চবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত- ৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫২ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে চারজন আহত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের উপপক্ষ ‘বিজয়’-এর নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ান।
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন সংস্কৃতি বিভাগের মো. মুজাহিদ, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির আহমেদ, আরবি বিভাগের সাহিল কবির ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জাহিদ চৌধুরী।
ছাত্রলীগ, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কুপিয়ে জাহিদকে আহত করা হয়। মুজাহিদের হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে। এ দুজন প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। পরে তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত বাকি দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, কিছুদিন ধরে বিজয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াস ও অর্থ সম্পাদক জাহেদুল আওয়াল। তবে বিজয়ের কর্মীদের একটি অংশ তাঁদের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা আনেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় পক্ষ-বিপক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, গতকাল রাতে আলাওল হলে ছিলেন বিজয়ের একাংশের জাহিদ চৌধুরী। বিজয়ের অপর অংশের কর্মীরা সেখানে গিয়ে জাহিদকে মারধর করেন। খবর পেয়ে মুজাহিদ বেশ কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে আলাওল হলে যান। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষকালে জাহিদ ও মুজাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে কর্মীরা তাঁদের দুজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। আর প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে দুই অংশের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত দুটি পক্ষে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্য পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। ২টি পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত।
শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীর মধ্যে রয়েছে চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার ও বিজয়। আর সাবেক সিটি মেয়রের অনুসারীরা হলো সিক্সটি নাইন, ভার্সিটি এক্সপ্রেস, উল্কা, বাংলার মুখ, কনকর্ড প্রভৃতি। এসব উপপক্ষের মধ্যে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ-মারামারির ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, ‘বিজয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিয়েছে। গতকাল রাতের ঘটনা তার প্রমাণ। নিজেরাই নিজেদের কর্মীদের কুপিয়ে জখম করেছে। যাঁরা এসব ঘটনায় জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
বিজয়ের নেতা ইলিয়াছ বলেন, ‘জাহিদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মুজাহিদ শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বিভিন্ন সময় সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। তাই গতকাল রাতে তাঁকে ট্রিট দেওয়া হয়েছে। যে-ই ছাত্রলীগের মধ্যে থেকে শিবিরের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, তাঁকেই হিট করা হবে।’
ইলিয়াছ বিরোধী অংশের কর্মী আল আমিন বলেন, ‘বিজয়ের নেতা-কর্মীরা দুই অংশে ভাগ হয়ে গেছে। এ কারণেই মূলত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল রাতের অন্ধকারে জাহিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। মুজাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এটি হয়েছে ইলিয়াছ ও জাহেদুলের নির্দেশে। এ ঘটনার বিচার চাই।’ বিজয়ের নেতা-কর্মীদের দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইলিয়াছ।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সমস্যা হয়েছিল। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।