রাজপথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩১ এএম, ৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৭ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সম্প্রতি ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা তুলে ধরে তিনি এই মন্তব্য করেন। কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির মরহুম সদস্য তরিকুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তরিকুল ইসলাম। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। মরহুম নেতা তরিকুল ইসলামের স্মরণ সভা উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের নিচতলার মিলনায়তনে সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিলো না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে এখন আবার হঠাৎ করে একলাফে পার লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিলো ডিজেল-কেরোসিনের দাম। ফলে আরো দ্বিগুন বাড়বে দ্রব্যমূল্য। এখন সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? তাদের তো এখন না খেয়ে অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। আমরা সব সময় যেটা বলে আসছি, এখনো বলছি-কোনো বিকল্প নাই। একমাত্র পথ হচ্ছে এদেরকে (আওয়ামী লীগ সরকার) সরিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা, পার্লামেন্ট তৈরি করা। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা সবাই রাজপথে নেমে আসি এবং আমাদের শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার তৈরি করি।
তিনি বলেন, যেহেতু আজকে মানুষ জেগে উঠেছে, কথা বলতে শুরু করেছে, এই যে তারা নিজের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করতে শুরু করেছে, ভোটের কথা বলছে, তাদের অধিকারের কথা বলছে, ভাতের অধিকারের কথা বলছে, স্বাস্থ্য অধিকারের কথা বলছে। সুতরাং সেইখান থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হবে। সেই কাজ তারা শুরু করেছে বিভিন্ন রকম ইস্যু তৈরি করে মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোলোযোগের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ৭ মাসে ৮৪ জন নিহত হয়েছে এবং সব তাদের লোক। তারা নিজেরা নিজেরা এখন মারামারি করে। কারণ বিরোধী দল তো নাই। আজকে তারা লুট করে, নিজেরা মারামারি করে এবং নিজেদের মধ্যেই এই সমস্যা তারা তৈরি করছে। আর মামলা দেয় বিএনপির নামে। আপনারা দেখেছেন দুর্গাপূজার সময়ে কী করেছে? তারা নিজেরা দুর্গা পূজার সময়ে সমস্যা তৈরি করেছে, মন্ডপ ভেঙেছে এবং বিএনপি নেতাদের নাম উল্লেখ করে শত শত, হাজার হাজার লোকের নামে মামলা করেছে এবং অজানা মানুষকে আসামি করেছে। যাকে ধরে মামলা দিয়ে দেয়-এটা তাদের পুরনো স্টাইল। তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরে তার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। মহাসচিব বলেন, সমস্যা হচ্ছে আমরা কেন এরকম সভায় আসি সেটা বোধহয় আমরা নিজেরাও জানে না। এটা একটা স্মরণ সভা এমন একজন নেতা যিনি আমাদের অতীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন এবং সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তার স্মরণ সভায় এসে আমাদেরকে এই সমস্ত সমস্যা সামাধান করতে হয়। কীভাবে কথা বলবেন। দেখুন এখানে ইয়াং ছেলেরা আছে, তরুণরা আছে। হয় তারা ছাত্র দল, না হয় যুব দল, না হয় স্বেচ্ছাসেবক দল অথবা মহানগরের নতুন কমিটি ছেলেরা। তারা তো এখানে কথা শুনতেই আসেনি। অনেকে বহুবার বলেছেন এখানে। কিন্তু আমরা কেউ কর্ণপাত করছি না। আমাদের এই কান দিয়ে ঢুকে ওই কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। ডানদিনে হট্টগোলকারীদের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ওইখানকার সমস্যাটা কী? ওয়াট ইজ প্রোভলেম দেয়ার। এভাবে আমি কথা বলবো না। আমি বলতে চাই, এভাবে কিছু হয় না। বিশেষ করে আমাদের তরুণ যুবক, ছাত্র-যুবদল তাদের প্রতি আহবান জানাতে চাই- আসুন আপনারা নিজেরা কিছু জানুন এবং নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। তা না হলে কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুজ্জামান শিমুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মরহুম তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির সহ-সাংগঠিনক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু, যুবদলের সহ-সভাপদি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, মৎস্যজীজী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিমসহ যশোর-খুলনার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।