খালেদা জিয়া ‘জীবন-মৃত্যুর’ সাথে যুদ্ধ করছেন - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫১ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘জীবন-মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ’ করছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরীর হলে বিএনপির উদ্যোগে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করছেন। তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তিনি বিভিন্ন রকম অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। এই অসুখ এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে, তাঁকে বাইরে চিকিৎসা করাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়, একথা ডাক্তাররাই বলছেন, তাঁকে বিদেশে পাঠালে তিনি সুস্থ হবেন। বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে আজ দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব একথা জানান। এভারকেয়ার সবচেয়ে ভালো হাসপাতাল। এখানে যে ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে তারাও বলছেন যে, আমরা পুরোপুরি একুইপ্ট নই তাঁর এই অসুখগুলো সারিয়ে তুলতে। এখন দেশনেত্রীর বিদেশে চিকিৎসাটা সবচেয়ে জরুরি। একথা বার বার বলা হচ্ছে। আজকে অন্যান্য দলগুলো বলছে, সবাই বলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেত্রী তিনি সম্পূর্ণভাবে সেটাকে গ্রহণ করছেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আবারো বলছি, আবারো আহবান জানাতে চাই যে, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন তাঁর জীবন রক্ষার্থে। এর সঙ্গে রাজনীতিকে নিয়ে আসবেন না। কারণ এই নেত্রীর যে অবদান এই নেত্রীকে অপমান করা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপমান করা। ১৯৭১ সালে এই নেত্রী গৃহবধূ ছিলেন। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান যখন বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে যান তখন এই দুইটি শিশু তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) বেরিয়ে এসেছিলেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ ৮ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। অর্থাৎ এদেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর যে অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। পরবর্তীকালে এই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম দীর্ঘ ৯ বছরের এবং এখনো এই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি কিন্তু কারাগারে আছেন। নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আসুন, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে যখন আমরা স্মরণ করবো, তার আর্দশকে যখন আমরা স্মরণ করবো সেই সঙ্গে আমরা সবাই আজকে যে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু নই যারা আমরা রাজনীতি করি আমরা স্বীকার করি যে, এই নেত্রীর যে অবদান সেই অবদান বর্তমানে জীবিত কোনো রাজনৈতিক নেতার নেই। হায়াত মউত তো আল্লাহর হাতে। এই নেত্রীকে বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক যে প্রচেষ্টা সেই প্রচেষ্টা গ্রহণ করবার জন্য প্রয়োজনে আমাদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করবো। আসুন সেইভাবে আমরা প্রস্তুতি নেই, সেইভাবে আমরা কাজ করি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, কেউ যদি মনে করেন পালিয়ে দূরে গিয়ে বাঁচা যাবে, তাহলে ভুল ভাবছেন, বাঁচতে পারবেন না। গতকাল হয়তো আমাকে নেবে কাল আপনাকে বা অন্য কাউকে নেবে। সেজন্য সাহসের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে সঠিক পথে সঠিক রাস্তায় এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যদি মওলানা ভাসানী বেঁচে থাকতেন তাহলে এখন যে অন্যায় অবিচার নির্মমতা, ভয়ঙ্কর যে লুটপাট তার বিরুদ্ধে তিনি গর্জে উঠতেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলখানায় থাকতেন না। অনেক আগেই মওলানা ভাসানীর হুংকারে তিনি বেরিয়ে আসতেন। এটা আমাদের দীনতা রাজনীতির।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমি কাউকে ছোট করছি না। আমাদের যে রাজনীতির দীনতা, স্বপ্নের দীনতা, আমাদের দেশনেত্রী যিনি বাংলাদেশের অহংকার তিনি তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন। আর আমরা কার্যকরভাবে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছি না। মওলানা ভাসানী যদি থাকতেন আশার প্রদীপ হয়তো জ্বালাতেন।
