আওয়ামী লীগ নয়, ‘আমলা লীগ’ দেশ চালাচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪০ এএম, ১৩ অক্টোবর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:১১ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
আওয়ামী লীগ নয়, ‘আমলা লীগ’ দেশ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এক প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এই প্রতিনিধি সম্মেলন হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর হাসান জাফির তুহিন ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে নবগঠিত কৃষক দলের আংশিক কমিটি গঠনের পর এটি তাদের প্রথম সম্মেলন। সারাদেশ থেকে কৃষক দলের জেলা প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বলে আয়োজক নেতারা জানিয়েছেন। এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে দিনব্যাপী সম্মেলন হয় সেখানে জেলা প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আওয়ামী লীগ কোথায়? এখন সমস্ত হচ্ছে আমলা লীগ। আপনারা যে যেখানে যাবেন দেখবেন ডিসি, এসপি, ওসি-এরা অনেক বড় সাহেব। ওদের (আওয়ামী লীগ) চাইতে অনেক বড়। ওরা নিজেরাই বলে মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। এই যে অবস্থা তৈরি করেছে, এই অবস্থার জন্য শেখ হাসিনাকে, তার সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে দলের অবস্থা স্পষ্ট করে মির্জা ফখরুল বলেল, আমাদের কথা খুব স্পষ্ট- অবশ্যই এদেশে একটা নির্বাচন হতে হবে এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের মতামত দেবেন এবং সেই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। যাতে করে জনগণ ভোট দিতে যেতে পারে। যার ভোট যাকে দেবে, যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে- সেই ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এনারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে খুব মতামাতি করছেন। আরে সার্চ কমিটি। কিসের সার্চ কমিটি? এটা আপনার যাকে দেবেন তাকে দিয়ে করবেন তো, যাকে চাইবেন সেই হবে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব সত্য কথা কিছু বলেছেন। এখন তার বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম কথা বলছে এবং মাসনিক রোগী বলছে। মানসিক রোগী তো আপনারা (সরকার) হয়ে বসে আছেন।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ঘর থেকে বের হন না। ওই যে এতো কথা বলেন তাদেরকে ঘর থেকে তো কোনদিন বেরুতে দেখি না। সব দেখি যে- কেউ গণভবনে, কেউ আপনার মন্ত্রীর বাসায়। সব তো ভেতরে বন্ধ হয়ে থেকে সবকিছু ভার্চুয়াল যা কিছু করছেন। তাদেরকে বলব, আসেন, জনগণের সঙ্গে আসেন। একটা ভোট দেন, যে ভোটটাতে সবাই ভোট দিতে পারবে। জনগণের জন্য সেই অবস্থা তৈরি করেন। দেখেন, আপনারা কোথায় থাকেন? পালাবার পখও খুঁজে পাবেন না। টানা ২২ বছর পর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি করা হয়। গত ১২ মার্চ কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এর পাঁচ মাস পর গত ২ সেপ্টেম্বর হাসান জাফির তুহিন-শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করে বিএনপি। কৃষক দলকে গণসংগঠনে রূপ দিতে হবে বলে জানিয়ে কৃষক দলের সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কৃষক দলের সাথে আমি দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম। আমি এই দলের সাবেক নেতা শামসুজ্জামান দুদুসহ অন্যান্য যারা ছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তারা এই কৃষক দলকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেছিলেন। আপনারা যারা নতুন নেতৃত্বে এসেছেন তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক অনেক বেশি। একজন কৃষিবিদ আরেকজন ছাত্র নেতা-প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি। আমরা আশা করবো কৃষকদলকে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা সংগঠনের পরিণত করবেন, গণ সংগঠনের পরিণত করবেন এই নতুন নেতৃবৃন্দ এবং এই দুঃসময়ে কৃষক দলকে সংগঠিত করে জনতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেন আমরা এই ভয়াবহ দানবীয় একটা পাথর আমাদের ওপর চেপে বসেছে তাকে আমরা যেন সরাতে পারি এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা সরকার, জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে পারি।
কৃষকদের উন্নয়নে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন চার দলীয় জোট সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রী। আজকে কৃষকদের এই সরকার সবচেয়ে করুণ অবস্থায় নিয়ে গেছে। একদিেেক ঋণে জর্জরিত, অন্যদিকে ফসলের মূল্য পায় না। কৃষকরা ধান উৎপাদন করে দেখা যায় যে, ধানের মূল্য পাওয়া যায় না। পরে মধ্যস্বত্বভোগীরা সেটাকে বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি করেন। ফলে কী হয়েছে আজকে ৭০ টাকা চালের দাম দাঁড়িয়েছে। অথচ আমাদের কৃষক কিন্তু সেই মূল্য পাচ্ছে না। আজকে প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে কৃষক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মাঠ পর্যায়ে সফর করার জন্য নবগঠিত আংশিক কমিটির নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেন বিএনপি মহাসচিব। কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় এই প্রতিনিধি সম্মেলনে কৃষক দলের নগগঠিত কমিটির হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, গৌতম চক্রবর্তী, টিএস আইয়ুব, মোশাররফ হোসেন, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।