সরকার এজেন্সি দিয়ে কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০২ এএম, ১৫ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১২ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সরকার এজেন্সি দিয়ে কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীত বিনষ্ট করতে তার এজেন্সি দিয়ে কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে। দেশে নানা সমস্যা রয়েছে। সেখান থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ বিনষ্ট করার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আপনারা দেখেছেন পত্রিকায় এসেছে, হিন্দু ভাইদের যে দুর্গাপূজা হচ্ছে, সেই দুর্গাপূজায় কতগুলো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে বিশেষ করে কুমিল্লায় ও চাঁদপুরে। চাঁদপুরে তিনজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে এবং নির্বিচারে গুলি করেছে। এই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবার যে চক্রান্ত- এটা এই সরকারের চক্রান্ত। তারা এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, ধ্বংস করতে চায় এবং দেশে স্থিতিশীলতার নষ্ট করতে চায়। আমরা এই সব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং একই সঙ্গে অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধী যারা তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আপনারা শুনেছেন যে, কোরআন শরিফ নিয়ে রেখে পূজামন্ডপে। কে করেছে? যারা করেছে তারা এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই করেছে, দেশে একটা স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্যই করেছে। অন্যদিকে আবার পুলিশ গুলি চালায় নির্বিচারে সেটাও একই কারণে তারা করেছে। একটা জায়গা নয়, বহু জায়গায় তারা এগুলো করেছে। আমি আপনাদেরকে সতর্কতার সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের এই দেশ একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা হাজার বছর ধরে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বাস করি। এসব ঘটনা যারা ঘটায় তারা সম্পূর্ণভাবে সরকারের এজেন্সির মাধ্যমে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করবার জন্য এবং আসল জায়গা থেকে অন্যদিকে দৃষ্টি নেয়ার জন্য করছে। তিনি বলেন, আমার দেশের সংকট কী? আমার দেশের এখন সংকট হচ্ছে গণতন্ত্র, আমার দেশের এখন সংকট হচ্ছে কথা বলার অধিকার নাই। আমাদেরকে কোথাও দাঁড়াতে দেয়া না, মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। ভয়াবহ একটা ফ্যাসিবাদী দানবের মতো শাসন চেপে বসে আছে আমাদের ওপর। সেটা নিয়ে কথা, সেটা নিয়ে কাজ করছি তখন এসব ঘটনা ঘটিয়ে তারা ডায়ভার্ট করতে চায় জনগণের যে দৃষ্টি সেটাকে অন্য দিকে নিতে চায়।
নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশে হাসির কথা। লাফিং টকস। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন ভুলে গেছে। লাস্ট নির্বাচন ২০০১ সালে হয়েছে তারপরে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০০৮ সালে যেটা হয়েছে সেটা একটা অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে, সেটা আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন সাহেব আজকে বলেছেন যে, কখনোই বাংলাদেশে আপাতত যে প্রেক্ষাপট আছে তাতে একটা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন কমিশন কিছুই করতে পারবে না, সম্ভব নয়। যত ভালোই লোককে নিয়ে দেন- সরকার যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনা করতে না দেয় তাহলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। সেই কারণে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, আগে পদত্যাগ করো- রিজাইন এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দাও। তিনি বলেন, কিন্তু ওদিকে তারা (সরকার) যাবে না। তারা সার্চ কমিটির মাধ্যমে সেই লোকগুলোই তো নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এটা কোনো দিনই গ্রহণযোগ্য হবে না। কথা পরিষ্কার- নির্বাচন নির্বাচন আর খেলা হবে না। সত্যিকার অর্থে যদি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি করতে হয় আগে সরকারকে সরে যেতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টাতে সকলকে ঐক্য হয়ে ‘মানুষকে জাগিয়ে তোলা’র আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয় প্রেসক্লাবসহ কোথায় বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, নব্বইয়ের আন্দোলনের নেতাদের একটা অনুষ্ঠান ছিল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে। সেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছিলেন ভার্চুয়ালি। এটা তারা সহ্য করতে পারলো না। তারপরের দিন থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব, সরকারের তথ্যমন্ত্রী তারা বলতে শুরু করলেন খুব অন্যায় হয়েছে, বেআইনি হয়েছে। আরে ভাই এত ভয় কেন? তারেক সাহেব তো সেই ৮ হাজার মাইল দূর থেকে একটা বক্তব্য দিয়েছেন। আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন। তার বক্তব্য প্রচার করা যাবে না, তার ছবি ছাপা যাবে না, তার কথা শুনানো যাবে না। আসলে তারা (সরকার) দুঃস্বপ্ন দেখে এই বোধহয় এসে গেল এবং দিবাস্বপ্ন দেখে দিনের বেলা ভয় পায় এই বুঝি আমাদের চেয়ার বোধহয় গেল, গদি বোধহয় গেল। জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের সভানেত্রী অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইসহাক সরকার প্রমুখ।