গ্রেফতার হওয়া যুবক ইকবাল হোসেন এতদিন কোথায় ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি
সরকার একেক সময়ে একেকটা বিভাজন তৈরি করছে - ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৬ এএম, ২৩ অক্টোবর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:২১ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
কুমিল্লার পূজামন্ডপের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া যুবক ইকবাল হোসেন এতদিন কোথায় ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার বিকালে এক আলোচনা সভায় শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বিভিন্নস্থানে পূজামন্ডপে হামলার কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার পত্র-পত্রিকাগুলো সব দেখেন, দেখলেই বুঝতে পারবেন। এটা সত্য ঘটনা সবাই এটা মেনে নেবেন যে, সরকারের মদদ ছাড়া কখনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি হয় না। যারা সরকারে থাকে তারাই করে।’
‘আজকে যে পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, এই যে ইকবালের কথা কিছুক্ষণ আগে একজন বললেন। ইকবাল নামে একজন বলা যেতে পারে একটা অপ্রকৃতিস্ত এবং মাদকসেবী তাকে ধরা হয়েছে। এটা (ইকবাল) এতদিন কোথায় ছিল? এই বিশ্বাসটা কে করবে? কারা তাকে সেখানে নিলো?’
শারদীয় দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়াদীঘির পাড়ে দর্পণ সংঘের পূজামন্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হামলা, ভাঙচুর চালানো হয় অন্তত শহরের আটটি মন্দিরে। তার জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় পাঁচজন। এরপরের কয়েকদিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে হামলা হয়। তাতে নোয়াখালীতে নিহত হয় দুইজন।
সারাদেশে পূজামন্ডপে সংঘটিত হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কেনো আপনারা (সরকার) ঘন্টার পর ঘন্টা চলে গেল সেখানে কোনো পুলিশ পাঠালেন না বা পুলিশ গেল না বা পুলিশ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নিলো না। কেন এটা হলো?’
‘রংপুরের ঘটনায় দেখলাম আমরা একদিকে ওসি, চেয়ারম্যান সবাই মিলে আলোচনা করছে একটা আপোস করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বাইরে থেকে এসে লোকজন মাঝিপাড়া জ্বালিয়ে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য। তাহলে কি আমরা বলব যে, তাদের ছত্রছায়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের সাহেব কী করলেন? যখনই সেইদিন ঘটনাগুলো ঘটলো প্রথমে ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন, এটা বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা করেছে। কথায় কথায় উনি একটাই কথা বলবেন যে, যত দোষ নন্দ ঘোষ।’
‘আপনাদের চরম ব্যর্থতা যে, আজকে এই সমাজে কোনো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের তারা ধর্ম বিশ্বাস করেন তারা তাদের ধর্ম পালন করবেন, মুসলিম ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম পালন করবেন, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবেন, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবেন- এটাই তো বাংলাদেশ। আপনারা (সরকার) কী করছেন? অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছেন, যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে শুধুমাত্র মানুষের দৃষ্টিটা, মানুষের মনোযোগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার একেক সময়ে একেকটা বিভাজন তৈরি করছে। সেই বিভাজনে একেক সময় একেকটাকে সামনে নিয়ে আসে। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি। এখন তারা ধর্মীয় বিভাজনে নেমে পড়েছে, কি করে মানুষের মূল যে সমস্যা সেই সমস্যা থেকে তাদের বিভ্রান্ত করা যায়।’
‘আমাদের সমস্যা এখন আমাদের জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, আমাদের সমস্যা হচ্ছে যে, আমরা ভোট দিতে পারি না, আমাদের সমস্যা হচ্ছে যে, আমরা কথা বলতে বলতে পারি না, আমাদের অধিকারগুলো নেই, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই জায়গাগুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে এসে একটা সাম্প্রদায়িক সংকট, সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি করছে।’
দেশের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষ দুঃসহ অবস্থার মধ্যে বাস করছে। একদিকে প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। চাল, তেল, লবণ, চিনির দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। ফলে মানুষ গরিব থেকে আরো গরিব হচ্ছে আর আওয়ামী লীগের লুটেরারা ধনী থেকে ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এমন একটা পর্যায়ে গেছে এখন বলা হয় যে, সিস্টেম অব দ্য স্টেট হচ্ছে দুর্নীতি।’
‘আপনি যেখানে যাবেন? ছাত্র ভর্তি করতে যাবেন দুর্নীতি, আপনি হাসপাতালে যাবেন দুর্নীতি, আপনি একটা বিচারালয়ে যাবেন সেখানে দুর্নীতি। কোথায় দুর্নীতি নেই। আজকে দুর্নীতি এই সমাজকে একেবারে ক্ষয় করে ফেলেছে, নষ্ট করে ফেলেছে।’
এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে জনগণের ঐক্য সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে সরকার হটানোর জন্য দলমত নির্বিশেষে আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় মিলনায়তনে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি তার ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করে।
১৯৭৪ সালে মাওলানা আবদুল মতিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি প্রতিষ্ঠা হয়।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরা খাতুন জুঁই ও মেজবাউল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামী শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনপিপি’র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এলডিপি’র শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফারুক রহমান, সহ-সভাপতি এসএম ইউসুফ আলী, রামকৃষ্ণ সাহা প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন।