বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়াতেই সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে-রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২০ এএম, ২৯ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০২:৪৩ পিএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়াতেই সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে’। ‘বিএনপি তখন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত করতে এবং গণতন্ত্রকে সংকটে ফেলতে চেয়েছিল’।
তিনি আরও বলেছেন, দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে, উচ্চ ও নিম্ন আদালতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথাতেই বোঝা যায় যে, নির্বাচনে বিএনপি না আসুক, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই তারা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। কারণ বিএনপির অংশগ্রহণের কারণে তাদেরকে বিজয়ী হতে ভোটকেন্দ্র দখল করতে হয়, নিশিরাতে নৌকায় সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভরতে হয়, নির্বাচনে সহিংসতা করতে হয়, ভোটারদের ভয় দেখাতে হয়। ফলে তাদের স্বরূপ জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। আর এই কারণেই ওবায়দুল কাদের সাহেবের বাকশালী চেতনা জাহির হয়ে পড়ে যে, বিএনপি কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কারণ একতরফা নির্বাচনই হচ্ছে তাদের চেতনা। বন্দুকের জোরে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এখন বাকশালী গণতন্ত্রের চর্চা করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলেছেন। তার নমুনা আপনারা দেখেছেন গতকাল শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি আর পাচারের সাথে জড়িত এমপি পাপুলের স্ত্রী ও কন্যা জামিন পেয়েছেন। অথচ মিথ্যা অভিযোগে এদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয় না। হত্যাকান্ডের আসামিদের জামিন হয়, ক্যাসিনো কান্ডের হোতাদের জামিন হয়, টাকা পাচার কান্ডের হোতাদের জামিন হয়, অথচ জামিন হয় না গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীদের। আইনের শাসন এখন আওয়ামী শাসনে পরিণত হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নয়, আওয়ামী বিচারপতিরা বিরোধী দল নির্মূল করতে বেপরোয়া স্বাধীনতা ভোগ করছেন।
তিনি বলেন, আমনের ভরা মৌসুমে আড়তদার-মিলাররা ‘কারসাজি করে’ চালের দাম বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। বন্ধুরা, দেশে কোনো সরকার আছে বলে জনগণ মনে করে না। প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষরা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা একেবারেই নেই। আসলে সরকারদলীয় সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেটের টাকার ভাগ সরকারের মন্ত্রীদের কাছেও যায়। তাই বাজার হয়ে পড়েছে নিয়ন্ত্রণহীন। আজ দেশব্যাপী ২৪টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনগুলোও আগের অবস্থার মতোই রক্তপাত ও ডাকাতির নির্বাচন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অধিকাংশ পৌর নির্বাচনি এলাকায় তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। সরকারের ‘হার্ড হিটিং’ ইমেজ বজায় রাখতে ভোটারসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ চলছে বেপরোয়াভাবে। আজ খুলনার চালনা পৌরসভায় সকাল থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কুরুক্ষেত্র বানিয়ে রেখেছে। বিএনপির এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে, তাদের ওপর করা হয়েছে পৈশাচিক আক্রমণ। এই আক্রমণে অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। চালনার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয়া হয়েছে। চালনা এম এম কলেজ ভোটকেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে কেন্দ্রটি দখল করে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আজ পৌর নির্বাচন শুরু হওয়ার পরপরই পঞ্চগড় পৌরসভার নতুন বস্তি এলাকায় ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট ইউনুসসহ নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের গুরুতর আহত করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। প্রশাসন সেখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। যদিও কয়েকদিন ধরে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলে এসেছেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু আজকে তারা আওয়ামী সরকারের বরকন্দাজের ভূমিকা পালন করছে। আজ কুড়িগ্রামে পৌর নির্বাচন শুরু হওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্রগুলো দখল করে প্রশাসনের সহায়তায় দেদারসে নৌকা প্রতীকে সীল মারছে। ধানের শীষের এজেন্টদেরকে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌর নির্বাচন আজ সকাল থেকে শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের এজেন্টদেরকে বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্রগুলো দখল করে নিয়েছে। এখানে ইভিএমে ভোট নেয়া হচ্ছে, শুধুমাত্র আওয়ামী কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকিয়ে ইভিএমে নৌকায় ভোট দিতে পারছে। কিন্তু সাধারণ ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আজ পৌর নির্বাচনে কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখলের মাধ্যমে নৌকা প্রতীকে সীল মারছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ময়মনসিংহ জেলাধীন গফরগাঁও পৌর নির্বাচনে গত দুই রাত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হুমকি দিয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করে দিয়েছে। আজ সকাল থেকে সকল ভোটকেন্দ্র দখল করে নৌকায় সীল মারছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সেখানে প্রার্থীর আপন ভাই ও ছেলে ধানের শীষের এজেন্ট ছিল, তাদেরকেও কেন্দ্র থেকে মেরে বের করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আজ মানিকগঞ্জে সদর পৌর নির্বাচনে সকল ভোটকেন্দ্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দখলে নিয়ে নৌকায় সীল মারছে। এর আগে সেখানে চলে পুলিশি তান্ডব। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকাকে বিএনপি শূন্য করা হয়েছে। আজ ভোট শুরু হলে বিএনপির এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। যারা ঢুকতে চেষ্টা করেছে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ভোটারদেরকেও ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন রুপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভা নির্বাচন আগামী ১৬ জানুয়ারি ২০২১ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী নাসির উদ্দিন বহু বাধা বিপত্তি ও হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে গত ২০/১২/২০২০ তারিখে রিটার্নিং অফিসার বরাবরে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর ২২/১২/২০২০ তারিখে মনোনয়ন পত্র বাছাইয়ের সময় ধানের শীষের প্রার্থীর প্রস্তাবককে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীর কর্মচারী হাবিবুর রহমানকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজিয়ে একই প্রস্তাবককে তার ভুয়া প্রস্তাবক বানিয়ে নাসির উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। কিন্তু উক্ত সময়ে প্রস্তাবক দিলবার হোসেন নিজে উপস্থিত থেকে রিটার্নিং অফিসারকে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমি শুধুমাত্র ধানের শীষের প্রার্থী নাসির উদ্দিনের প্রস্তাবকারী। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার সেটি আমলে না নিয়ে নাসির উদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিল করে দেন। এরপর থেকে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রস্তাবকারী দিলবার হোসেনের ভাইকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এই অমানবিক কাজের সাথে জড়িত। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীর স্ত্রী নৌকা মার্কার প্রার্থী, তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী করতেই এ ধরনের জালিয়াতি করা হচ্ছে। বিবেকহীন নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকারের হীন ইচ্ছাকেই প্রতিষ্ঠিত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।