দেশে ভয়াবহ ‘ফ্যাসিবাদী’ আগ্রাসনের শাসন চলছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৮ এএম, ১১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪৬ পিএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশে ভয়াবহ ‘ফ্যাসিবাদী’ আগ্রাসনের শাসন চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার বিকালে এক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।
হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘মান্নান-নিলুফার মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে ‘বেঙ্গল, দাই নেইম ইজ বিউটি’(Bengal thy name is beauty) গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিএনপির মরহুম ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তার জীবনদশায় কবি জীবনান্দ দাশের ‘রুপসী বাংলা’ কবিতার এই কাব্য গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। গ্রন্থটির প্রকাশক অন্য প্রকাশক। মরহুম আব্দুল মান্নানকে একজন ‘অসাধারণ’ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব। ২০২০ সালের ৪ আগস্ট আব্দুল মান্নান মারা যান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সময়টা খুব দুসঃময়। এই দুঃসময়ে যখন আমাদের সৃষ্টিশীলতা ধবংস হচ্ছে, আমাদের সৃজনশীলতা ধবংস হচ্ছে, আমাদের সমস্ত মুক্ত চিন্তাকে আবদ্ধ করা হচ্ছে। যখন আমরা কথা বলতে পারি না, যখন আমরা লিখতে পারি না। এককথায় কবিতা-কাব্য, সুকুমারবৃত্তি, শিল্প এই সব কিছু নির্বাসিত হতে চলেছে। এই যে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি, এই যে ভয়াবহ একটা ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন সমগ্র জাতির ওপরে। আমার প্রায়ই মনে হয় এটা একটা নষ্ট সময় আমরা অতিক্রম করছি।
দেশের পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন আমাদের একজন শিশু বা কিশোর তার জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারি না, যখন আমাদের একজন মহিলা বা বালিকা তার ফেইসবুকের মধ্যে কোনো স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে যখন সে পুলিশের দ্বারা আক্রান্ত হয়, গ্রেফতার হয় বা তাকে জেলে নিয়ে যায়। এখানে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তাদের অনেকেই শুধুমাত্র আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কারণে তাদেরকে আটক করা হয়, তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে। আজকের পত্রিকায় দেখলাম যে, ফটো সাংবাদিক কাজল তার বিরুদ্ধে তিনটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ভালো ছবি, সত্য ঘটনার ছবি তুললে তাকেও পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে।
তিনি বলেন, আজকে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে দেখবেন কেমন একটা অস্থিরতা এবং ভালো জিনিসগুলো তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে, অন্যায়-অসুন্দর সব কিছু যেন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজকে ভিন্ন পরিবেশে আমরা সবাই মিলিত হয়েছি। আমরা এখানে যারা এই অনুষ্ঠানে এসেছি তার ৮০ ভাগই রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজনীতি। আপনি চারদিকে তাকিয়ে দেখুন সেই ক্ষমতার লড়াই, ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্য যত খারাপ কাজ করা দরকার আমরা সবাই কম-বেশি করছি। এটা বাস্তবতা, এটাকে অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, এরকম অবস্থায় আমাদের মুখে খুব সুন্দর, ভালো কথা আসে না। কাজী নজরুল ইসলামের কথায় বলতে চাই- বড় কথা, বড় ভাব আসে নাকো মাথায় বন্ধু বড় দুঃখে, অমর কাব্য তোমরা লিখো যারা আছো সুখে। দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যা আসে কৈ মুখে। আমরা এখন প্রেসক্লাবের সামনে অথবা অন্যখানে গিয়ে ওই জোর গলায় কথা বলছি। এছাড়া আর অন্য কোনো উপায় নেই। আরো জোরে বলতে হবে, সোচ্চার হয়ে বলতে হবে এবং আমাদের আব্দুল মান্নান সাহেবের মতো সুস্পষ্টভাবে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় মানুষের কথা মানুষের সামনে বলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. মাহমুদ শাহ কোরেশি, নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালন কবি আবদুল হাই সিকদার, গবেষক মাহবুব হাসান, নর্দান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আরিফ রহমান ও প্রয়াত লেখক আব্দুল হান্নানের মেয়ে ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান প্রমুখ। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন মেহনাজ মান্নানের স্বামী ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইসচেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তাহসিনা রুশদী লুনা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বনিভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আখতার রানু, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, নেওয়াজ হালিমা আরলি, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।