রাজনীতিকে দস্যুতে পরিণত করেছেন প্রধানমন্ত্রী - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৬ এএম, ২২ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৩ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রকে হত্যা করে দিনের ভোট রাতে করে রাজনীতিকে দস্যুতে পরিণত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, জনগণের মনে শঙ্কা যে, আপনি (শেখ হাসিনা) বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো-পয়জনিং করেছেন, এর কারণেই তাঁকে বিদেশ যেতে দিচ্ছেন না। বিদেশে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি সেটা বেরিয়ে আসে। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যখন গেলেন তখন তিনি পায়ে হেঁটে গেছেন। আজকে এই গুরুতর অবস্থা কেন, অসুস্থতা কেন। আজকে এই গুরুতর অসুস্থতা নিশ্চয়ই কারাগারে দেশনেত্রীকে তিলে তিলে ধ্বংস করার জন্য আপনি কিছু প্রয়োগ করেছেন কিনা এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন, তাঁকে স্লো-পয়জনিং করেছে কিনা এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন।
আজ রবিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার জনগণের সমর্থন দরকার নেই, ভোটের দরকার নেই। তার জবাবদিহিতার দরকার নেই। তিনি গোটা জাতির কাছে টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ দিয়েছেন তার লোকজনদেরকে। তারা এখন বিদেশে বাড়িঘর বানাচ্ছে যে কোনো পরিবর্তন হলে তারা চলে যাবে। টের পাচ্ছে না কেউ পাশে থাকবে না। এই ধরনের গণবিরোধী মানুষের পাশে কেউ কখনও থাকেনি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যত জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে গেছেন শুধু গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য। তিনি কখনো কি কম নির্যাতন সহ্য করেছেন? সাতবার গৃহবন্দি হয়েছেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। তারপরও তিনি বিচ্যুত হননি তাঁর কর্তব্য পালন থেকে, তাঁর লক্ষ্য থেকে, এই হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া। রাজপথে তাঁর অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে গেছেন। এই কারণেই দেশের শত্রুরা মূল টার্গেট করেছে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করার মধ্য দিয়ে। অপরাধ তাঁর (খালেদা জিয়া) নেই। অপরাধ তারা খুঁজে বের করে যে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা দুর্নীতি ব্যক্তির জন্য এতো মায়াকান্না। উনি বলে দেশের রাজনীতিবিদ, প্রধানমন্ত্রী- ন্যূনতম সভ্যতার ওপর তিনি নির্ভর করেন না। হিংসা, নিষ্ঠুরতা, প্রতিহিংসা করে নিজের অবৈধ ক্ষমতায় টিকে থাকার পর মানুষ কি বলছে, জনগণ কি বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি বলছে এই লাজ লজ্জার সমস্ত ভূষণ কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অকাতরে বিপদ গাঢ় করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি দন্ডিত ব্যক্তি বলছেন একটু অপেক্ষা করেন আপনি কিভাবে দন্ডিত ব্যক্তি হতে পারেন এই বিচার বিভাগই আপনার বিরুদ্ধে রায় দেবে। যেভাবে কব্জায় করে আপনি এটা করেছেন, আপনি এতো অন্যায় করেছেন। যে কোনো দিক দিয়ে কোনো কিছু করার নেই। এই দেশের মানুষ দেখবে দন্ড কার ওপর আরোপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রিজভী আরও বলেন, আপনার প্রভুরা আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছে আপনি টের পাচ্ছেন না। যে কালবৈশাখী ঝড় আপনার দিকে ধেয়ে আসছে আর এই কালবৈশাখী ঝড়ে আপনি আর আপনার সরকার খড় কুটোর মত টের পাচ্ছেন না। চামচা আপনার চারদিকে।
তিনি বলেন, গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নোবেল প্রাইজ পাবেন। আমার ধারণা ছিল যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটু কম কথাবার্তা বলেন। কিন্তু এর মধ্যেও আমরা হাছান মাহমুদের সিনড্রোম দেখতে পাচ্ছি, সম্পূর্ণ হাছান মাহমুদের সিনড্রোম তার ওপর ভর করেছে। ওবায়দুল কাদেরের সিনড্রোম ভর করেছে তার ওপর। অথচ একটা প্রবাদ যে ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ এই অবস্থা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। চারদিকে অসৎ লোক থাকলে আর কতটা ভালো থাকা যায়।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা ভুলে গেছেন জনগণের নেত্রীকে দমন করা যায় না। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাঁকে কারাগারে বন্দি করে রাখতে পারেন। গোটা দেশের মানুষের কাছে তিনি অস্তিত্ববান, তিনি জীবন্ত, পদ্মা- মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ে বেগম খালেদা জিয়ার নাম। হেমন্তের ধানের মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার নাম, আপনি হেমন্তের বাতাসকে আটকাবেন কি করে, আপনি পদ্মা-মেঘনার ঢেউকে আটকাবেন কি করে সেখানে প্রতিনিয়ত বেগম খালেদা জিয়ার নাম।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর আমরা বলেছি এই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে সেøা-পয়জনিং করতে পারে এই সরকার তাঁকে বিষ প্রয়োগ করতে পারে। আজকে যে তাঁকে মুক্তি দিচ্ছেন না, আজকে যে তাঁকে বিদেশ পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছেন না। আজকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, আজকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হচ্ছে শেখ হাসিনার নিজের আইনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছেলেধরারা যেমন মুক্তিপণ আদায় করে ঠিক আজকে খালেদা জিয়াকে দস্যু ব্যক্তির মতো শেখ হাসিনা আটকে রেখেছে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল বক্তব্য দেন। এছাড়াও দোয়া মাহফিলে বিএনপির মীর সরফত আলী সপু, আমিনুল ইসলাম, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, আনু মোহাম্মাদ শামীম, আনোয়ার মোহাম্মদ শামীম আজাদ, সুলতান মো. নাসির, সাহাবুদ্দিন মুন্না, এবিএম পারভেজ রেজা, ওয়াহিদ ইমতিয়াজ বকুল, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম, আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, যুগ্ম সম্পাদক সাদরেজ জামান, আরিফুর রহমান, তারেক-উজ জামান তারেক, মুস্তাফিজুর রহমান মনির, আবদুল কুদ্দুস, আশরাফ উদ্দিন রুবেল, আহসান হাবিব প্রান্ত, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণের এসএম জিলানী, নজরুল ইসলাম, উত্তরের ফখরুল ইসলাম রবিন, গাজী রেজওয়ানুল হোসেন রিয়াজ প্রমুখ নেতারা অংশ নেন।