লজ্জাহীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায় জনগণ-মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৫ এএম, ২৭ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ১২:৫৭ এএম, ২৫ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
জনগণ লজ্জাহীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায় বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে আজকাল দেশের মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের আগ্রহ নেই। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে দেশের মানুষ প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে এ কমিশন ভোট চুরি করছে। তারপরও লজ্জাহীন, শরমহীন কমিশনার পদত্যাগ করছে না।
তিনি বলেন, জনগণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার কমিশনারদের বলছে চোর, তারা বক্তৃতার নামে টাকা চুরি করছে। দেশের মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে এবং দেশের মানুষ আজ তাদের পদত্যাগ দাবি করছে, এর চেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় আর কিছুই নেই।
আজ শনিবার দুপুর ১২টায় কালিবাড়ী তাঁতীপাড়াস্থ তার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ন্যূনতম গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। যদিও তারা ভোট চুরি করে ফলাফল নিয়ে যায় তবুও আমাদের (বিএনপি) নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দিনটিকে বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার হত্যা দিবস হিসেবে পালন করবে। শুধু গোটা বাংলাদেশের মানুষ নয় বিশ্বব্যাপী মানুষ জানে, যে নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর হওয়ার কথা ছিল সেটা ২৯ ডিসেম্বর রাতে হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তাদের (আওয়ামী লীগ) পরিকল্পনা একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা, সে লক্ষ্যে তারা এগোচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করতে না পেরে আওয়ামী লীগ মনের ভেতর যে সুপ্ত বাসনা লুকিয়ে রেখেছে সেটাকে তারা ভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিচার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন, পার্লামেন্ট সব কিছু তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এদেশকে পরিচালনা করছে, যেটা দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আজকে সব চেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের কাজ জনগণকে অস্থির করে রাখা বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কৌশল পরিবর্তন করে বিভিন্ন রায়ের মধ্য দিয়ে আদালতকে ব্যবহার করছে। নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার বাতিল করে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সম্মুখীন হতে পারে না। গণতন্ত্রকে তারা ভয় পায়। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ভয় পায়। তারা বিরোধী দলীয় নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগ গ্রাম্য মোড়লের মতো ভূমিকা পালন করছে। তাদের কাজই হচ্ছে জনগণকে অস্থির করে রাখা। পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন আছে ততদিন কোনো নির্বাচন সঠিকভাবে হবে না। এরপরও আমরা নির্বাচনে যাবো। কারণ বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপিত তৈমূর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীনসহ জেলা বিএনপির নেতারা।
মির্জা ফখরুলের নিন্দা:
পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোপালপুর পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাবেক ৪-৫-৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর হাবিজা বেগমকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে গুরুতর আহত করে। গতরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত এই বর্বরোচিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
এই সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়ে দেশকে বিএনপিশূণ্য করতে এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্রার্থীসহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভয় পাইয়ে দিতে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে অবিশ^াসী বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখন বর্বর দলে পরিণত হয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং প্রতিবাদী মানুষের রক্তে হাত রঞ্জিত করে চারিদিকে ভীতির বিস্তার ঘটানো হচ্ছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না পায়। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোপালপুর পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী হাবিজা বেগমকে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে গুরুতর আহত এবং পরবর্তীতে গতরাতে তার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আবারও প্রমান করলো-বর্তমান অবৈধ সরকার দেশে বিরোধী দলের অস্তিত্ব রাখতে চায় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাবিজা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি, তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। একইসাথে হাবিজা বেগমকে মোটরসাইকেল চাপা দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। দোয়া করি-মহান রাব্বুল আলামীন যেন হাবিজা বেগমকে বেহেস্ত নসীব এবং শোকার্ত পরিবারের সদস্যদেরকে এই গভীর শোক সহ্য করার ক্ষমতা দান করেন।