বর্তমান সরকারের শাসনামল ‘অন্ধকার যুগ’ - ড. মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৬ এএম, ১৭ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৩ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বর্তমান সরকারের শাসনামলকে ‘অন্ধকার যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে কল্যাণ পার্টির উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ‘মহানবী (সা.)- এর জীবনাদর্শ ও সমকালীন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের প্রিয় নবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) কখন এসেছিলেন? আল্লাহতায়ালা তাকে কখন প্রেরণ করেছিলেন? সেই সময়টাকে আইয়ামে জাহেলিয়াত বলা হয়। আজকে ঠিক একরকমের অন্ধকার যুগে এই বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের অধীনে আমরা বসবাস করছি। এর থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে এবং এই থেকে মুক্তি পেতে হলে এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার, গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে হবে তারা কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে চায়?।
কুমিল্লার ঘটনা প্রসঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কুমিল্লার যে ঘটনা সেটা কে ঘটিয়েছে সেটা আমরা জানি না। তবে যে ঘটিয়েছে এটা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে ৯২ ভাগ মুসলমান অধ্বিাসী হলেও বাংলাদেশ দাবি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দুরা এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষ নির্ভয়ে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে, পূজা অনুষ্ঠান পালন করতে পারে। এখানে কোনো সময় কোনো এই ধরনের অপচেষ্টা বা কোনো রকমের বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার জন্য এই ষড়যন্ত্রকারী কোরআন মন্দিরে অত্যন্ত গর্হিতভাবে অপমানজনকভাবে রাখা হয়েছে। এটা আমরা তীব্র নিন্দা করি এবং যারা এটা করেছে তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের বিচার দাবি করি। কেননা এই সম্প্রীতি নষ্ট করে এটাকে একটা রাজনৈতিক রূপ দিতে চায়।
তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের দায়িত্ব এই ষড়যন্ত্রটি উদঘাটন করা। কারণ এই বিষয়টা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য খারাপ ইনকিগেশন বহন করে, নেগেটিভ ইন্ডিগেশন বহন করে। সেজন্য এখনই এই ষড়যন্ত্র নির্মূল করা প্রয়োজন। আমরা সরকারের কাছে দাবি করি যদি সরকার আন্তরিক হয় আমার বিশ্বাস কারা করেছে –এটা বের করতে পারবে। আমি আশা করি, এ ব্যাপারে আমরা জানতে পারব এবং তার বিচার পাবো।
দেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলে অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বিচারালয়কে দলীয়করণ করে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আজকে বিচারকদের, বিচারপতিদের স্বাধীনভাবে বিচার করার অধিকার নাই। তারা নির্দেশিত হয়ে রায় দিতে হয়। অথচ বিচার করার মালিক কিন্তু একমাত্র আল্লাহ। আর আল্লাহতায়ালা এই বিচারক এবং বিচারপতিদের মধ্যে তার ক্ষমতার সামন্য একটা কণা তাদেরকে দিয়েছেন সমাজকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার জন্য। আজকে হুকুমে নির্দেশে রায় হচ্ছে। আপনারা জানেন, দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার রায়ের অবজারভেশনে সরকারের বিরুদ্ধে একটা কমেন্ট করেছিলেন। সেই অবজারভেশন কেনো করলো সেজন্য কিভাবে তাকে অপমানিত হয়ে প্রধান বিচারপতির পদ ছেড়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছিলো। এখন তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার আসামি। আরেকটি মামলায় নিম্ন আদালত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কিছু পায়নি তাঁকে খালাস দিয়েছিলো সেজন্য সেই বিচারককে দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে হয়েছে। বর্তমান সংকট উত্তরণে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেভাবে আপনারা (সরকার) মানুষকে ক্ষেপিয়ে রেখেছেন, মানুষ মনঃকষ্টে আছে। সময় বেশি নেই তার প্রকাশ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হবে। যদি আগামী নির্বাচন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হয় তাহলে কিন্তু দেশে মানুষ বসে থাকবে না। তাদের যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ একদিন গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হবে। আমি আশা করি সরকার সেই অŸস্থায় না গিয়ে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে একটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দিকে যাবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহ আল হাসান সাকীবের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সদরঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মাওলানা নাসির ইকবাল বিন শাফী, সাভার বায়তুল মাগফেরাত কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মাওলানা হুমায়ুন কবির মাজেদী, কল্যাণ পার্টির ড. বদরুল আলম সিদ্দিকী, মাওলানা সালেহ উদ্দিন সিদ্দিকী, অŸসরপ্রাপ্ত কর্ণেল মো. আকরাম, অŸসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির প্রমুখ ।