দেশবরেণ্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. মোশাররফ হোসেনের ৭৬তম জন্মদিন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৮ পিএম, ১ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪৬ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আজ শুক্রবার (১ অক্টোবর) দেশবরেণ্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের বীর সংগঠক ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৭৬তম জন্মদিন।
তিনি ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, প্রথিতযশা ভূ-বিজ্ঞানী, খ্যাতিমান লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক।
ড. মোশাররফ কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইস্কুল থেকে ’৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ’৬৪ সালে আইএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ’৬৮ সালে এমএসসি, ’৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে এমএসসি, ’৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা এবং ’৭৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ’৭৫ সালে বিলাত থেকে দেশে ফিরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ’৮৭ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মজীবনে ড. মোশাররফের অর্জনের ভান্ডার বিশাল। দেশ ও জনগণের কল্যাণে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি উন্নয়ন ভাবনার একজন আলোকিত রাজনীতিক। ছাত্র জীবনেই তার মেধা, মানবিক গুণাবলী ও নেতৃত্বের অসম যোগ্যতা আলোর দ্যুতির ন্যায় দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ড. মোশাররফ ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এজিএস এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ভিপি নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য তিনি ’৭১ সালে বিলাত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। জাতীয় স্বার্থরক্ষার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি নায়কোচিত ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলায় ড. মোশাররফ ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ বছর কারান্তরীণ ছিলেন।
’৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ঢাবির মেধাবী শিক্ষক ড. মোশাররফ বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ’৯৪ সাল থেকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ড. মোশাররফ কুমিল্লা-২ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি ’৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী, ’৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী হিসাবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. মোশাররফ দাউদকান্দির উত্তরাঞ্চলে ‘তিতাস’ নামে একটি নতুন উপজেলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবহেলিত জনপদকে করেছেন আলোকিত। উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মোশাররফ দাউদকান্দিকে পৌরসভায় উন্নীত, বিশাল পৌরভবন নির্মাণ এবং নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত ড. মোশাররফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এলাকায় ২টি কলেজ, ২টি হাইস্কুল, ১টি গার্লস হাইস্কুল, ১টি দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ড. মোশাররফ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেন। তিনি এলাকার ৩ সহস্রাধিক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীকে চাকরি দিয়েছেন। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি ‘দাউদকান্দি সেতু’ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
২০০৩ সালে ড. মোশাররফ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সভাপতিত্বে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড. মোশাররফকে ''World no tobacco award-2004'' পদকে ভূষিত করেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষ: দাউদকান্দি মডেল', ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘এই সময়ের কিছু কথা’, ‘ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’, ‘রাজনীতির হালচাল’, ‘সময়ের ভাবনা’, ‘জরুরি আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭ ও ২০০৮)’ ‘মূল্যবোধ অবক্ষয়ের খণ্ডচিত্র’, ‘প্রগতি ও সত্যের সন্ধানে’ এবং ‘করোনাকালে বাংলাদেশ: সংক্রমণের দশ মাস’ নামের ১১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
আরো ৩টি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি দেশ ও জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখেন। তিনি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।