পূজামন্ডপে হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৪ এএম, ২০ অক্টোবর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৯ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
পূজামন্ডপে হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শান্তি মিছিলের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং বিভাজন সৃষ্টি করে তারা এটাকে পুঁজি করে সেটাকে আবার তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একজন বলেছেন, আজকে তারা (আওয়ামী লীগ) শান্তি মিছিল বের করেছে। অশান্তি ঘটালেন আপনারা, আগুন দিলেন আপনারা, মারলেন আপনারা, গুলি করলেন আপনারা এবং নিরীহ মানুষদের হত্যা করে আজকে শান্তি মিছিল বের করছেন। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। এই আওয়ামী লীগ এটাই। এটাই আওয়ামী লীগের খাঁটি চরিত্র। এটাই তারা করে এসেছে জন্মের পর থেকে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এদেশের মানুষ অনেক বেশি কষ্ট পাবে। আমাদের অর্জনগুলো সমস্ত হারিয়ে যাবে। আমরা আরো বেশি নিচের দিকে নামতে থাকবো। তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সকল সচেতন মানুষ যারা আছি তারা এই দানবীয় সরকারকে সরাতে হবে। এদেরকে সরাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সাদা-কালো, বাম-ডান সকলকে এক হয়ে এদেরকে সরাতে হবে। এদেরকে সরিয়ে এখানে জনগণের একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে, জনগণের একটা সরকার তৈরি করতে হবে, জনগণের একটা বাসভূমি তৈরি করতে হবে। তাহলেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সবচেয়ে বেশি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। এবারের পূজামন্ডপে মানুষজনের কম উপস্থিতি হয়েছিলো উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেখুন এই যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা-সংকট সরকার তৈরি করেছে। এখানে দাদা (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) আছেন। দাদার বাড়িতে পূজা হয়েছে সেই বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। এর আগের বছর যখন গেছি তখন দেখেছি কি উৎসব, কি আনন্দ। সেখানে কাছাকাছি আরো কয়েকটা পূজামন্ডপে পূজা হচ্ছে।
লোকজন রাস্তায় বোঝাই হয়ে ছিলো। এবার গিয়ে দেখলাম দাদার বাড়িতে ওইভাবে লোক নেই। কারণ মানুষ ভয় পেয়ে গেছে, সেভাবে লোক আসছে না। পূজা সেভাবে হচ্ছে না। এবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেছি সেখানেও আমি দেখেছি- অনেক কম মানুষ, বনানীতে পূজামন্ডপে গেছি সেখানেও অনেক কম মানুষ। কোনো? আমাদের অন্যতম ভাই, আমাদের পাড়া-প্রতিবেশি, আমাদের দেশের স্বাধীন নাগরিক তারা। কেন তাদের ধর্মের উৎসব পালন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে বিভাজন সৃষ্টি করছে।
আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্র ফেরত দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বোঝার কোনো কারণ নেই যে, তারা আমাদেরকে গণতন্ত্র দেবে। গণতন্ত্র তারা নিজের হাতে শেষ করেছে ১৯৭৫ সালে এবং এবার ২০০৮ সাল থেকে শুরু করেছে। বাংলাদেশের আত্মাটা কী? বাংলাদেশের আত্মা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ, মুক্ত সমাজ। সেই আত্মাকে তারা ধ্বংস করছে পরিকল্পিতভাবে। আপনারা দেখুন তারা কথা বলতে দেয় না, লিখতে দেয় না। আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আজকে এই খবর বড় জোর দুই সেকেন্ড/তিন সেকেন্ড বা ১/২ মিনিট দেখাতে পারবে, পত্রিকায় একটা কলাম হবে। আমি বলি দোষ তাদের না। তাদের ম্যানজেমেন্ট, মালিক যারা এরা সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের সাথে জড়িত আছে হয় ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনোভাবে অথবা সরকার তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যদি কিছু লিখতে যায় সাংবাদিকের চাকরি চলে যায়, পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। হয়েছেও। অনেক পত্রিকা ও অনলাইন এই সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। এই একটা দম বন্ধ করা পরিবেশ এখন বিরাজ করছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং পরবর্তীতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে তার নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে তাঁর জীবনাদর্শ ও দর্শন অনুসরণের আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, পেশাজীবী নেতা গাজী আব্দুল হক, প্রকৌশলী মিয়া মুহাম্মদ কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডা. পারভেজ রেজা কাঁকন, অধ্যাপক আবদুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনে ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানসহ পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতি : কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দিঘীরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মন্ডপে উদ্ভূত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে তান্ডব শুরু হয়েছে তা সরকারের গভীর চক্রান্তের অংশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাষ্ট্র সমাজে নৈরাজ্য তৈরি করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। সরকারি দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্র উচ্ছেদ করতে সকল শক্তি নিয়োগ করে আসছে। অথচ সম্প্রতি কুমিল্লর নানুয়ার দিঘীরপাড়ের পূজামন্ডপে উদ্ভূত ঘটনায় মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার সম্পূর্ণরূপে ছিল উদাসীন। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সকলেই জানে সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডের জন্য দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখন ভয়-ভীতি ও শংকার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা এবং এর রেশ ধরে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, রংপুর, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা ও তাদের চোখের সামনেই এ ধরনের অরাজক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন।
এখন উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে জড়িত করতে সরকার চক্রান্তমূলক নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে পাইকারী হারে গ্রেফতার করছে। নোয়াখালীতে সংঘটিত ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন, চৌমুহনী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস নিজামুদ্দিন রুবেল, জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন সুজন, চৌমুহনী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রাশেদ সুমন, হাতিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আরেফিন আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের আকরাম হোসেন, মোহাম্মদ আলী, সম্পদ হাওলাদার রাজু, যুবদল নেতা কামরুজ্জামান ও রফিকসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সূবর্ণচর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক বেলাল উদ্দিন সমুন, হাতিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহাবায়ক আমিরুল ইসলাম আমিরসহ ৬০ জনকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় বিএনপি নেতা মজিবুর রহমানসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এছাড়াও আজ ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার মামলা-হামলার চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ। বিরোধী দলকে দমন-পীড়নে পিষ্ট করাই যেন এদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। এরা একদলীয় নাৎসীবাদের উপাসক। এরা রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখল করে আদিম উল্লাসে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এরা বারবার জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে ফেরাতে সহিংস পন্থা অবলম্বন করে। এদের মধ্যে মানবতা, মানবিক মর্যাদা, সহিষ্ণুতা, বহুমাত্রিকতার লেশমাত্র নেই। এরা নিজেদের স্বার্থে দেশকে এক অজানা গন্তব্যে নিয়ে যেতে চায়। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছাত্রদলের আব্দুস সাত্তার পাটোয়রীসহ সুবর্ণচরের বেলাল উদ্দিন সুমন এবং হাতিয়া যুবদেলর আমিরুল ইসলাম আমিরের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া নোয়াখালী, চট্টগ্রামে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।