সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা কোথাও নেই, এরা মিথ্যা কথা বলে একটাও সত্য কথা কোথাও বলে না - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৬ এএম, ১৭ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১২ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এমনকি ইউনিয়নের কর্মীদের পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মামলার আসামি করা হয়েছে। ৩৫ লক্ষ আসামি করা হয়েছে এক লাখ মামলায়। ৫০০ জনকে খুন-গুম করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফেসীবাদ সরকারকে আমরা সরাতে পারিনি। সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা কোথাও নেই। এরা মিথ্যা কথা বলে। একটাও সত্য কথা কোথাও বলে না। জনগণের সঙ্গে সবসময় এরা প্রতারণা করে এসেছে। গত নির্বাচন নিয়ে কথা বলে না এখন। নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলে না। বলে সার্চ কমিটি।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক বিপদ। গভীর সংকট পার করছি। বিগত কয়েববছর দেশে গণতন্ত্র নেই। কথা বলার অধিকার, সভা সমাবেশের অধিকার নেই। গ্রেফতার করে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জেলে রাখছে। এই সরকার মুখে গণতন্ত্র বলে কিন্তু গণতন্ত্র তারা মানে না। পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রের মোড়কে একদলীয় শাসন কয়েম করছে। জনগণের সাথে প্রতারণা করছে।
এখানে এসে দেখলাম চট্টগ্রামে অনেক ফ্লাইওভার করেছে। পাকা ডেন করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য কি করেছে। সাধারণ মানুষের জন্য তারা কিছু দেখে না। লকডাউনের পর লকডাউন করে সব শেষ করেছে। আর প্রণোদনা দিলেন আওয়ামী লীগের নেতাদের। গরীব মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে দিবে বলেছে সেটাও আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়েছে। দেশে গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে আর আওয়ামী লীগ তাজা, মোটাতাজা হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার এজেন্টদের দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে। চট্টগ্রামেও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করেছে, দাঙ্গা করতে চায়। হাসান মাহমুদ বলেছে বিএনপি করাচ্ছে। তোমরা তো করাচ্ছে। জনগনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মিটিং করতে দেয় না। এখন আবার মিথ্যা মামলা দেয়া শুরু করেছে।
তিনি নেতা কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যারা নেতা মানে না তারা আন্দোলন করতে পারে না। আমি অসুস্থ, ৭৩ বছয় বয়স আমার। আপনারা যে বিশৃঙ্খলা করছেন সেটা হয় না। এটা সাধারণ কোনো কর্মীসভা নয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতারা কমিটি করেছেন। সেখান থেকে যে নেতৃত্ব তাদের নিয়ে এই কর্মীসভা। এখানে যদি বিশৃঙ্খলা হয় তাহলে কিভাবে আন্দোলন হবে? বিশৃঙ্খল কোনো সেনাবাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে না। সুশৃঙ্খল হোন। ফেসবুকে ছবি দিয়ে আন্দোলন হবে না। সংগ্রাম করতে হলে সাচ্চা কর্মী হতে হবে। সেনাপতির নির্দেশ মানার মানসিকতা থাকতে হবে।
হৈ হৈ করলে রাজনীতি হবে না। মাথা ঠান্ডা রেখে, সুপরিকল্পিতভাবে চিন্তা করে রাজনীতি করতে হবে। এই যুবকদের কাজ হচ্ছে আওয়ামী লীগ থেকে দেশকে রক্ষা করা। ফেসবুক রাজনীতি করলে হবে না। নেতা ডাক দিলে নামতে হবে।
এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নেই। সার্চ কমিটি যাকে পছন্দ তাকে দিয়ে করবেন। নির্বাচনের আগের দিন ভোট হয়ে যাবে। মানুষ সে ফাঁদে আর পা দিবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের প্রস্তাব ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে। সে নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একবার তারাও নির্বাচিত হয়েছিল। তিনি আজ শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর টাইম স্কর কমিনিউটি সেন্টারে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি বক্তব্যে এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সচিব সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মো. মিয়া ভোলা, অ্যাড. আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, মাহবুব আলম, অ্যাড. মুফিজুল হক ভূইয়া, ইকবাল চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, নাজিম উদ্দীন আহমেদ, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাসেম, মন্জুর আলম মন্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মনজুর আলম চৌধুরী মনজু, কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেড় বছরে লকডাউন-লকডাউন খেলা করে সরকার মানুষের জীবিকা অর্জনের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। যারা হকারি করতেন, স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতেন, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। গরীব মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, সেই টাকা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের গুন্ডারা লুট করে খেয়ে ফেলেছে। আমার কথা নয়, পত্রপত্রিকা খুললে দেখবেন আওয়ামী লীগ কিভাবে সারাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ড্রাইভার, তার একাউন্টে ৪০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে তারা? আজ গরীব শুধু গরীব হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মোটা থেকে আরও মোটা, তাজা থেকে আরও তাজা আর বড়লোক থেকে আরও বড়লোক হচ্ছে।
তিনি বলেন, হিন্দু ভাইদের দুর্গাপূজা, আমরা সবসময় এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যারা আছেন তাদের পাশে আমরা ভাইয়ের মতো দাঁড়াই সবসময়। এখানে বয়স্ক যারা আছেন, তারা জানেন। বাবরি মসজিদের ঘটনা আপনারা জানেন। তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি তখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। যখন বাবরি মসজিদের ঘটনা ঘটল, ডিসি আমাকে ফোন করলেন, আপনারা দ্রুত একটু আসুন, আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। ডিসি সাহেব বললেন, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জেলায় জেলায় ফোন করে বলেছেন, বাংলাদেশে কোথাও যেন সাম্প্রদায়িক সমস্যার সৃষ্টি না হয়। কোথাও যেন পূজামন্ডপ অথবা মন্দির যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, আমাদের সফল অর্জন সেদিন- বাংলাদেশের কোথাও আমরা সেদিন কোনো ঘটনা ঘটতে দিইনি। আর এরা কি করেছে? এদের ভেতরে এজেন্ট আছে। তাদের এজেন্ট দিয়েই ঘটনা ঘটাবার জন্য কুমিল্লার কাজটি করেছে। ওইটার সূত্র ধরে চাঁদপুর, নোয়াখালী আর চট্টগ্রামে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে।
এই চট্টগ্রামের লোক হাছান মাহমুদ সাহেব বারবার করে বলছেন, এর পেছনে নাকি বিএনপি আছে। এই ঘটনা ঘটাচ্ছ তোমরা। এসব ঘটনা যদি না ঘটাও তাহলে জনগণ তার অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করবে। জনগণের আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার জন্য তোমরা এটা করছ। এটা করতে না পারলে তোমাদের সমস্যা। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এখানে বিরোধী রাজনীতির কোনো সুযোগ রাখা হচ্ছে না। আমাদের মিটিং করতে দেয় না। মিটিং করতে গেলে পুলিশ মারে, মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এবারও পুলিশ মিথ্যা মামলা দেয়া শুরু করেছে। চৌমুহনীর ঘটনায় আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। পুলিশ-র্যাবের সামনে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর করল আর আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।
শুধু সেøাগান দিয়ে আন্দোলন হবে না। মাথা ঠান্ডা করে বুদ্ধিমত্তার সাথে কৌশলে নিজেকে দৃঢ় করে আন্দোলন করতে হবে। আমাদের যৌবনে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। এখন আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই ফ্যাসিবাদি সরকার থেকে দেশকে মুক্ত করা। নেতারা যখন ডাক দেবেন, ঝাঁপিয়ে পড়বেন।