দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘চরম নৈরাজ্য’ চলছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৪ এএম, ৩১ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘চরম নৈরাজ্য’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে আজ শনিবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন। সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের ‘পদ্মা’ হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর ওপর লেখা ‘আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী সংবর্ধনা গ্রন্থ’র প্রকাশনার এই অনুষ্ঠান হয়। ৫৯০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশক। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। গ্রন্থটির মূল্য ১৩শ টাকা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের খবর- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি নথি খোয়া গেছে। শাহবাগ থানায় ডায়েরি করা হয়েছে। এই হচ্ছে বর্তমানে সরকারের, শাসকদের এবং শাসনব্যবস্থার অবস্থা। একটা না, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি জায়গায়। আপনি দেখবেন যে, চরম নৈরাজ্য চলছে। লক্ষ্য একটি, সেটি হচ্ছে যে, কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়। মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য ওয়েলফেয়ার স্টেটের জন্য সেদিকে কারো চিন্তাই নেই। তিনি বলেন, আমরা করোনার সময়ে দেখেছি কিভাবে ভয়াবহভাবে যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, মানুষের আহাজারি সেই সময়ে দেখেছি তখন তারা (সরকার) কি করে অর্থ উপার্জন করবেন তা নিয়ে ব্যস্ত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির ড্রাইভারের ৪শ কোটি টাকা। এই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে এখন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইস চ্যান্সেলর ১৬৯ জন নিয়োগ দিলেন এক রাতে। পেছনের কাহিনী কী যে সেই অর্থ উপার্জন করা। এই যে আমরা একটা সমাজ তৈরি করেছি এই সমাজের কাছ থেকে আমরা ভালো কোনো কিছু পাওয়ার আশা করা খুব কঠিন। ‘হতাশা নয়, জেগে উঠতে হবে’ বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অনেকেই হতাশ। প্রায় হতাশার কথা শুনি। এই কিছুক্ষণ আগে এই কক্ষ থেকে বেরিয়েছিলাম, আমাকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, স্যার আর কত দিন। সত্য কথা। এটাই এখন মানুষের মধ্যে একটা বড় রকমের জিজ্ঞাসা হচ্ছে, পরিবর্তনটা কবে আসবে? যেভাবে চতুর্দিকে যে একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা, এই অবস্থা থেকে আমরা কবে বেরুতে পারবো। স্বাভাবিকভাবে আমি রাজনীতি করি, বড় দলের সাথে সম্পৃক্ত আছি যে, আপনি আমাকেই জিজ্ঞাসা করবেন যে, কবে বেরুতে পারবো? আমি আপনাদের খুব সরাসরি উত্তর দিতে চাই, আমরা অবশ্যই বেরুতে পারবো। কারণ এই দেশের মানুষ কখনোই পরাজয়বরণ করেনি। দেখেন পাকিস্তান থেকে, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে, ’৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে শুরু করে, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী যে আন্দোলন সব কিছুর মধ্যে দেখবেন যে, মানুষ যখন জেগে উঠছে তখন কিন্তু অবশ্যই তাদের পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। সে জন্য মানুষকে আজকে জেগে উঠতে হবে। নিজের কষ্টের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল বলেন, যখন দেখি যে, আমার একজন বোন, মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন ধর্ষিতা হয় অথবা আমার গ্রামের মধ্যে মা-বোনেরা ধর্ষিতা হয় আমি দেখি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়ে এসেছে। টিপাইমুখে যখন বাঁধ তৈরি করতে যায় সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ করে কোনো মিছিল বের হয় না, আমার গণতন্ত্রকে যখন ধ্বংস করা হয়, ছাত্রদের যখন পিটিয়ে শুইয়ে দেয়া হয়, রক্ত ঝরানো হয় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ মিছিল বের হয় না। এটা দুঃখের কথা। আমাদের তরুণরা, আমাদের যুবকরা তারা যদি জেগে না উঠে তাহলে পরিবর্তনটা আসবে কোত্থেকে। আপনাদের সকলের থেকে আমি বিশ্বাস করি যে পরিবর্তন আসবে এবং পরিবর্তন আসবে অবশ্যই। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর কৃতিময় কর্মজীবন তুলে ধরে তিনি বলেন, তিনি তার সারাটা জীবন ধরে পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন, এখনো করছেন।
সাবেক ভিসি আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জ্ঞানের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই এবং জ্ঞানের জগতে কোনো সীমারেখা নেই। আজকে এখানে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের সাথে আমি একমত যে, আমরা দুর্ভাগা জাতি এ কারণে যে, আজও আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করতে পারিনি। আমাদের সমাজ জ্ঞানবিমুখ সমাজ। আমরা যদি এই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করতে পারতাম তাহলে আমাদের এতো সমস্যা থাকতো না। শিক্ষাদানের পাশাপাশি সমাজ বদলের একটা দায়িত্ব কিন্তু শিক্ষকদের থেকে যায়। সমাজ পরিবর্তনে শুধু রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব্ নয়, এই দায়িত্ব শিক্ষক সমাজ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, আমাদের জনগণ সকলেরই। যে সমাজ বা যে দেশে আমরা বাস করি এ দেশের প্রতি আমাদের নিশ্চয়ই একটা মমত্ববোধ আছে। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি শোষণহীন বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা ৫০ বছর পর তাকিয়ে দেখি আমাদের সেই স্বপ্ন বিফল হয়েছে। আজকেও আমাদের সেই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হয়, আজকে আমাদের শোষণ, নির্যাতন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। আমি আশাবাদী, আমরা নিশ্চয়ই আবার গণতন্ত্র ফিরে পাবো, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো। বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মতাদর্শের ‘পদলেহকারী রাবার স্ট্যাম্পধারী’ ব্যক্তিকে ভিসি নিয়োগের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মূসার সভাপতিত্বে ও কবি আবুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী লাকী নাসরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক জাহেদুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুর রহমান সিদ্দিকী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রেজাউল করীম, অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হকের ছেলে বাবুস সালাম দুর্জয় বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা নজমুল হক নান্নু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক আবদুর রহমান, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক ইয়ারুল কবির, অধ্যাপক শের মুহাম্মদ, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদ, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সালেহ মাহমুদ রিয়াদ, সাংবাদিক এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।