পুনরায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ৩০ ডিসেম্বর বিক্ষোভ করবে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৩৪ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
একাদশ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি ৩০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
আজ সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর যৌথভাবে প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠান করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরে নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ১২ ডিসেম্বর ২০২০ সালে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে পূর্বের রাতে ভোট ডাকাতির ও তথাকথিত একটি প্রহসনের কলংকিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রহসনের নির্বাচনে বর্তমান অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার অযোগ্য নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের যোগসাজশে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে ক্ষমতা দখল করে। ভোটাধিকারকে হরণ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ একটি কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মূল চেতনা গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। জনগণের সংবিধানসম্মত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ফ্যাসিবাদ শাসন প্রতিষ্ঠা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও দুর্নীতিকরণে গোট জাতি এখন নির্বাচন কমিশনের অপসারণ চায়। ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের রাষ্ট্রপতির নিকট চিঠি প্রদান সেই সত্যতাই প্রমাণ করেছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সেই কলংকময় কালো দিবসের দ্বিতীয় বছর পূরণ হবে। বাংলাদেশের মানুষ এই দিনটিকে ক্ষোভ ও ঘৃণার সঙ্গেই স্মরণ করে। ২০১৮ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর যৌথভাবে প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠান করবে।
৩। সম্প্রতি ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যার বিস্তারিত জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। চিলাহাটি ও হলদিবাড়ী রেল সংযোগ প্রতিস্থাপিত করা হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাংলাদেশ ভারতের কাছে থেকে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ক্রয় করবে। অনেকেরই ধারণা, ভ্যাকসিন বিক্রির বিষয়টিই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। এই ভার্চুয়াল সংলাপের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন তিনি হতাশ হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে গোটা জাতি হতাশ হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সমস্যগুলোর সমাধান তো হচ্ছেই না অধিকন্তু বাংলাদেশের এই অনির্বাচিত নতজানু সরকার বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের স্বার্থ বাস্তবায়ন করছে। অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে কোনও সমঝোতা হয়নি। বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তির বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিয়ে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনও সমাধান হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিনা বিচারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা করছে। যা বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকারের চরম লংঘন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ। বিনা বিচারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা, বাংলাদেশের মানুষের কাছে কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ১৯৭২ থেকে আজ পর্যন্ত মোট ১৫১০ জন এবং ২০০৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৪৩৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। সভা সীমান্তে হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানায়।
৪। কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণের একটি পরিকল্পনা সরকার প্রকাশ করলেও তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। ভ্যাকসিন সংগ্রহ, তার সংরক্ষণ, পরিবহন এবং বিতরণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করা জরুরি। সংগ্রহকৃত ভ্যাকসিন সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ, দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বিতরণ এবং নীতিমালা সঠিকভাবে পালন করে ভ্যাকসিন গ্রহীতার কাছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ পর্যন্ত একটি ঞবপযহরপধষ বিষয় হওয়ায় ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে কোনও বিলম্ব না করে রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং তা জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে অবহিত করণ, সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পুরো পরিকল্পনা জন সম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজন বলে সভা মনে করে।