কৃষক দলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, আমাদের পূর্বসূরী যারা মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, একেএম ফজলুল হক, ওনারা স্বাধীনতার প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনো আপস করেন নাই। আমরা যদি তাদের উত্তরসূরি হই। তাহলে সেই চিন্তাকে, তাদের স্বপ্নকে আমাদেরকে ধারণ করতে হবে। তাহলে তাদের প্রতি সত্যিকারের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী, শহীদ জিয়াউর রহমানের যে অবদান তার ন্যূনতম ইতিহাস এখন নাই। পাঠ্যবইও নাই। এক ভয়ঙ্কর নষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা অতিবাহিত করছি। বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পালিয়ে বাঁচা যাবে না। আমরা যদি একে অপরকে মনে করি পালিয়ে দূরে গিয়ে বাঁচা যাবে এটা হবে না। গতকাল হয়তো আমাকে নেবে কাল আপনাকে বা অন্য কাউকে নেবে। সেজন্য সাহসের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে সঠিক পথে সঠিক রাস্তায় এগিয়ে যেতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) আজকে হাসপাতালে লড়ছেন তাঁর অসুস্থতার সাথে। তাঁর রেখে যাওয়া কর্মকান্ড আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী যেভাবে শুরু করেছিলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া সেটা ধারণ করেছেন। এই পতাকা কখনোই মাটিতে নুয়ে পড়বে না। অত্যন্ত বেদনার সাথে বলতে চাই, আমরা কি করেছি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য? করতে পেরেছি আমরা? কিছুই করতে পারি নাই। বিএনপি'র গৌরবময় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হাজারও সফলতা ও কৃতিত্বের মাঝে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারা কলঙ্কময় একটি ক্ষত। ব্যর্থতা আমার ব্যর্থতা আপনার ব্যর্থতা সকলের। গ্লানি মোচনের দায়িত্ব আমাদের সকলের।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, কি ভয়ংকর নির্যাতন, নিপীড়নের মধ্যে তিনি (খালেদা জিয়া) গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। সেদিন দলের পক্ষ থেকে অনেকেই বলেছে, যে জায়গায় তাঁকে রাখা হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষ থাকতে পারে না। সেখানে সারাক্ষণ বালু উড়ছে। কিছুদিন পূর্বে তাঁর একটি চোখে অপারেশন হয়েছে, যে চোখে অপারেশন হয়েছে সেই চোখের মধ্যে বালুগুলো পড়ছে। কত বড় একটি ভয়ঙ্কর যন্ত্রণাদায়ক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে তাঁকে রাখা হয়েছে। নির্যাতন-নিপীড়ন করতে করতে আজকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রিজভী বলেন, ভদ্রতার কথা শুনেছেন, কি যে অহংকার। ওরে বাপরে বাপ। যে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল একুশে আগস্ট, আমার পরিবারের যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে এর পেছনে মদদ রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া বা বিএনপি সরকারের এগুলোর পেছনে মদদ রয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় এটি প্রতিহিংসা। এখানে আইন নেই, বিচার নেই, প্রতিহিংসার কারণে আজকের জমিদারের যে শাসন, জমিদারদের যারা খাজনা দিত না তাদের নিজস্ব কারাগারে রাখতেন। আজকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে তার ব্যক্তিগত ওই ধরনের কারাগার বানিয়েছেন। তিনি যাদের প্রতি অসন্তুষ্ট তিনি তাদের প্রতি প্রতিহিংসায় ভুগবেন তারা কারাগারে ভুগবেন। এটা প্রতিনিয়ত তার কথার মধ্যে বেরিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেননি। তাঁকে সাজা দেয়া যায় না। তিনি সাজা দিয়েছেন জোর করে। তিনি সাজা দিয়েছেন প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আর সেই সাজায় এখন তিনি অসুস্থ হয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা বইয়ের মধ্যে পড়েছি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কৃষক আন্দোলনের কথা। সেটা ভুলে যাবার নয়। পাকিস্তান আন্দোলনের আমরা সমস্ত কিছুই জানি। আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি তার যে ভূমিকা রয়েছে। অনেকে আমরা বলি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে ফজলুল হক এই প্রস্তাবটি করেছেন, কিন্তু এই প্রস্তাবটির সমর্থনকারী কে সেটা আমরা বলি না। এই প্রস্তাবটি করেছিলেন আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। মওলানা ভাসানী ইতিহাসের অংশ, মওলানা ভাসানী নিজেই ইতিহাস।
রিজভী বলেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়। কিভাবে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, নিজের মাটি রক্ষার জন্য, নিজের পানিকে রক্ষার জন্য, আদায় করার জন্য সোচ্চার হতে হয় আমরা ফারাক্কা মিছিল থেকে দেখেছি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা দেখেছি আবার আরেকটি ফারাক্কা মিছিল, আমরা দেখেছি টিপাই মুখের জন্য তাঁর সোচ্চার কণ্ঠ, আবার আমরা দেখেছি তিস্তা নদীর পানির জন্য তাঁর সোচ্চার কণ্ঠ, আবার দেখেছি সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে বেগম খালেদা জিয়ার সোচ্চার কণ্ঠ। যখন এই সরকার নতজানু, যখন এই সরকার ক্ষমতার জন্য নিজের আত্মা বিক্রি করে দিয়েছে, তখন আমারা দেখেছি বেগম খালেদা জিয়ার সাহসী উচ্চারণ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য এসকে সাদীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।