ভয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১০ এএম, ৩০ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০১:১২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
খুনের আসামির সাজা মওকুফ হলেও গণতন্ত্রের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পাওয়ার মৌলিক অধিকার হরণ করেছে সরকার। খুনের আসামির সাজা মওকুফ করলেও গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তি মিলছে না। কারণ সরকার গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক দলের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাই খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি তুলছে, কিন্তু অবৈধ সরকার কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করছে না। ফ্যাসিবাদের সকল স্বরূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে তারা। দয়া মায়া মানবতা বলতে কিছু নেই তাদের। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। এ সময় মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান রিজভী। লিফলেট বিতরণকালে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ফিরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ ‘গণতন্ত্রের মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নানাবিধ জটিল রোগে তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের জায়গায় চলে এসেছেন। গতকাল তাঁর মেডিকেল বোর্ডও তাঁর শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে বিস্তারিত যা তুলে ধরেছেন তা উদ্বেগজনক। সেখানেও চিকিৎসকগণ তাঁর অবনতিশীল গুরুতর শারীরিক অবস্থার কথা বলেছেন। এক প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশনেত্রীর জীবন। দেশে চিকিৎসা দেয়ার মতো আর কিছু বাকি নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে বিদেশে উন্নত ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। গণতন্ত্র উদ্ধারের অবিসংবাদিত এই নেত্রী শত নির্যাতনের মুখেও নিজ লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন। তাঁকে বিন্দুমাত্র টলানো যায়নি। গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ জনগণের জীবনমানের উন্নতির জন্য দেশনেত্রীর অবদান অবিস্মরণীয়। নারীর ক্ষমতায়ন বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ও উপবৃত্তি চালুর মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন সমাজ উন্নয়নে। বেগম খালেদা জিয়ার আমলে প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক দুর্যোগকে সামলাতে গিয়ে দেশকে খাদ্য সংকট অথবা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেননি। বরং তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে দেশ ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন এবং সকল অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতেই পারছে না। সমস্ত মানবিকতাকে বিসর্জন দিয়ে প্রতিহিংসা পূরণে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে তারা। বাংলাদেশ থেকে স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি, মৌলিক মানবাধিকার, মানবিক মর্যাদা, অন্যের প্রতি সম্মান মুছে ফেলার জন্যই দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। তাঁকে জেলবন্দি অবস্থায় অসুস্থ করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ তো দূরে থাক, তাঁর মানবাধিকারকেও হরণ করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদ আজ উগ্র রূপ ধারণ করেছে বলেই দেশের বৃহত্তম দলের নেত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধুঁকছেন। ফ্যাসিস্টরা সহমর্মিতা, সহানুভূতির ধার ধারে না। এরা নির্দয় দমন-পীড়নে সকল সমালোচনা ও বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার কাজেই ব্যাপৃত থাকে। বাংলাদেশের আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এখন পৃথিবীতে দৃষ্টান্তহীন নির্মমতার ভয়ানক রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে অবিলম্বে তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপির উদ্যোগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।