মন্ত্রী-এমপিদের ‘বাক্যদূষণ’ প্রায় মহামারীর পর্যায়ে - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৪ পিএম, ৮ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৮ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
জনগণের ঘাড়ের ওপর দৈত্যের মতো চেপে বসা নিশুতি সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ‘বাক্যদূষণ’ ইদানীং প্রায় মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ শুক্রবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, সরকার বেপরোয়া দুর্নীতি -দু:শাসন- গুম- খুন- লুটপাট আর অর্থ পাচার করতে করতে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তাদের নেত্রীকে তুষ্ট করতে, একটু কৃপার লোভে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অশোভন সন্ত্রাসী ভাষায় বক্তব্য বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে সীমা লংঘন করে চলেছেন।
তিনি বলেন, বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- ‘গোড়ায় গলদ’। নিশিরাতের গর্ভে জন্ম নেয়া এই সরকারেরও গোড়ায় গলদ আছে। রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোট ডাকাতি করে জন্ম নেয়ায় সরকারকে ঘিরে রয়েছে লুটেরা, চোর, ডাকাত, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও চাপাবাজ গোষ্ঠী।
রিজভী বলেন, নিশিরাতের এই সরকারের দিবানিদ্রায় থাকার জন্য বেয়াদবি, মিথ্যাচার আর অপপ্রচারে তারা মজ্জাগত হয়ে পড়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়েও এমপি, মন্ত্রী হওয়ায় এদের অনেকেই রাজনীতি বোঝেনা। বোঝেনা শিষ্টাচার, ভদ্রতা, ভব্যতা, আচার আচরণ ও কথাবার্তা।
তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কেবল মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পক্ষেই সম্ভব। রাতে ব্যালটে সীলমারা অটো ভোটের বিতর্কিত এই প্রতিমন্ত্রী সন্ত্রাসীদের মতো কুৎসা গাইছেন। ভোট ডাকাতদের মুখেই এধরণের কথা মানায়। ক্ষমতার সুখে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে এখন ‘কাকস্য পরিবেদনা’র মধ্যে রয়েছেন।
রিজভী বলেন, সরকারের এই বক্তব্য যারা শুনেছেন তারা হতবাক হয়ে গেছেন। এটা কি কোন সভ্য দেশের মন্ত্রীর মুখের ভাষা হতে পারে? মনে হয়েছে গলির সন্ত্রাসী মাস্তানের হুংকার। বস্তির অশিক্ষিত বোহেমিয়ান গালিবাজদের খিস্তি। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, এই ধরনের লোকরাও এখন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন।
তিনি বলেন, একজন মন্ত্রীর কথা-বার্তায় শালীনতা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ রাতের আঁধারে তারা ভোট চুরি করে হোক আর লুট করে হোক মন্ত্রী হয়ে গেছেন। তাদের কাছে নতুন প্রজন্মের নাগরিকরা শালীন ও শিষ্টাচার, উদাহরণমুলক আচরণ, কথাবার্তা শুনতে চায়, দেখতে চায়। কিন্তু তাদের এ কেমন আচরণ, কথাবার্তা গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরো বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এর আগে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু ৫ মাসও টিকতে পারেননি সেখানে। চিকিৎসকদের নিয়ে অসংলগ্ন, অশোভন ও বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে তাদের দলীয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএম) আন্দোলনের মুখে তার পলায়নপর অবস্থার সৃষ্টি হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একদিন আগে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। দেশে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি সবাইকে নিয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে স্বীকার করে নিলেন তাদের অধীনে অতীতের সকল নির্বাচনে সরকার হস্তক্ষেপ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভোট ডাকাতির জনক হলো আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্র হত্যাকারী হলো আওয়ামী লীগ। এই দলের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে সকল নির্বাচন হয়েছে ফেনী স্টাইলে। কেন্দ্র দখল করে জালভোটের উৎসব করে আওয়ামী লীগ, দিনের ভোট রাতে করে করে আওয়ামী লীগ, বিনা ভোটে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ, তারই ধারাবাহিকতা আজও বহমান। এখন বাংলাদেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাসনে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে তারা।
রিজভী বলেন, তাই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার লাগবে। আইন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ভোটারদের আস্থা ফেরাতে হলে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিতাড়িত করতে হবে। পরিস্কার করে বলতে চাই-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোন জাতীয় নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দিবে না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে নেমে এ সরকারকে হটিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই। আর সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার যদি কোন কথা না শোনে তাহলে রাজপথেই হবে চুড়ান্ত ফয়সালা।
এ সময় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাজিব আহসান এবং বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ সকল রাজবন্দীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানায় রিজভী।