আজ অবস্থা এমন, নির্দেশ ছাড়া ওসি জিডি নিতে সাহস পান না
সেই লগি-বেঠার আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল - মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৮ এএম, ৩১ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৯ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের সেই লগি-বৈঠার আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি আরও বলেন, ‘লগি-বৈঠার আন্দোলনের দিন মানবাধিকারের কবর রচিত হয়েছিল। সেদিন গণতন্ত্রকেও আঘাত করেছিল। বর্বরোচিতভাবে হত্যা করেছিল।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে নাগরিক ফোরাম আয়োজিত ‘মানবাধিকার ও আইনের শাসন : প্রেক্ষিত ২৮ অক্টোবর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সেদিন বর্বরোচিতভাবে মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। তারা পরিবর্তন আনতে চেয়েছে যা মানুষ পছন্দ করেনি। তারপর ওয়ান-ইলেভেনের সরকার এলো। সেসময় অনেককে আটক করেছিল। রাজনীতিতে শুদ্ধাচার করার নাম দিয়ে তা করা হলো। সেদিন দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। তাই সরকারের নানা জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন সরকার নাকি আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল। দুই নেত্রীর সঙ্গে তখনকার সরকার আলোচনা করেছে। আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) তাদের বিদেশে যাওয়া ও অন্যায়ের সমর্থন করেনি। আওয়ামী লীগ তাদের শর্ত মেনে নিয়ে তাদের অন্যায় ও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই তাদের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ বাংলাদেশের অবস্থা এমন, আওয়ামী লীগের এমপি-চেয়ারম্যানদের নির্দেশ ছাড়া কোনো থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) একটি জিডি পর্যন্ত নিতে সাহস পান না। সরকার গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাতে হলে, বিরোধী মত প্রকাশকারীদের যেভাবেই হোক, দমিয়ে রাখতে হবে। এর প্রক্রিয়া হিসেবে এদেশে হত্যাকা- থেকে শুরু করে, ফাঁসি দেওয়া, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-- কী হয়নি।
তিনি বলেন, আজ জনগণ বুঝতে পারছে, এই সরকার থাকলে ন্যায়বিচার হবে না, কোনো গণতন্ত্র থাকবে না। সাংবাদিকরা কথা বললে তাদের জেল খাটতে হচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ৮১ বার পিছিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মামলার কাগজপত্র প্রস্তুত করতে পারে না। অথচ জামায়াত-বিএনপির কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে তিন দিনে চার্জশিট দেওয়া হয়। পঞ্চম দিন থেকে বিচার শুরু হয়ে যায়।
কুমিল্লার ঘটনার কথা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার যে ঘটনা, বিস্তারিত না বললেও সবাই বোঝে, সরকারের প্ররোচনায় একটি গোষ্ঠীকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কুমিল্লার সেই ওসি কোরআন শরিফকে মিডিয়ার সামনে দেখাচ্ছে এবং ভাইরাল করে দিচ্ছে। একজন ওসি যদি ওপর থেকে নির্দেশিত না হন, তবে এ কাজ করতে পারেন না। সরকারের প্ররোচনায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয় নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে বোঝানোর কিছু নেই। নিত্যপণ্যের বাড়ার পেছনে রয়েছে সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট হচ্ছে আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী ও সমর্থিতদের।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এই সরকারের হাত থেকে বাঁচতে পথ একটাই মরো নইলে মারো। বর্তমানে আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে নাই। কিন্তু সেই বাকশালের কর্মসূচিগুলো নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাকশাল শব্দটি সাহস করে বলছে না কিন্তু বাকশালের কাজকর্মগুলো করছে।
নি বলেন, এই সময় একটি কঠিন সময়, এই কঠিন সময়ে আমাদের যার যেটুকু আছে সেটুকু নিয়েই সৎভাবে যদি ঘুরে দাঁড়াতে না পারি তাহলে আমাদের জন্য যে কঠিন সময় আসছে সেটা খুব করুণ হবে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, এই দুঃশাসনের শেষ সীমায় এরা (আওয়ামী লীগ) এসে পৌঁছেছে। যদি একটু দৃঢ়তার সাথে এক জায়গায় হতে পারি, একদিন পরেই নতুন মাস তারপরে আসবে নতুন বছর এই নতুন মাসে নতুন কোনো সংবাদ আসতে পারে। যদি আমরা এক জায়গায় হতে পারি। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন বাড়ি ও কোর্ট ছাড়া কিছু বোঝেন না। তিনি বলেছেন, রাজপথ দখল ছাড়া এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি নাই। ড. কামাল হোসেনের মতো মানুষও বুঝেছেন রাজপথ দখল ছাড়া মানুষের মুক্তি নাই। তাই পথ একটাই মরো না হলে মারো।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এরা আওয়ামী লীগের মেশিনের মধ্যে দিয়ে রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানায়, আর মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানায়। এরা একটি জাদুকরী দল আর জাদু ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই এই নিষিদ্ধ দলকে মানুষের মন থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সেটা করার জন্য যেখানে যেটা করার দরকার আমরা করব। আইনের শাসন দেশে আছে। ন্যায়বিচারের শাসন নাই। আইনের শাসন আছে বলে দেশের নতুন নতুন আইন হচ্ছে এবং তার ভিক্টিম হচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ভিন্নমতালম্বী যারা আছে তারা।
তিনি বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন হচ্ছে স্বাধীনতার সূর্য ডুবে যাওয়ার দিন। আর বাংলাদেশের বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিল সেই ২৩ জুন। আওয়ামী লীগের জন্ম তারিখ হচ্ছে ২৩ জুন। যারা স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার দিনে নিজেদের নাম পছন্দ করে তাদের মানসিকতা জন্ম থেকেই বোঝা উচিত ছিল আমাদের। যুবদলের সাবেক সভাপতি বলেন, ২৮ অক্টোবর যেটা হয়েছিল এটা শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে হয়েছিল।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন সারাদেশ থেকে লাঠি-বৈঠা নিয়ে আসতে, তারপরে যে অবস্থা হয়েছিল এটা একটা নির্মম পরিস্থিতি হয়েছিল।
তিনি বলেন, এই সরকার হাত ধোয়া দিবস পালন করে এবং আরো বিভিন্ন দিবস পালন করে কিন্তু গুম দিবস পালন করে না। কারণ তারা ভিন্নমতের মানুষদের এত পরিমাণ গুম করেছে যে তারা এই দিবসটি পালন করতে লজ্জাবোধ করে। এই সরকারের আমলে মানুষ কোনোভাবে নিরাপদ নয় মন্তব্য করে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, পিলখানার ঘটনা থেকে শুরু করে রানা প্লাজা ধসের থেকে এই সরকারের আমলে এই দেশের মানুষ কোনোভাবেই নিরাপদ না। মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান, পাহাড়ি কেউ এই সরকারের আমলে নিরাপদ না। শুধু নিরাপদ আওয়ামী লীগ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ দয়া করে বিএনপিকে সাতটি আসন দিয়েছে। আর বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সাতটি আসনও পাবে না। এমনকি গোপালগঞ্জেও আওয়ামী লীগের বিজয় নিয়ে শঙ্কিত। এরকম একটি জনগণবিহীন দল দেশ শাসন করছে। আমরা কেন এদের প্রতিরোধ করতে পারছি না। আত্মত্যাগ ছাড়া কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব না। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নিরপরাধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ২ বছর কারাগারে রেখেছে। এরপর এখন দেড় বছর যাবৎ গৃহবন্দি করে রেখেছে। গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিচ্ছে না।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবদুল্লাহিল মাসুদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান প্রমুখ।