৮০ লাখ টাকায় আমার নৌকা বিক্রি হয়েছে- অভিযোগ প্রার্থীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৪৯ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন। এ নির্বাচনে নোয়াখালীর সদর উপজেলার ৯ টি ও কাবরহাট উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই নির্বাচনে কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ২৩ নভেম্বর রাতে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মো. কামাল উদ্দিনের নাম চুড়ান্ত করা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে তা ঐদিন রাতেই প্রকাশ করা হয়।
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর এলাকায় এসে মো. কামাল উদ্দিন প্রচারণা শুরু করেন। কিন্তু ২৪ নভেম্বর রাত থেকে এ নির্বাচনী এলাকায় গুজ্ঞন শুরু হয় মনোনয়ন মো. কামাল উদ্দিনকে নয়, দেয়া হয়েছেমো. কামাল খানকে। এ নিয়ে এলাকায় বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি হয়।
মো. কামাল উদ্দিন গতকাল (২৬ নভেম্বর) অভিযোগ করে বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়েছি। আমার প্রতি আওয়ামী লীগের সমর্থন ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে আমার নাম এসেছে। টাকার কাছে কামাল উদ্দিনের নৌকা বিক্রি হয়েছে কামাল খানের কাছে। আমি শুনেছি ৮০ লাখ টাকায় আমার নৌকা বিক্রি হয়ে গেছে কামাল খানের কাছে।
গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে এক মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী রাজনীতি করি। যদি দল আমাকে সমর্থন না করে তাহলে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরেও কিভাবে সেটা পরিবর্তন হয়, তা আমি জানিনা। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি উনি যেনো সঠিক তদন্ত করে এর আসল রহস্য বের করেন।
মানববন্ধনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলীল বলেন, দলীয় মনোনয়ন নিয়ে যারা রাজনীতি করেছে তারা আওয়ামী লীগের সম্মান হানী করতে চাচ্ছে। আমাদের সকলের দাবি কামাল উদ্দিনের নৌকা কামাল উদ্দিনকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন বলেন, কামাল খান ভারত থেকে এসেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন না। কোনো দিন আওয়ামী লীগে যোগদানও করেন নাই। কিন্তু আজ তিনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এটা প্রকৃত আওয়ামী লীগের মানুষজনের জন্য লজ্জার বিষয়। আমরা চাই যিনি প্রকৃত আওয়ামী লীগ করেন তাকেই যেনো নৌকা প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে নৌকা প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল আমিন বলেন, মো. কামাল উদ্দিন পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান। যখন তালিকায় তার নাম প্রকাশ হলো, তারপর থেকে তিনি এলাকায় এসে মানুষের সঙ্গে দেখা করেছে। সবার সঙ্গে কথা বলেছে। ২৪ নভেম্বর রাতে সবাই বলাবলি করছে মোহাম্মদ কামাল খান নাকি মনোনয়ন পেয়েছে। এটা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু বলেন, যেন সার্কাসের শেষ নেই। 'কামাল উদ্দীন' নাম হয়ে যাচ্ছে 'কামাল খান'। এই কামাল খান কখনো আওয়ামী লীগ করেন নাই। তিনি ভারত থেকে এসেছেন। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের। অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী থাকার পরও এমন কিছু আমাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে মো. কামাল খান বলেন, কম্পিউটার টাইপিং ভুল হয়েছে। তালিকায় আমার নাম নেই। তবে আমার নামে চিঠি হয়েছে। সেই অনুযায়ী আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করব।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। একই নামে একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। তবে যিনি আমাদের সঠিক দলীয় মনোনয়নপত্র দিতে পারবেন, তিনিই পাবেন নৌকা প্রতীক।
মো. কামাল উদ্দিন করিবহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামের হাজী বজলুর রহমানের ছেলে। মোহাম্মদ কামাল খান একই ইউনিয়নের দক্ষিণ জগানন্দ গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে।
উল্লেখ্য, কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন বাংণাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা।