খালেদা জিয়া আইসিইউ থেকে কেবিনে
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১০ এএম, ২৬ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৯ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বায়োপসির জন্য সফল অস্ত্রোপচারের পর বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া প্রয়োজন।
আজ সোমবার বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকুন যে, দেশনেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন। কিছুক্ষণ আগে তাঁর সঙ্গে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব কথা বলেছেন, তাঁর ভাই (শামীম এস্কান্দার) কথা বলেছেন। ডাক্তার সাহেব যে দুই জন ছিলেন তারা আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। তিনি বিপদমুক্ত। সি ইজ আউট অব এভরিথিং। অর্থাৎ কোনো রকম বিপদের সম্ভাবনা নেই বলে তারা (চিকিৎসকরা) মনে করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ওনার শরীরের এক জায়গায় ছোট একটা লাম্প আছে। যেহেতু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এই লাম্পের ন্যাচার অব অরিজিন জানতে হলে বায়োপসি করা প্রয়োজন। সেজন্য আজকে ওনার সেই ছোট একটা বায়োপসি করতে ওনাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে সেটি করা হয়েছে। বায়োপসি পরবর্তীতে মহাসচিব মহোদয় যেটা বললেন, উনি সুস্থ আছে। উনি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পেরেছেন, অফাটার অপারেশন, ওনার খোঁজ নিয়েছেন। ওনার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার সাহেব ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমানের সাথেও উনি কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, বায়োপসি পরবর্তীতে ওনার সমস্ত প্যারামিটারগুলো এই মুহূর্তে স্টেবল আছে। উনি সার্জিক্যাল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন। উনি আজকে যে অবস্থায় আছেন, ইনশাল্লাহ আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন যাতে অতি দ্রুত সুস্থ এবং দেশের বাইরে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে আপনারা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, বায়োপসি মানে চিকিৎসা না। বায়োপসি মানে হচ্ছে একটা ডায়োগনিস্টিক প্রসেসের পার্ট এবং এই প্রসেসটা পরবর্তী চিকিৎসা কি হবে সেই পরীক্ষার ওপর বেইস করে নির্ধারিত হবে। ওনার বয়স ৭৬ বছর। ওনার আরো যেসব জটিলতা আছে সেগুলো মাথায় রেখে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য একটা ডেডিকেটেড ডেভেলপড সেন্টারে ওনার সুচিকিৎসা প্রয়োজন রয়েছে বলে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড প্রাইমারেলি অপনিয়ন দিয়েছে। লাম্প কি জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘lump’ বলে। লাম্প শব্দের অর্থ হচ্ছে ছোট চাকা। ইট ইজ নিয়ারলি ১.২ সেন্টিমিটার ইন সাইজ। শরীরের কোথায় লাম্প জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি একটা এথিক্সের কথা বলি। প্রত্যেকটা রোগীর তাঁর প্রাইভেসি বলে লিগ্যালাইজ বিষয় আছে। ইউ কান্ট সে কোথায় কি হয়েছে না হয়েছে। এই পর্যন্ত আমরা বলেছি। প্লিজ আপনারা এটা দেখবেন। এটা একটা মোরাল ব্যাপার আছে, এথিক্সের ব্যাপার আছে। আমরা আশা করি এ ব্যাপারে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।
বায়োপসির প্রতিবেদন কবে নাগাদ হাতে আসে জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, বায়োপসির রেজাল্ট পেতে সায়েন্টিফিক্যালী ৭২ ঘন্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ দিন থেকে ২১ দিন সময় লাগে আমেরিকার মতো জায়গায়। কাজেই আপনাকে আজকে বলা যাবে না, ন্যাচার অব টিস্যু অরিজিন বলা যাবে না। কাজেই বায়োপসি হয়েছে এর রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা খুব খারাপ বলে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন মিডিয়া কেনো হবে ভাই? হোয়াই? দে মাস্ট কনফার্ম, জিজ্ঞেস করতে হবে ভাই যারা কাজ করছেন তাদেরকে, আমাকে অথবা ডাক্তার সাহেবদেরকে। তা না করে একটা বলে দিলে হয়ে গেলো? এটা ঠিক না। এই ধরনের হাইপার জার্নালিজম। গত কয়েকদিন যাবৎ বেগম খালেদা জিয়া জ্বর অনুভব করার পর গত ১২ অক্টোবর তাঁকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন। ৭৬ বছর বয়েসী বেগম খালেদা জিয়া বহু বছর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ডাক্তার সাহেবরা বার বার বলে আসছেন, তাঁর মেডিকেল বোর্ড বলে আসছেন যে, তাঁর যে মাল্টি ডিসিপ্লেনারী ডিজিস আছে এগুলোর পরিপূর্ণ চিকিৎসা এখানো করানোর কোনো এডভান্স সেন্টার নাই। এজন্য তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিলো। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যে, একটা সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাধারণ মানুষের মতো চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। তাঁর এই অধিকারটুকু সরকার স্বীকার করে নাই। তাঁকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। আমি আবার বলছি, সি নিডস এ এডভান্স ট্রিটম্যান ইন এ এডভান্স সেন্টার। এটা খুব প্রয়োজন। তার জন্যে আইনগত কোনো বাধা আছে বলে আমরা মনে করি না। কারণ সি ইজ এনটাইটেল টু বেইল। কেনো বেইল পাবেন না? এটা তাঁর অধিকার, এটা কোনো দয়া নয়। কারণ এই ধরনের একটা মিথ্যা মামলা তাঁর পরেও এই মামলায় তাঁর জামিন পাওয়া তাঁর অধিকার। সরকারের উচিত অবিলম্বে তাঁকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা যদি না পান তার জন্য সরকারকেই ‘একশ ভাগ’ দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেন বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মো আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়েছিলো তাঁর পরিবার। তবে সরকার বলেছে, সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাঁকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে। গত এপ্রিল মাসে তিনি বাসায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। সেখানে ব্যক্তিগত বিশেষ চিকিৎসদের একটি মেডিকেল টিমের চিকিৎসায় সেরে উঠলেও পোস্ট কোভিড জটিলতায় গত ২৭ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়ার এভারকেয়ার হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। ভর্তির কয়েকদিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে সিসিইউতে নেয়া হয়। প্রায় দুই মাস তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ১৯ জুন মেডিকেল বোর্ড বাসা নিয়ে চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়পত্র প্রদান করে।