সরকার খালেদা জিয়াকে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৮ এএম, ২০ নভেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪২ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে গুরুতর অসুস্থ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের নানা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত টেনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের নসরুল হামিদের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের (সরকারের) লক্ষ্য একটাই- এখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে এখন তারা জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে, চক্রান্ত করছে। সেই কারণে তারা তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগটা দিতে চাচ্ছে না। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার আবেদন করেছিল। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকালও আইনমন্ত্রী বললেন, এখানে কোনো আইনেই সুযোগ নেই তাঁকে বিদেশে পাঠানোর। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। আইনে সুযোগ রয়েছে। ওই যে তারা আইনের কথা বলছেন ৪০১, সেই ৪০১-এর মধ্যেই বলা আছে সম্পূর্ণ এখতিয়ারটা সরকারের। সরকার চাইলে তাঁকে (বেগম খালেদা জিয়া) মুক্তি দিতে পারেন, সরকার চাইলে তাঁকে বিদেশে পাঠাতে পারেন চিকিৎসার জন্য, সরকার চাইলে পুরোপুরি মওকুফ করে দিতে পারেন। আরো কর্মসূচি আসবে বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গণঅনশনের আহবান জানিয়েছি। এটা আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসে অনুষ্ঠিত হবে। জায়গা তো পাওয়া যায় না। আমরা অনেক জায়গা চেয়েছিলাম, তারা জায়গা দেয়নি, আমরা কেন্দ্রীয় অফিসে করছি। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি হবে। আমরা আশা করব যে, তারা (২০ দলসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল) সবাই আমাদের এই গণঅনশনে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। আমরা তাদের আহবান জানাচ্ছি যে, আপনারা দয়া করে আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসে আসবেন। আসুন, দেশনেত্রী বিদেশে চিকিৎসার যেন সুযোগ পান সেই আন্দোলনটা জোরদার করি। সেখানে থেকে পরবর্তীতে আরো কর্মসূচি আছে তা আমরা ঘোষণা করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন ছাড়া কোনোমতেই এই দানবীয় সরকারকে সরানো সম্ভব হবে নয়। আজকের এই আলোচনায় যে প্রস্তাবগুলো এসেছে যে আপনারা যুগপৎ অথবা এক মঞ্চ সেটা পরে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা শুরু করি আমাদের জায়গা থেকে। সেই আহবান আমি আগেও জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি। আমাদের দল থেকে পরিষ্কার আহবান আছে আসুন আমরা সবাই এক সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে মিনিমাম দাবির ভিত্তিতে মূল দাবি তো একটাই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি- এই বিষয়ে আমরা একসাথে আন্দোলন করি এবং এদের হাত থেকে দেশকে, জনগণকে রক্ষা করি। এটা সত্য যে, এটা করতে যদি আমরা ব্যর্থ হই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনোই আমাদের ক্ষমা করবে না।’
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, এই সময়ে বাংলাদেশে তাঁর মতো জনপ্রিয় কোনো নেতা নেই। তিনি বিনা চিকিৎসায় প্রায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছেন। কত ধরনের জটিলতা শরীরের মধ্যে আছে।
ওই এভারকেয়ার হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছেন, মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে চিকিৎসা ছাড়া তাঁর ডায়োগনাইসিস করাই তো সম্ভব হচ্ছে না পুরোটা। যখন এরকম করে এতবড় একজন নেত্রী মৃত্যুর মুখোমুখি তখন আরেক নেত্রী ক্ষমতার মদমত্তায় এমন নিষ্ঠুর রসিকতা করছেন যেগুলো দেখলে গা ঘিন ঘিন করে। সবাই দেখেছেন। মনে হচ্ছে একবার ক্ষমতা পাওয়ার পরে এই ক্ষমতাকে মুখ্য মনে করেন। যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন এবং সেই কারণে মিথ্যাচার এরকম করে করছেন, যার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, একটি আইন মন্ত্রী বানিয়েছেন একটা অপদার্থ মূর্খ আইনমন্ত্রী। ঠিকমতো আইনও জানে না, ইতিহাস জানে না। এই বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়ার ইতিহাস নতুন নয়। উদাহরণ আছে। এই বাংলাদেশে যে বলে আমরা সমস্ত উন্নত চিকিৎসার আমরা ব্যবস্থা করেছি। আমি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে বাইরে আসার পরে সাংবাদিকদের বলেছিলাম, তাই যদি সত্য হয় কত বড় অসুখ নিয়ে রাষ্ট্রপতি জার্মানি, জাপান, লন্ডনে চিকিৎসা করতে যান আমাদেরকে বলেন। কোন অসুখ নিয়ে শেখ হাসিনা কয়েকবার করে লন্ডনে যাচ্ছেন আমাদেরকে বলেন। আপনাদের বেলায় লীলাখেলা। যখন মনে হবে লন্ডন যাবেন, আমেরিকা যাবেন, ইন্ডিয়া যাবেন। তোফায়েল আহমেদ সাহেব কতদিন থাকলেন, মোহাম্মদ নাসিম (বর্তমানে প্রয়াত) এখন নেই কিন্তু গেছেন। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে তারা সবাই বলেছেন, আমরা আইনের দ্বারা বাধা আছি। সমস্ত আইন একটির পর একটি লঙ্ঘন করেছে তারা। এখন পর্যন্ত করছে। ওদের তো বৈধতাই নেই। মান্না বলেন, চিকিৎসার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার মতো এতবড় নেত্রী মারা যাবেন- এটা চুপচাপ বসে দেখা যাবে না। সে জন্যই এই লড়াই আমাদের সবার। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই লড়াই করতে হবে।
এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকিব, জাগপা’র খন্দকার লুৎফর রহমান, এলডিপি’র সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপি’র আবু তাহের, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর প্রমুখ।