৫। সভায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হয় এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে সরকারি দলের ভোট দখলের কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলতে থাকা এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক নির্বাচন পরিচালনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের অধীনে এবং এই সম্পূর্ণ অযোগ্য দুর্নীতিগ্রস্ত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারবে না। তথাপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবিষতেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৬। ভ্রান্তনীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ একটি শিক্ষা প্রতিবন্ধী জাতি হিসাবে পরিণত হতে চলেছে। বৈশ্বিক সূচকে ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্ব নিম্ন হওয়ায় সভায় হতাশা এবং সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করা হয়।
৭। সভা শেষে সভাপতি উপস্থিত সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার মুলতবি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের বক্তব্যটা ভারতের কোনো সরকার বা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য না। আমার দেশের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে বক্তব্য, তাদের জীবনের প্রশ্নে আমাদের বক্তব্য। এটা সবাই করছেন, দীর্ঘকাল ধরে করছেন। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সেগুলো তুলেছে।
তিনি বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে যে, যদি কেউ অপরাধ করে আইন আছে। ভারতেও আইন আছে। যদি কেউ ইললিগ্যাল ডেসপাস করে তাহলে তার ফরটেন ফরেন এ্যাক্টে বিচার হবে। যেটার মাধ্যমে এখনো তারা আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ সাহেবকে ওইভাবে আটকিয়ে রেখেছে। এখন উনি মুক্ত নন কারণ পুরোপুরি আটকানো আছেন। এখন পর্যন্ত তারা ওই মামলারও নিষ্পত্তি করেননি। সেই আইনে তো সীমান্তে যে বেআইনিভাবে প্রবেশ করছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিতে পারেন, আমাদের সরকার তাদের বিচার করতে পারে। এই বিষয়গুলো সমাধান হওয়া দরকার। একটা পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটা মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠা খুব জরুরি। কারণ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম জাতি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে যে, এই ধরনের মানসিকতা থেকে আমরা যেটা আশঙ্কা করছি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আজ সোমবার সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি সারাদেশে মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পোশাক পরিধান করেছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেনি। সেখানে বলা হচ্ছে যে, এই সমস্যার ব্যাপারে আমাদের প্রতিবেদশী দেশগুলো তারা আমাদেরকেই সমর্থন করছে। ভারতের কথা বলা হয়েছে। গতকাল দেখলাম তাদের (ভারত) হাইকমিশনার তিনি বলছেন যে, এটা (রোহিঙ্গা প্রশ্নে) আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করছি, নীরবে থেকে করছি এজন্য যে, তাতে আমাদের বিভিন্ন রকম ম্যান্যুপুলেশন করতে সুবিধা হয় বাংলাদেশের স্বার্থেই । জানি না আমরা। আজকে বাংলাদেশ তার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে কোনো কথা বলবে না। ভারত নীবর থাকবে, চীন উল্টো ভেটো দেবে। আর বলা হবে যে, চমৎকার পররাষ্ট্রনীতি আমরা গ্রহণ করছি, অত্যন্ত সুন্দর পররাষ্ট্রনীতি। সব কিছুর মূলে একটাই, সেটা হচ্ছে- তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রের সমস্ত স্বার্থগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে এই ধরনের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সীমান্তে হত্যাকান্ডের বিষয়ে ভারতের দিক থেকে বলা হয় যে, যারা চোরাকারবারি তারা ভারতবর্ষে প্রবেশ করলে তাদেরকে বারণ করার পরেও যখন হয় না, তখন গুলি করতে হয়। আমাদের বিজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি ইতিমধ্যে প্রচুর তার প্রাজ্ঞতা ও তার বিজ্ঞের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি গত ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বললেন তখনকার বৈঠকের পর তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বললেন যে, তিনি হতাশ হয়েছেন। আজকে ডেইলি স্টারে তার একটা বড় ইন্টারভিউ প্রকাশ হয়েছে। এটা পড়ে আমার সন্দেহ লেগেছে- তিনি আসলে কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি কি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পুরো ইন্টারভিউর মধ্যে তিনি ভারতকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্যটা ভারতের কোনো সরকার বা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য না। আমার দেশের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে বক্তব্য, তাদের জীবনের প্রশ্নে আমাদের বক্তব্য। এটা সবাই করছেন, দীর্ঘকাল ধরে করছেন। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সেগুলো তুলেছে। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, এবার কি সামিটে এটা উত্থাপন করা হয়েছিলো? তিনি উত্তর দিয়ে বলছেন যে, আমরা ভারত সরকারকে এই কথা বার বার বলে বিব্রত করতে চাই না। আমাদের মধ্যে এতো চমৎকার সম্পর্ক, এতো ভালো সম্পর্ক সেই সম্পর্ক আমরা নষ্ট করতে চাই না। এই বিষয়টা (সীমান্ত হত্যাকান্ড) নিয়ে তারা কথা বলারও এখন আর প্রয়োজনবোধ করছেন না সেটা তিনি (পররাষ্ট্র) ইন্টারভিউতে বুঝাতে চেয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে এতে আশ্বস্ত হই। এটা ভালো কথা। এটা আমাদের জনগণকে একটা নিরাপদ বোধ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কিন্তু ভারতের সাথে বন্ধুত্ব প্রমাণ করবো কি করে? প্রমাণ কী ভারতের সমস্ত চাহিদা সেগুলো মেটাব আর আমার যে সমস্যাগুলো সেই সমস্যার একটাও মিটবে না। পানির সমস্যা আমাদের জীবন মরণের, জীবন-জীবিকার সমস্যা। বার বার শুনছি যে, এই সমস্যার সমাধান হবে কিন্তু হচ্ছে না। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার যে, তাদের তিস্তা নদীর পানির হিস্সা না পেয়েও আমরা কিন্তু ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছি। আপনারা জানেন যে, ১৫৪টা অভিন্ন নদী রয়েছে। ভারত প্রত্যেকটা নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে দিয়েছে এবং আমাদের সাথে কোনো আলোচনা না করেই।
তিনি বলেন, প্রশ্নটা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ ছোট দেশ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশের মানুষ একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা উন্নয়নের জন্য গলা ফাটিয়ে কথা বলছি। আমার যে ন্যূনতম যে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, আমার জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষা করার যে দায়িত্ব সেই সম্পর্কে উদাসীন থাকছি। অথবা সেই জায়গায় প্রতিবেশীর কাছে মাথা নোয়াচ্ছি। আমাদের প্রশ্নটা ওই জায়গায়। আমরা ভারতকে দোষ দিতে চাই না, ভারতকে ব্লেইম করতে চাই না বা ভারত সরকারকেও ব্লেইম করতে চাই না। আমাদের সরকার বলে যারা দাবি করেন যে, সবসময় তারা বলে যে, তারা কোনো মতেই কখনোই বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেন না, বাংলাদেশের স্বার্থের মধ্যে তারা কাজ করেন। তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন। আজকে কোন বাংলাদেশের স্বার্থে আপনারা সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে কোনো রকম কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না, কোন বাংলাদেশের স্বার্থে আপনারা এখন পর্যন্ত অভিন্ন নদীগুলোর হিস্সার ব্যাপারে কোনো চুক্তি করতে পারছেন না।
দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে আনীত শোকজের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের দেয়া বক্তব্য ‘ভূতের মুখে রাম রাম’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমার খুব দুঃখ হয় যখন দেখি যে, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তারা বলছেন যে, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তারই এটা (হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদ শোকজ) প্রমাণ। ভূতের মুখে রাম রাম। আপনারা (আওয়ামী লীগ) দেশের গণতন্ত্রই খেয়ে ফেলেছেন, মানুষের অধিকারগুলো খেয়ে ফেলেছেন। আর আপনার অন্যের গণতন্ত্র দেখে বেড়াচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল দাবি করে বলেন, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র আছে বলেই তো বিএনপি এখন পর্যন্ত এতো অটুট আছে, একেবারে সুদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ আছে। এই সরকার চরমভাবে গণতন্ত্রকে যে হত্যা করছে, গণতন্ত্রের পরিবেশকে একেবারে বিনষ্ট করে ফেলেছে এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সকল আয়োজন করে ফেলেছে। শুধু ছদ্মবেশটা আছে। সেই ছদ্মবেশ নিয়ে তারা কথা বলছে, সমানে কথা বলছেন যে, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যে, এতো দিন পরে তারা জনগণের যে মূল কথা সেটা নিয়ে এসেছেন, কথা বলেছেন। তাদের যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব তারা পালন করেছেন। আমি মনে করি, এটাকে সমস্ত বুদ্ধিজীবী যারা আছেন তাদের সমর্থন করা উচিত। ইটস নট ফর বিএনপি, নট ফর পলিটিক্যাল পার্টি। এটা দেশের জন্য, জাতির জন্য প্রয়োজন। যে একটা নির্বাচন কমিশন তারা চুরি করে, তারা টাকা চুরি করে। এসব উঠে এসেছে। এ একথাগুলো আমরা নির্বাচন কমিশনের গঠনের সময় থেকে বলে আসছি। ৪২ বিবৃতিদাতার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তো বলি, চোর কি কখনো স্বীকার করে যে, আমি চুরি করেছি। ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের দেয়া বিবৃতি নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ৪২ জন নাগরিক যে বিবৃতি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের বিজ্ঞ তথ্যমন্ত্রী মহোদয় তিনি বলেছেন যে, এটা বিএনপির অফিসে ড্রাফট হয়েছে। যা একজন মানুষও বিশ্বাস করে না। যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা একজনও বিএনপি করেন না। বরঞ্চ বিভিন্ন সময়ে তারা বিএনপির সমালোচনা করেছেন। প্রকৃত সত্য যখনই সামনে আসে এবং জনগণ যখন সত্য কথা বলতে চায়, নাগরিকরা সত্য কথা বলতে চায় তখনই আপনারা তাদের বিএনপি বানিয়ে ফেলেন। এটা হচ্ছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার আরেক জঘন্যতম কৌশল।
দুই ভাইস চেয়ারম্যানের শোকজ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সবাই দলে আছেন। কোথাও যাওয়ার কোনো সমস্যা তো হয়নি। সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি, সেই ধরনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিএনপি এখনো অত্যন্ত সুসংগঠিত আছে। একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে বিএনপি একটা বৃহৎ দল। এই ধরনের উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে ছোট-খাটো দুই একটা ঘটনা কোনো ঘটনাই নয়। এটাকে এতো বড় করে যারা দেখছেন তারা আমার মনে হয় ঠিকভাবে দেখছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনার (মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ) বিষয়ে আমরা কি পাল্টা কিছু বলেছি। ওনার বক্তব্যে উনি যা বলেছেন, তা আমি দেখেছি। দলের যে বিধান আছে, স্থায়ী কমিটির এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটা রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্য়ায়ের নেতা নিঃসন্দেহে এই বিষয়টি প্রেসের কাছে আসবেই, আপনারা কনসার্ন হবেন। ভারতে ২২ জন্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ওপেন চিঠি দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধীকে। কৈ তারা তো কেউ বহিষ্কার হননি। দ্যাট ইজ দ্যা প্রাকটিস অব ডেমোক্রেটিক পার্টি। কখনো হবে, কখনো হবে না-এটা নিয়ে এতো মাথা ব্যথার কোনো কারণ নেই।
মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদের লিখিত জবাবে বিভিন্ন অভিযোগ ও সুপারিশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ব্যাপারে আমরা এখনো আলোচনা করিনি এবং কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার আগে আপনারা এমন লাফালাফি করছেন মনে হয় যেন সব কিছু চলে যাচ্ছে, এটাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র তো ধবংস করেই ফেলে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই বিষয়ে কিন্তু একটা কথাও গণমাধ্যমের কোথা বলা হয় না, কোথাও দেখি না। তারা (আওয়ামী লীগ) যখন প্রেস কনফারেন্স করে তাদেরকে কি একবারও জিজ্ঞাসা করেন আপনি এটা কেনো করলেন। দ্যাট ইজ দ্যা পয়েন্ট। দেশে এমন একটা ত্রাসের বা ভয়ের পরিবেশে তৈরি করেছে আপনারা যারা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে চান তারা করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) মেজর হাফিজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে, তারা তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করেছে, তারা তার বিরুদ্ধে বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেয়ার মামলা করেছে। একটা নয় ১০টা মামলা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মুখে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কথা বলা শোভা পায় না। কোন মুক্তিযোদ্ধাকে তারা সম্মান দিয়েছেন? তারা কি জিয়াউর রহমানকে সম্মান দিয়েছেন? তারা কি তাজউদ্দিন আহমদ (বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী) সাহেবকে সম্মান দিয়েছেন? তারা দেননি। তারা কি এমএজি ওসমানি (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক)-এর নাম একবারও স্মরণ করেন। একে খন্দকার সাহেবকে বের করে দিয়েছেন, এখন উনি মূক-বধির হয়ে গেছেন, একেবারে কথা বলা বন্ধ, চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেছে ওনার। এটা আমি কয়েকটা বললাম। আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের বিরুদ্ধে ৮৬টা মামলা।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের একজন। কারণ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে যেদিন জিয়াউর রহমান সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তারপর থেকে উনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দুইটা শিশুকে নিয়ে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। তারপরে কারাভোগ করেছেন এখনো। দেশনেত্রীকে সরকার কি করেছেন আপনারা দেখছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা দায়েরের কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।