ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে সহিংসতা ছড়িয়ে অনেকে নিজ ধর্মকে অপমানিত ও কলংকিত করছেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৭ পিএম, ২০ অক্টোবর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪৩ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সাম্প্রতিক পবিত্র কুরআনের অমর্যাদা ও সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস এবং সহিংসতার প্রতিবাদে আয়োজিত দলীয় ব্রিফিং কালে এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, অতীতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কোন বিচার হয়নি। সন্ত্রাসীদের বিচার না করে সরকার নোংরা রাজনীতির খেলা খেলছে। মন্দির মসজিদের বিভেদ সৃষ্টি করে একটি মহল ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। আমরা দাবী করছি অতি দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করুন। বিচারের আওতায় আনুন। নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান। দেশের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষা করুন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল তিনটায় এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ধর্মগ্রন্থের অমর্যাদা, উপাসনালয় ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রেক্ষিতে জাতির উদ্দেশ্যে এবি পার্টির বক্তব্য তুলে ধরেন পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রমাগত ক্ষত নিয়ে দিনাতিপাত করছে। গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার হরণ, মানবাধিকার লংঘন, গুম, খুনের যন্ত্রনায় দগ্ধ হতে থাকা বাংলাদেশে আমরা আজ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের আত্মঘাতি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছি।
গত ১৩ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্যবাহী শহর কুমিল্লা'র নানুয়ারদীঘিস্থ দূর্গা পুজা মন্ডপে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনকে কে বা কারা প্রতিমা'র হাঁটুর উপর স্থাপন করে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিতর্কিত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় দৃশ্যত কুরআন অবমাননার কারণে একদিকে যেমন মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, অন্যদিকে দেশে দাঙ্গাময় পরিস্থিতি তৈরি করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এ নিয়ে মন্ডপ কতৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের উদাসীনতায় পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে এবং চারিদিকে গুজবের ডালপালা বিস্তার করেছে।
অত্যান্ত দূ:খজনকভাবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের উপাসনালয় ও বাড়ী ঘরে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখ রংপুর জেলার পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া-বটতলা ও হাতিবান্ধা গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ী পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তছনছ করে দেয়া হয়েছে অসহায় মানুষগুলোর সংসার। কোন ধর্মপ্রাণ মানুষ এই ধরনের হিংসাত্মক, বর্বর হামলা চালাতে পারেনা। যারা এই ধরনের পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে তারা নিজ ধর্মের অপমান করেছেন এবং সামাজিক সংহতি নষ্ট করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে আমরা মনেকরি। এর নিন্দা জানানোর কোন ভাষা আমাদের জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে একটি মহল সুযোগ পেলেই বার বার এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। পর্দার অন্তরাল থেকে কোন অদৃশ্য কারিগররা যেন যখন-ইচ্ছে উস্কানিমূলক স্যাবোট্যাজ ঘটিয়ে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। বস্তুতপক্ষে, মুসলিম ও হিন্দু— উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতি কে দুটি পক্ষ রাজনৈতিক খেলার হাতিয়ার বানিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত।
একটি পক্ষ ধর্মের অপব্যবহার ও অপব্যখ্যা করে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তির জানান দিচ্ছে, অন্য পক্ষ একে পুঁজি করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ভোটের ব্যাংক নিশ্চিত করার খেলা খেলে যাচ্ছে। দুটি পক্ষ লোকচক্ষুর সামনে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলেও বাস্তবে স্বার্থসিদ্ধির জায়গায় তারা একে অপরের সহযোগি বলে মনেহচ্ছে। মাঝে মাঝে তাদের এই আঁতাত লোকচক্ষুর কাছে ধরা পড়ে যায়। এর একটি বড় প্রমাণ হলো, ২০১৬ সালে নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও মন্দির ভাঙচুর মামলার চার্জশিটভুক্ত ৩ আসামিকে সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান পদে আ'লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল যা পরে প্রকাশ পেয়ে গেলে প্রত্যাহার করা হয় (১৩ অক্টো. ২০২১, ডেইলি স্টার)। সুতরাং, এ ধরনের হামলার ঘটনাগুলো যতটা না সাম্প্রদায়িকতাপ্রসূত, তারচেয়েও বেশি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক বলে সন্দেহের অবকাশ থাকে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পেলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার অধিকার অবশ্যই প্রত্যেকের রয়েছে। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি, যাতে এক শ্রেণীর প্রপাগান্ডিস্ট মিডিয়া `সংখ্যালঘু ট্রাম্পকার্ড' ব্যবহার করতে না পারে এবং মুসলমানদের উস্কানি দিয়ে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে প্ররোচনা দিতে না পারে। ধর্মের অবমাননার প্রতিবাদে আমরা যাতে উল্টো নিজ ধর্মকে অপমানিত ও কলংকিত না করি।
সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে আমরা সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাবো এটাই হোক আজ আমাদের সম্মিলিত শপথ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সহকারী সদস্য সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুব পার্টির সমন্বয়ক এবি এম খালিদ হাসান, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব গাজীপুর জেলা আহবায়ক আমজাদ খান, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্য সচিব ব্যরিষ্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কামাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার ফারুক, যুবনেতা তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, নারীনেত্রী রুনা আক্তার, জেসমিন আক্তার মুক্তা সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।