আ. লীগ মানুষের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা চুরমার করে দিয়েছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৭ পিএম, ১২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৪ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার দীর্ঘ ১২ বছর যাবত আমাদের ওপরে অত্যাচার নির্যাতন করছে। শুধু বিএনপি নয়, এদেশের মানুষের ওপরে নির্যাতন করছে। আজকে শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নাই। আওয়ামী লীগের ওপরে কোনো আস্থা নাই। কারণ এরা এই দেশের মানুষের যে স্বপ্ন, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা সবগুলোকে চুরমার করে দিয়েছে। কৃষকদের সংগঠিত করেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় একটা পরীক্ষা। আজকে ভয়াবহ দখলদারি, দানবীয়, অনির্বাচিত একটা সরকার জোর করে বসে আছে। এই দুঃসময়ে কৃষকদের সংগঠিত করে জনতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেন আমরা এই ভয়াবহ দানবীয় একটা পাথর আমাদের ওপর চেপে বসেছে তাকে আমরা যেন সরাতে পারি এবং সত্যিকার অর্থে জনগনের একটা সরকার, জনগনের একটা পার্লামেন্ট, জনগনের একটা রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে পারি।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের প্রতিনিধি সভা উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সময় আসবে। বাংলাদেশের মানুষের সর্বনাশ করার জন্য এদেরকে জনগণ একদিন বিচার করবে। এদেরকে কাঠগড়া দাঁড়াতে হবে। তারা সংবিধানকে কেটে ছিড়ে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশকে একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
এখন আওয়ামী লীগ কোথায় প্রশ্ন করে ফখরুল বলেন, এখনতো আমলা লীগ। যেখানে যাবেন, ডিসি-এসপি-ওসি এরাই হলো বড় সাহেব। আওয়ামী লীগের চাইতে তারা অনেক বড়। তারা নিজেরাই বলে, মাছের রাজা ইলিশ-আর দেশের রাজা পুলিশ। এই যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে এজন্য শেখ হাসিনাকে, তার সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি আবারও সামনে এনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, অবশ্যই এদেশে একটা নির্বাচন হতে হবে এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের মতামত দেবেন।
সেই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। যাতে করে জনগণ ভোট দিতে যেতে পারে। যার ভোট সে দেবে, যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে, সেই ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দিকে ইংগিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এনারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে খুব মতামাতি করছেন। আরে সার্চ কমিটি, কিসের সার্চ কমিটি? এটা আপনার যাকে দেবেন তাকে দিয়ে করবেন তো? যাকে চাইবেন সেই হবে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব সত্য কথা কিছু বলেছেন। এখন তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম কথা বলছে এবং মানসিক রোগী বলছে। মানসিক রোগী তো আপনারা (সরকার) হয়ে বসে আছেন।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ঘর থেকে বের হন না। ওই যে এতো কথা বলেন তাদেরকে ঘর থেকে তো কোনদিন বেরুতে দেখি না। সব দেখি যে- কেউ গণভবনে, কেউ আপনার মন্ত্রীর বাসায়। সব তো ভেতরে বন্ধ হয়ে থেকে সবকিছু ভার্চুয়াল যা কিছু করছেন। তাদেরকে বলব, আসেন, জনগনের সঙ্গে আসেন। একটা ভোট দেন, যে ভোটটাতে সবাই ভোট দিতে পারবে। জনগণের জন্য সেই অবস্থা তৈরি করেন। দেখেন, আপনারা কোথায় থাকেন? পালাবার পখও খুঁজে পাবেন না।
‘কৃষক দলকে গণসংগঠনে রুপ দিতে হবে বলে জানিয়ে কৃষক দলের সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কৃষক দলের সাথে আমি দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম। আমি এই দলের সাবেক নেতা শামসুজ্জামান দুদুসহ অন্যান্য যারা ছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তারা এই কৃষক দলকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেছিলেন। আপনারা যারা নতুন নেতৃত্বে এসেছেন তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক অনেক বেশি। একজন কৃষিবিদ আরেকজন ছাত্র নেতা-প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি। আমরা আশা করবো কৃষকদলকে সত্যিকার অর্থেই জনগনের একটা সংগঠনের পরিণত করবেন, গণ সংগঠনের পরিণত করবেন এই নতুন নেতৃবৃন্দ।
কৃষকদের উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন চার দলীয় জোট সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রী।
বর্তমান সরকার কৃষকদের সবচেয়ে বেশি করুণ অবস্থায় নিয়ে গেছে। কৃষকদের এখন মেরুদণ্ড বলতে যেটা বুঝায় সেটা নেই। একদিকে ঋণে জর্জরিত অন্যদিকে ফসলের মূল্য পায় না। ধান উৎপাদন করে কিন্তু সময়মতো ধানের মূল্য পায় না। পরে মধ্যসত্ত্বভোগীরা বেশি দামে বিক্রি করে। যার ফলে আজকে চালের দাম ৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আজকে প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকে সকালে দেখলাম পেঁয়াজ ৮০ টাকা হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বি হয়ে গেছে।
কৃষি আন্দোলন, কৃষকদের আন্দোলন ছাড়া কখনোই সফল হওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি, এটা কখনোই সফল হবে না, যদি আমরা কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে না পারি। অর্থাৎ কৃষকদের জাগিয়ে তুলতে হবে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মাঠ পর্যায়ে সফর করার জন্য নবগঠিত আংশিক কমিটির নেতাদের নির্দেশ দেন বিএনপি মহাসচিব।
কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক টিএস আইউব, যুগ্ম-সম্পাদক মোশারেফ হোসেন এমপি, দফতর সম্পাদক মো: শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।