ফের বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১১ এএম, ১৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৩৬ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রক্তের হিমোগ্লোবিন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়াসহ শারীরিক কিছু জটিলতা দেখা দেয়ায় আজ শনিবার সন্ধ্যায় তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেগম খালেদা জিয়াকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তবে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসক ও বিএনপির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে চেয়ারপারসনের একজন চিকিৎসক জানান, আবারও বেশ কদিনের জন্য হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে বেগম খালেদা জিয়াকে। শারীরিক কিছু প্যারামিটার ‘অস্বাভাবিক’ আসায় তাঁকে নিবিড় চিকিৎসাধীন থাকতে হবে।
এছাড়াও তাঁর রক্তের হিমোগ্লোবিন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর নয়াবাজারে বিএনপির এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁকে বিদেশে নেয়া অত্যন্ত জরুরি দরকার। চিকিৎসকরা বলেছেন ম্যাডামকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া খুব বেশি প্রয়োজন। তাঁর ছোট ভাই ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু সেই অনুমতি সরকার দেয়নি।
বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আরেক চিকিৎসক জানান, ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) হাসপাতালে নিতে কোনোভাবেই রাজি করানো যাচ্ছিল না। তাঁর দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান অনেক বুঝিয়ে তাঁকে হাসপাতালে যেতে রাজি করিয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। এবার হয়তো লম্বা সময় তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।
তৃতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। এর আগে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালে পৌঁছান বেগম খালেদা জিয়া। হাসপাতালে যাওয়ার সময় গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান ও গৃহকর্মী ফাতেমা। হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে এমন খবরে তাঁকে এক নজর দেখতে বিকালে থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী সেখানে ভিড় করেন। এ সময় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন-ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। জ্বর সেরে গেলেও শারীরিক দুর্বলতাসহ স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতা দেখা দেয়ায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার শরীর থেকে নেয়া টিস্যুর বায়োপসি করা হয়।
এ পরীক্ষার পর তাঁর চিকিৎসকেরা জানান, তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাঁর বায়োপসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে চিকিৎসকেরা তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছেন। ৭ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নানা শারীরিক জটিলতায় ২৭ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এক পর্যায়ে তাঁকে সিসিইউতে নেয়া হয়। প্রায় দুই মাস তিনি সিসিইউতে ছিলেন। ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। পরে করোনার টিকা নিতে তিনি দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান।