দেশে ‘নির্বাচনি সার্কাস’ চলছে-রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৭ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০২:০৬ পিএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশে ‘নির্বাচনি সার্কাস’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের কর্তৃক টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিজা বেগম গুরুতর আহত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে আজ রবিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন তিনি এই অভিযোগ করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, গণতন্ত্র ধ্বংসে নব্য বাকশালী সরকার ও তাদের মোসাহেব নির্বাচন কমিশনের অপকর্ম শয়তানকেও টপকে গেছে। এই অপকর্মের বিচার একদিন হবেই। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল জেলাধীন গোপালপুর পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাবেক ৪-৫-৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর হাবিজা বেগমকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে গুরুতর আহত করে। আজরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত এই বর্বরোচিত ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এদেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নামক শব্দটি চিরতরে উচ্ছেদের পর কোনভাবেই কেউ যেন এ বিষয়ে টুঁ শব্দ করতে না পারে সেজন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন জনপদে সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডারদের মোতায়েন করেছে বর্তমান সরকার। বিরোধী দলের যে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হলেই বা তার পক্ষে কেউ প্রচারণা চালাতে গেলে তাকে জীবন হারাতে হয় কিংবা চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। বিনাভোটে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী সরকার এখন বেপরোয়া। ওরা নির্বাচন ঘোষণা করবে কিন্তু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে দেবে না। বিরোধী দলের কেউ যদি সাহস করে নির্বাচনে নামে তাহলে তার ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতনের খড়গ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নিশিরাতের ভোটের সরকার ও বেহায়া নির্বাচন কমিশনের যৌথ প্রযোজনায় এখন চলছে নির্বাচনি সার্কাস। আগের রাতে ভোট হলেও, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না গেলেও, অথবা কোনো কেন্দ্রে শতভাগের বেশি জোরপূর্বক ভোট কাস্টিং করলেও সরকার ও কমিশনের বয়ান একই যে, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তারা এই বয়ানটি পূর্বেই টাইপ করে রাখে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব জানে যে, বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট আগের রাতেই হয়েছে। গণমাধ্যমসহ সকল মাধ্যমে তা প্রকাশিত হলেও সরকারের ভাঁড় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখনও নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে। এই ইসির অধীনে একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ইসির অপকর্মের শাস্তির যে দাবি নাগরিক সমাজ করেছে তা এড়ানোর জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আওয়ামী নেতারা গায়ের জোরে সত্যকে চাপা দিতে চাচ্ছে। গণতন্ত্র ধ্বংসে নব্য বাকশালী সরকার ও তাদের মোসাহেব নির্বাচন কমিশনের অপকর্ম শয়তানকেও টপকে গেছে। এই অপকর্মের বিচার একদিন হবেই।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, নাৎসীবাদী আওয়ামী সরকারের নিষ্ঠাবান খাদেম নির্বাচন কমিশনের কারণেই দেশের বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে রক্ত ঝরছে। শুধু পুরুষরাই নয়, এখন নারীদেরও জীবন কেড়ে নিচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারই সর্বশেষ শিকার হলেন টাঙ্গাইল জেলাধীন গোপালপুর পৌর মহিলা দলের সভানেত্রী ও মহিলা কমিশনার হাবিজা বেগম। তাকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যেই মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে গুরুতর আহত করে, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে গতপরশু রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এটি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের একটি কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ড। এই মনুষ্যত্বহীন ও পৈশাচিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। সারাদেশে এখন দুষ্কৃতকারীরাই আওয়ামী লীগ করে। তাই জনগণ এদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে; পেশাদার ঘাতক, লুন্ঠনকারী, নিপীড়নকারী ও অন্যের সম্পদ হরণকারীদের দ্বারাই এখন আওয়ামী লীগ চলছে। সুতরাং বাংলাদেশে ‘৭১-এর ৯ মাসে যে পরিবেশ বিরাজ করছিল, এখন বাংলাদেশে সেই পরিবেশই বিরাজ করছে। আমি হাবিজা বেগমকে হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। হাবিজা বেগমের শোকাহত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
রিজভী বলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি হাসান মোঃ জসিম উদ্দিনকে আজরাতে বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
এদিকে জাসাসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন দেশে বর্তমানে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে। সরকার এর সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন নতুন বছরে গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার ও মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে পাওয়ার শপথ নিতে হবে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাসাসের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, সহ-সভাপতি বাবুল আহমেদ, জাসাস নেতা আহসান উল্লাহ চৌধুরী, মীর সানাউল হক, শাহরিন ইসলাম শায়লা, লিয়াকত আলী, আরিফুর রহমান মোল্লা, মিজানুর রহমান সর্দার মিলন, জাহাঙ্গীর আলম রিপন, রফিকুল ইসলাম, জাকির হোসেন রোকন, আমিনুল হক, রফিকুল ইসলাম স্বপন, শরিফুল ইসলাম স্বপন, খালেদ এনাম মুন্না, শাহ বিল্লাল, আশরাফুল ইসলাম দিপু, আব্দুল জব্বার , শরিপুল ইসলাম রতন, আহসান হাবিব , নাসির উদ্দিন মিলন, ডিএম আমিরুল ইসলাম অমর, কাজী আনোয়ার হোসেন আনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।