সরকার দেশে ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩১ এএম, ৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:০৩ এএম, ১৩ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪
সরকার দেশে একটা ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে আজ রবিবার সকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর এই অভিযোগ করেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে সকাল ১১টায় বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খানকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে আসেন। তারা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা বিশেষ মোনাজাত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই, আজকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, আজকে এদেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতা নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। ৩৫ লক্ষের বেশি দেশপ্রেমিক মানুষকে আজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জর্জরিত করা হয়েছে, আজকে এখানে গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে। দেশে ভয়ংকর একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আজকে তারা পুরোপুরিভাবে ফ্যাসিবাদী একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা করেছে।
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই দিনে আমরা শপথ গ্রহণ করেছি এদেশের মানুষের একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত সংগঠন এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব। বাংলাদেশকে আমরা অবশ্যই আবার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটা স্বাতন্ত্র্য শক্তি নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের আন্দোলন করব।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের মাধ্যমেই আমরা ফিরে পেয়েছিলাম, যে আশা-আকাক্সক্ষা ও চেতনার মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম সেই আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়িত করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল জিয়াউর রহমান সাহেবের নেতৃত্বে। ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত করতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরে পেয়েছিলাম, মুক্ত অর্থনীতি একটি সমাজ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আবার রুখে দাঁড়িয়েছিল, সংবাদপত্রের ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছিল। সর্বোপরি যেটা বাংলাদেশে স্বাতন্ত্র্য নিয়ে, পরিচয় নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ পেয়েছিল। আমরা বারবার এই দিনটিকে স্মরণ করি এবং এই দিনটি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে এই ৫০ বছর পরে এই স্বৈরাচারী-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ একটা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে আমাদের সমস্ত স্বপ্ন ও আশা-আকাক্সক্ষাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে, চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সমস্ত স্তম্ভগুলোকে তারা নিজের হাতে নির্মমভাবে ধবংস করে দিয়েছে।
এ সময়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবু আশফাক খন্দকার, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সাদেক আহমেদ খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেসারুল হক, জাসাসের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সদস্য সচিব আবদুর রহিম, জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুল কুদ্দুস, মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবিউল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্ব আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি। ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। বিএনপি এই দিনকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস এবং জাসদ সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালন করে। দিবসটি উপলক্ষে ভোরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারাদেশে দলের অফিসে বিএনপির পতাকা উত্তোলন করে।
নবীনগরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিএনপি কার্যালয়ে নবীনগর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের নবনির্বাচিত সদস্য সচিব নাজমুল করিমের সঞ্চালনায় আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে নবীনগর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ, সদ্য বিদায়ী নবীনগর উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।