোসেন বিপ্লব, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এরশাদ উল্লাহ, মোসতাক আহমদ খান, মোশারফ হোসেন হোসেন দিপ্তি, মোহাম্মদ সাহেদ, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইন্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, এস কে কোতা তোতন, নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল, এনামুল হক এনাম, এডভোকেট এনামুল হক, এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, আবদুর রহমান, আকতার উদ্দিন আকতার, আলাউদ্দিন আলাল, দিপেন তালুকদার, নুরুল আমিন, নুর মোহাম্মদ, হাছান জসিম, ফাতেমা বাদশা, মোহাম্মদ রাসেদ, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ শহিদ ,শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন বলেন, বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষকের দল। বেগম খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। আজকে তাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে বন্দি করে রেখেছে সরকার। শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নিজের মামলাগুলো তুলে নিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে জেলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা জনগণের সরকার না, তারা বাহিনীর সরকার। ওবাইদুল কাদের এখন সুন্দর সুন্দর কথা বলছেন। তিনি কথা শিল্পী হিসেবে ভাল পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্যেশ্য করে বলেন, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেন। না দিলে জনগন আপনাদেরকে থুথু দিবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন,আজকের এই বিভাগীয় সমাবেশ প্রমাণ করেছে, যদি বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়া হবে। আমরা ঘরে বসে থাকবো না। বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহবায়যক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকের এই সমাবেশ ১০ বছর আগের পলোগ্রাউন্ডের জনসভার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। চট্টগ্রামের মানুষ প্রমাণ করেছে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠালে শেখ হাসিনার পতন ঘন্টা বাজানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিন, না হয় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। অতো দানাই পানাই করবেন না, চট্টগ্রামবাসী শেখ হাসিনাকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে। বেগম খালেদা জিয়া কারো করুণার পাত্র নয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনা কানের চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে যাননি, তিনি দেশেই চিকিৎসার পক্ষে ছিলেন। তিনি নেতাকর্মীদেরকে কাফনের কাপড় পরে প্রয়োজনে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।