কুলাউড়ায় দানবাক্সের টাকা লুট; হাতেনাতে ধরা খেলেন যুবলীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৮ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:২২ এএম, ২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কাঠ পাচারের ঘটনায় জড়িত যুবলীগ নেতা সুফিয়ান আহমদ (৩৫) মাজারের দানবাক্স ভেঙে টাকা নেয়ার চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা খেয়ে জেল হাজতে গেলেন।
গতকাল বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার সদর ইউনিযয়নের রেহেনা চা-বাগান এলাকার হযরত শাহ সুন্দর (রহঃ) (আদাআদির) মাজারে ঘটনাটি ঘটে। এসময় দানবাক্স ভেঙে টাকা নেয়ার চেষ্টাকালে স্থানীয় বাগানের শ্রমিকরা যুবলীগের এই নেতাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এর আগে গত শুক্রবার কুলাউড়ার গাজীপুর বিটের আওতাধীন হারারগজ রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে পিকভ্যানে করে ২৩ ঘনফুট কাঠ পাচারকালে হাতেনাতে ধরা খেয়েও বন বিভাগের মামলায় তার নাম দেওয়া হয়নি।
চা-বাগান কর্তৃপক্ষ, বাগানের শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুফিয়ান এক বাগান কর্তৃপক্ষ ও মাজার কমিটি তাঁকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেন। এর পরও সুফিয়ান মাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালান। বুধবার বিকেলের দিকে সুফিয়ান প্রথম দফায় মাজারে গিয়ে জোরপূর্বক দানবাক্সের তালা ভাঙার চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে বাগানের কয়েকজন শ্রমিক ছুটে গিয়ে তাঁকে বাধা দেন। এসময় তিনি তাঁদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যান। পরে সন্ধ্যার দিকে সুফিয়ান তার লোকজনদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ আবারও সেখানে গিয়ে দানবাক্সের তালা ভেঙে টাকা নেওয়ার চেষ্টা চালান। এসময় বাগানের শ্রমিকেরা পাগলা ঘন্টি বাজালে বাগানের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে তাঁকে আটকিয়ে পিটুনি দেন। এর পর তাঁকে বাগানের ভেতর আটকে রাখা রেখে পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হয়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুলাউড়া থানার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। পরে সুফিয়ানকে তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুফিয়ানের বাড়ি উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের দানাপুর গ্রামে। তিনি কুলাউড়া পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। সুফিয়ান পৌর শহরের লস্করপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ফার্ণিচার ব্যবসার করে আসছেন। পৌর যুবলীগের পদ পাওয়ার পর থেকে প্রভাব খাটিয়ে ফার্ণিচার ব্যবসার জন্য হারারগজ রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে বিভিন্ন সময় কাঠ পাচার করে আসছে। এবং স্থানীয় রেহানা চা-বাগানের ভেতর অবস্থিত আদাআদির মাজারে খাদেম পরিচয়ে, কখনো সেক্রেটারি কখনো কোষাধ্যক্ষ পরিচয়ে মাজারের দানবাক্সের টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।
রেহেনা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, সুফিয়ান জোর করে মাজারের দানবাক্স ভেঙে টাকা নেওয়ার চেষ্টা চালান। হুমকি-ধামকি দেওয়ায় বাগানের শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে মারধর করে আটকে রাখেন। এ ব্যাপারে বাগানের মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। সুফিয়ানকে ৫৪ ধারায় প্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, দলীয় পদ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে সুফিয়ান অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলো।