মাদকসেবীর যে সম্মান রাজনীতিবিদদেরও সেটা নেই - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৪ এএম, ৩ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫১ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
বর্তমান সরকার রাজনীতির সকল শিষ্টাচার ভঙ্গ করেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাকশালের গুহা থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন।
আজ শনিবার বিকেলে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না রচিত “কারাগারে বাইশ মাস” শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক প্রকাশ। এসএমএ কবীর হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, বইয়ের লেখক মাহমুদুর রহমান মান্না, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের ডাঃ জাহেদ উর রহমান, শাকিলউজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব মোঃ আবদুর রহিম, ওমর ফারুক পাটোয়ারী, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত মো: আবুল হাসানসহ নাগরিক ঐক্যের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের কারাগারে জীবন ও সেখানকার নিত্যদিনের ঘটনাসমূহ মান্নার বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। কিংবদন্তি ছাত্রনেতা হিসেবে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্নার লেখা বইটিতে নানা ঘটনার সমাহার ঘটেছে। আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট সেই সংকটে মান্নার যে ভূমিকা রাখতেন সেই ভূমিকা দমন করতেই মান্নাকে আটক করা হয়েছিল। যা সাংঘাতিক নিপীড়ন। জেলখানায় চোর ডাকাতসহ নানা ধরনের লোক আছে। সেখানে আমাদের মতো রাজনীতিবিদদের রাখা হয় তাদের সাথে। এটা কি নিপীড়ন নয়?
তিনি বলেন, রাজনীতিতে একটা শৃঙ্খলা ও সম্মানবোধ ছিলো। কিন্তু এই সরকার সকল শৃঙ্খলা ও নিয়ম নষ্ট করে ফেলেছে। এখন মাদকসেবীর যে সম্মান রাজনীতিবিদদের সেটা নেই। মান্নার সাথে যেমন আচরণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিদারুণ, নিষ্ঠুর এবং নিন্দনীয়। দেশে কেবল ভিন্নমতের রাজনীতিবিদদের নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ উন্নত রাষ্ট্রে কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। আর বাংলাদেশের কারাগারের ভয়ংকর পৈশাচিক রূপ। তারা এতোটা ভীতু যে, কারাগারের ভেতরে পড়ার জন্য বইও নিতে দেয় না। আমি কারাগারে থাকাকালে বিখ্যাত লেখক দস্তয়ভস্কির “ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” শীর্ষক বইটি নিতে দেয়নি। মান্না ভাই যে বই লিখেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। লেখকের যে অন্তর্দৃষ্টি সেটা প্রতিফলিত হয়েছে তার বইয়ে।
রিজভী বলেন, তবে বইয়ের ভেতরে জিয়াউর রহমান ও স্বৈরাচার এরশাদকে নিয়ে যে তুলনা করা হয়েছে এটা ঠিক নয়। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ কখনোই এক হতে পারে না। কারণ জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার। তিনি জীবনের ঝুঁকি মোকাবিলা করে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে দেশের সকল উন্নয়নের রূপকার। বাকশালের গুহা থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন জিয়াউর রহমান। সুতরাং দেশ রক্ষা ও দেশের উন্নয়নে তার ভূমিকা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, কোনো দেশের সরকার কর্তৃত্ববাদী হলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ধাপে ধাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একটা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র গড়ে তোলে। আমরাও ধাপে ধাপে সেদিকেই এগোচ্ছি। এই নিয়ে আমি এখন খুবই আতংকিত। অবশ্য এসব বিএনপিই শুরু করেছিলো। “অপারেশন ক্লিনহার্ট”, “যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন-২০০৩”। এসব তো ওই সময়ই হয়েছিলো। এগুলো ধাপে ধাপে বাড়তে বাড়তে আজকের অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনে বলা আছে- ফোনে আড়িপাতা যাবে না। তবে ৯৭-ক ধারায় এ নিয়ে নির্দেশনা আছে। পরের ক্লজে বলা আছে- কেবল সরকার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আড়িপাতার অনুমতি দিতে পারে। সেটাও হতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরে। কিন্তু সেটা কি ফলো করা হয়েছে বা হচ্ছে? আইনে তো অনেক ভালো ও সুন্দর কথা বলা আছে। অর্থাৎ আড়িপাতা ব্যক্তির কথা বলাকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না। অতএব মান্না ও সাদেক হোসেন খোকার টেলিকথোপকথন ফাঁস হওয়া নিয়ে যে মামলা তা ভিত্তিহীন। আজকে একটা মামলায় জামিন করাতে গিয়ে কতো মানুষ যে নিঃস্ব ও ফতুর হচ্ছে তার যেন শেষ নেই। এ বিষয়ে আদালত কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বলা হচ্ছে জিয়াউর রহমানকে ওই মামলার আসামি করা হতো। অথচ ঘটনা ’৭৫ সালের, আরেকটা ’৮১ সালের। এটা যে কতোটা এবসার্ড বা অযৌক্তিক? একেবারেই উল্টাপাল্টা কথা।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে দেশের মানুষের তো নিরাপত্তা নেই। সেইসাথে দেশেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। এটা একটা জালিম রাষ্ট্র। মানুষের জন্য শাসকদের কোনো দরদ নেই। নির্যাতনের মাত্রা এমন যে ধরে নিয়ে পায়ে গুলি করে দেয়। এরপর স্প্রে করে যেন ওই পা ভালো না হয়। মূলত কারাগারে ভেতরে আর বাংলাদেশের ভেতরে একই অবস্থা। যার প্রমাণ খালেদা জিয়া। তিনি কি মুক্ত নাকি বন্দি? শুধু কারাগারের ভেতরে দুর্নীতি হয় তা নয় কারাগারের বাইরে আরো বেশি দুর্নীতি হয়। আজকে চিকিৎসা ব্যবস্থা এতো খারাপ যে, মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ত্রাহি অবস্থা। আজকে দেশের সকল মানুষ চিৎকার করছে তাদের স্বাধীনতার জন্য। আর কেউ কেউ বিমান চার্টার্ড করে হেলসিংকি হয়ে নিউইয়র্ক যায়। এই হলো আমার দেশ। মান্না বলেন, আমরা চাই একটি মানবিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র। আমরা সেই কল্যাণের রাজনীতি করি।