বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নিকট বিএনপি’র পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৮ পিএম, ২৪ নভেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:২৯ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র পৃথক পৃথক ভাবে স্মারক লিপি প্রদান করেন।
আজ বুধবার কেন্দ্রীয় বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষে এনডিসি তৌহিদুর ইসলাম স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্বারকলিপিতে বলা হয়, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী সাজানো মামলায় ফরমায়েসী রায়র মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়। তাকে যখন কারাগারে নেয়া হয় তখন তিনি সুস্থ ছিলেন, যা দেশবাসী গণমাধ্যমে অবলোকন করেছেন। দীর্ঘ কারাবাসে তিনি ক্রমান্বয়ে অসুস্থ হতে থাকেন। কারাগারে নানাবিধ জটিল রোগে ভূগতে থাকলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার তার সুচিকিৎসার জন্য দাবি করা হলেও সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে নির্বিকার থাকে। ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে করোনা শুরু হলে বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে নিজ বাসভবনে থাকতে দেয়া হলেও সরকার এটিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি বলে অভিহিত করেছে। নিজ বাসভবনে অবস্থান করলেও মূলত: বেগম খালেদা জিয়া বন্দী এবং তার সকল মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
এরপর বেগম খালেদা জিয়া করোনায় গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও পোষ্টকোভিড জটিলতা এবং এর ওপর নানাবিধ রোগ তার জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডও তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন শুধুমাত্র বিএনপি ই নয়, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও আইন বিশেষজ্ঞগণ। আজকে দেশের আপামর জনসাধারণ দেশনেত্রীর মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সোচ্চার। সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দেশের প্রচলিত আইনে কোন বাধা নেই বলে আইন বিশেজ্ঞরা অভিমত দিয়েছন। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী দুর্বিনীত অমানবিক সিদ্ধান্তে জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না দেয়া তার মৌলিক অধিকার হরণ। দেশবাসী এই নির্দয় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়।
বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য তাকে অবিলম্বে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং এর ফলে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে সরকার এর দায় এড়াাতে পারবে না। জনগণ মনে করে-সরকার নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য দেশকে অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতেই জনগণের অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম জিয়ার প্রতি মনুষ্যত্বহীন আচরণ করছে। এই মুহুর্তে মানবিক বিবেচনায় বেগম জিয়াকে মুক্তি এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে বিদেশ পাঠাতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসা পেতে তাকে বিদেশ পাঠানোর দাবী এখন জনদাবীতে পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে এই স্মারকলিপিটি সরকারের নিকট পেশ করার জন্য অনুরোধ করছি।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবেবুর রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে স্পষ্ট যে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার সুপরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এই সময়ে বেগম জিয়াকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে দিচ্ছে না। কারণ সরকার বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বকে ভয় পায়। তারা জনগণের মতামতের কোন তোয়াাক্কা না করেই একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। দেশের শাসন ব্যবস্থা, গনতন্ত্র ভোটাধিকার গৃহবন্দি।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সারাজীবন গনতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সে নেত্রী আজ চিকিৎসাহীনভাবে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে অবিলম্বে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার সব দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন সরকারের এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত আছে।
ডা. শাহাদাত বলেন, আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হলে, জনগণকে রক্ষা করতে হলে, গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে, আমাদের বাতিঘর বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। কারণ খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। দীর্ঘ নয় বছর জনগনকে সাথে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। তিনি এখনো কারাগারে রয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য। তিনি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, সরকার আইনের দোহায় দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। কিন্তু আইনের যে ধারা রয়েছে, সংবিধানের ৪০১ ধারাতে স্পষ্টভাবে বলা আছে, সরকার যখনই যাকে চায়, তাকেই বিদেশে প্রেরণ করতে পারবে। কিন্তু আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে এই সরকারকে সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এই অবৈধ সরকারকে কোনো ক্ষমা করবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে সুচিকিৎসা সুযোগ দিতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯৯১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি দেশের নাজুক অর্থনীতিকে কাঠামোগত নানান পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে চাঙ্গা করেছেন। অর্থনীতির উদারীকরণ ছাড়াও খালেদা জিয়ার আমলে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা বিস্তারে প্রভূত উন্নত হয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে বেগম খালেদা জিয়াকে দেশে চিকিৎসা দেওয়ার মত আর কিছু বাকী নেই। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে চিকিৎসার কোন বিকল্প নেই। নানান রোগে আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে বিদেশেসুচিকিৎসার সুযোগ দিন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক এস.এম.সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মোঃ শাহ আলম, আব্দুল মান্নান, সদস্য এডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া, আনোয়ার হোসেন লিপু, মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু, কামরুল ইসলাম, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খান, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া প্রমুখ।
স্মারকলিপি প্রদানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান, সদস্য নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, লায়ন হেলাল উদ্দিন, হুমায়ুন কবির আনসার, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জাহেদ, এড. ফৌজুল আমিন, ব্যাংকার মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ শহীদুল আলম শহীদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির এমএ হালিম, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুর মোহাম্মদ, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, কাজি সালাউদ্দীন, জসিম উদ্দীন চৌধুরী, জাকের হোসেন, হাছান মোহাম্মদ জসিম, সরোয়ার সেলিম, নুরুল হুদাসহ নেতৃবৃন্দ।