দুই আ’লীগ নেতার দখলে অর্ধশত কোটি টাকার সরকারি জমি!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৫ এএম, ১৬ অক্টোবর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৩১ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরশহরের চৌরাস্তা হাটে দখল হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সরকারি জমি। হাটের এ জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের দুই নেতাদের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এ জমির দখলে রয়েছেন। সেখানে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪-৮৫ এবং ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর দুটি মিস কেসের মাধ্যমে চৌরাস্তা হাটের সম্পত্তি পেরিফেরিভুক্ত করে ভূমি অফিস। পরে কর্তৃপক্ষ বাজারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য ২০০৯ সালে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসককে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাস্তবায়নে পীরগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। তবে অজ্ঞাত কারণে সে সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ সুযোগে পরে শহরের প্রাণকেন্দ্র রঘুনাথপুর মৌজায় (ঢাকাইয়াপট্টি) চৌরাস্তা হাটের উত্তর পূর্বাংশ অবৈধভাবে পাকা স্থাপনার কাজ শুরু করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লবসহ কয়েকজন ব্যক্তি।
অর্ধশত কোটি টাকা মূল্যের হাটের জমিতে তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভিত্তি স্থাপনসহ পিলার নির্মাণের কাজ করেছেন। বিপ্লব নিজের বাড়ির জন্য বহুতল ভবন এবং ইমদাদুল হক জমি দখল নিতে তার লোকজন দিয়ে সীমানা প্রাচীরের কাজ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বিষয়টি নজরে এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বুধবার (১৩ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিমকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক মাববুবুর রহমান। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্দেশনা পর উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে কাজ বন্ধ না করে দখলদারদের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে চলে যান। পরে জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন, নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানে যথারীতি নির্মাণকাজ চলছে। এ জন্য ইউএনও’র নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়। কাজ বন্ধ করা হয়েছে। আবার কাজ চালুর বিষয়টি তিনি জানেন না। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি খোঁজ নেবেন।
সরকারি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, বাজারটা মারোয়াড়ি/সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সম্পত্তি। অনেকেই দখল করে আছেন। বড় বড় বিল্ডিং করেছেন। তিনি কোনো জমি দখল করছেন না। তার জানামতে, এমদাদুল (তার কর্মচারী) ও বাবুল সেখানে জমি কিনে প্রাচীর করেছেন।
তবে এমদাদুল হক বলেছেন, সাবেক এমপি প্রাচীর নির্মাণের কাজটি করেছেন। তিনি শুধু দেখাশোনার দায়িত্ব আছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব বলেন, সেখানে তিনি ২০ বছর ধরে আধাপাকা বাড়ি করে আছেন। এখন ভেঙে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। হাটের পেরিফেরি থেকে জায়গাটা অবমুক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
পৌরসভা দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পৌরসভা থেকে বাজারটি বার্ষিক ইজারা দেয়া হয়। এরপর আর ইজারা দেয়া হয়নি। এ সুযোগে ভূমি অফিসের লোকজনের সহায়তায় সেখান রাতারাতি অবৈধভাবে আধাপাকা বাসাবাড়ি, পাকা ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন কয়েকজন। হাটের জায়গায় ব্যক্তিমালিকানায় অবৈধ ভবন নির্মাণ ও বাসাবাড়ি গড়ে ওঠায় পরে কর্তৃপক্ষ তা বাজার হিসেবে ইজারা দিতে চাইলেও প্রভাবশালী দখলদারদের ভয়ে কেউ লিজ নিতে রাজি হননি।
পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযাদ্ধা ইকরামুল হক বলেন, পেরিফেরিভুক্ত জমিতে ঘর নির্মাণের পারমিশন পৌরসভা দিতে পারে না। কাজ বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।