সাধারণ মানুষের জন্য করোনার কোনো চিকিৎসা নেই-জি এম কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪১ এএম, ২৭ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০৬:৫৫ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
দেশে সাধারণ মানুষের জন্য করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোনো চিকিৎসা নেই বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
আজ শনিবার দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় তরুণ পার্টির প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজধানীর বড় কয়েকটি হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা থাকলেও দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনায় আক্রান্তদের জন্য কোনো চিকিৎসা নেই বললেই চলে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা আছে, কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দেশের ৯০ ভাগ মানুষেরই বেসরকারি এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ্য নেই।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার কম। আমার প্রশ্ন যেখানে চিকিৎসা নেই, হাসপাতালে বেড নেই, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই, সেখানে মৃত্যুর হার কম হলে মন্ত্রীর কৃতিত্ব কী? দেশের সাধারণ মানুষ ওষুধ ও চিকিৎসা ছাড়াই মহান আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাচ্ছেন। আবার যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, তারা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন।
সরকারের সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে পারছে না সরকার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার একেবারেই বাইরে চলে গেছে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ‘স্বৈরাচার’ বলার প্রতিবাদ জানিয়ে গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী একজন বৈধ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। তাকে কখনোই স্বৈরাচার বলা যাবে না। একানব্বইয়ের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে প্রচার-প্রচারণা করতে দেয়া হয়নি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী জাতীয় পার্টির সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। তারপরও কারাবন্দি এরশাদ দুই বার পাঁচটি করে আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কোনো নির্বাচনেই এরশাদ পরাজিত হননি। এতে প্রমাণ হয় এরশাদ জননন্দিত নেতা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গণতন্ত্রের নামে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে অভিযোগ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে, সেই দলের প্রধানই হন সংসদীয় দলের নেতা ও সরকারপ্রধান। সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে সরকারপ্রধানের কথার বাইরে দলের কেউ ভোট দিতে পারে না। সরকারপ্রধান যা বলেন, তাই সংসদে পাস হয়; যতটুকু বলেন, ততটুকুই পাস হয়। এটা গণতন্ত্র নয়। এটাকে বলা যায় সংসদীয় একনায়কতন্ত্র।
তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে যেখানে সংসদ সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেখানে সরকারই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। একনায়কতন্ত্রে দুর্নীতি বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগের আমলে একবার এবং বিএনপির আমলে চার বার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে দেশে দুর্নীতি ছিল না, আইনের শাসন ছিল। এরশাদ মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে এসিড সন্ত্রাস বন্ধ করতে আইন বাস্তবায়ন করেছিলেন। দেশ থেকে এসিড সন্ত্রাস বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি। এখন আইন আছে, কিন্তু খুন-ধর্ষণ-নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। কারণ আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমরা দেশের মানুষকে আইনের শাসন ও সামজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে এরশাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ব। জাতীয় তরুণ পার্টির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন মৃধার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোড়ল জিয়াউর রহমানের পরিচালনায় প্রতিনিধি সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, দেশের তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাদকের ছোবলে। দেশের মানুষের কাছে পদ্মাসেতুর চেয়ে তরুণ সমাজ রক্ষাই জরুরি। তরুণ সমাজ সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দলবাজি ও দখলবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে। তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এজন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেননি।
জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ঔপনিবেশিক শানব্যবস্থা ভেঙে এরশাদ দেশে নানা সংস্কার করেছেন। উপজেলা পরিষদ তৈরি করে তৃণমূলে মানুষের অধিকার পৌঁছে দিয়েছিলেন। এলজিইডি প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশের রাস্তাঘাট উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। অথচ এরপর দুটি দলের দুঃশাসন, দুর্নীতি আর নিপীড়নে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। দুটি দলের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। আগামী নির্বাচনে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার গঠন করে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, জাপা চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক এনাম জয়নাল আবেদিন, আনোয়ার হোসেন তোতা। তরুণ পার্টির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিরাজুল ইসলাম, সৌরভ হোসেন সবুজ, কাউসার আহমেদ, মোজাম্মেল হোসেন মায়া, আমজাদ হোসেন প্রধান, হেলাল বিশ্বাস, মিজানুর রহমান মিজানসহ অন্যরা।