দেশব্যাপী বিএনপির কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ ধারণ
আজ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত একটি ভয়ঙ্কর বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে-রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০২:৫০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ/কালো পোশাক পরিধান করবে।
সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির একদিন আগে গতকাল শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন ‘বন্ধনের সোনালি অধ্যায়’ রচনা করতে ভার্চুয়াল আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তখন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি নিরীহ দরিদ্র যুবক জাহিদুল ইসলামের লাশ পড়েছিল কাঁটাতারের নিচে। সামিট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন নির্লজ্জভাবে বলেছেন, সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্টু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ভয়ে ওদের গুলি করে। কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে ইন্ডিয়ার গুলি খেয়ে মারা যায়, তার জন্য দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না। যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষদেরকে হত্যা করারই ন্যায্যতা দান করছে। এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী। সুতরাং সীমান্ত হত্যার দায় বাংলাদেশ সরকারও এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, নতজানু মিডনাইট অটো সরকারের মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রী নন, তারা অন্য কোন দেশের প্রতিনিধি। বর্তমান আওয়ামী সরকারে হরেক কিসিমের ক্রীতদাস ও মোসাহেবে পরিপূর্ণ। বাস্তবে এই সরকারের হাতে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির মৃত্যু ঘটেছে। তারা শুধুমাত্র অবৈধভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রভুদের তোষামোদীতেই ব্যস্ত। ফলে জনগণের জানমাল ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নিজেদের ক্ষমতাকেই আগলে রাখাকেই বড় কাজ বলে মনে করছে। বিএসএফের নির্বিচারে বাংলাদেশি হত্যার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ তো দূরের কথা, মৌখিক কড়া প্রতিবাদ জানাতেও আমরা কখনো দেখিনি। এটা কেবলমাত্র গভীর বেদনাদায়ক, লজ্জার ও নিন্দনীয়ই নয়, বরং আওয়ামী সরকারের ভ্রষ্টাচার, ক্ষমতালোলুপতারই মনোবৃত্তি। সে কারণেই সরকারের মন্ত্রীরা নিজের জনগণের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার ও প্রতিবেশী দেশের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা করতে প্ররোচিত করছেন। জনসমর্থনহীন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই বিএসএফ এমন দুঃসাহস দেখাতে পারছে। সীমান্ত হত্যাকান্ড নিয়ে নিশিরাতের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাহেবের মন্তব্য দেখে শুনে মনে পড়ছে মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম রচিত ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার দুটি লাইন, ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জানতে ইচ্ছে করছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন কি স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নাকি বাংলাদেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি? বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে বিজয়ের দিনেও সীমান্তে মানুষ হত্যা করা হয়! বিজয়ের মাসে, এমনকি বিজয় দিবসে সীমান্তে মানুষ মারা যাওয়ার পরও যে মন্ত্রীর কোনো বিকার নেই, এরা আত্মা বিক্রি করেছেন বলেই সীমান্তে বাংলাদেশিদেরকে হত্যায় বিএসএফের পক্ষে নির্লজ্জ সাফাই গাইছেন। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফ সীমান্তে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিলো বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীর লাশ। সেই বর্বর দৃশ্য আজও দেশের মানুষকে ব্যথিত করে। প্রতিটি দেশপ্রেমিকের হৃদয়ে আজও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দেশের জনগণ আশা করেছিল, ফেলানী হত্যার বিচার হবে। সীমান্তে হত্যাকান্ড কমে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেই। আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্যমতে, এই সরকারের গত ১২ বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ শত বাংলাদেশিকে সীমান্তে হত্যা করেছে বিএসএফ। এই করোনার মধ্যেও গত প্রায় এক বছরে প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হাতে খুন হয়েছে ৪৫ জন বাংলাদেশি। এছাড়াও সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড ও নদীতে প্রায়ই বাংলাদেশির রহস্যজনক লাশ পাওয়ার ঘটনা খবরে আসে। সীমান্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় বর্ডার গার্ডের তরফ থেকে পতাকা বৈঠক করে লাশ গ্রহণ ছাড়া ভরসা রাখার মতো কোনো তৎপরতাই এখন চোখে পড়ে না। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সীমান্তে বাংলাদেশিদেরকে পাইকারী হারে খুন করে যাবে, অথচ শুধু চুপচাপ নয়, বাংলাদেশ সরকার বরং বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার বৈধতা দিচ্ছে। ভোটারবিহীন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে রক্তাক্ত সীমান্ত এখন বাংলাদেশের সীমান্ত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা এখন দক্ষিণ এশিয়ার একটি ভয়ঙ্কর বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, তামাম দুনিয়ায় এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার নজির নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেই এর সমর্থন নেই। সীমান্ত হত্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ যারা এসব ঘটাচ্ছে, তারা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। বিএসএফ আত্মরক্ষার কথা বললেও অস্ত্র হাতে কোনো বাংলাদেশি মারা যাওয়ার নজির নেই। অথবা এ বিষয়ে ভারত কখনোই অভিযোগ করেনি বাংলাদেশের নিকট। কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে থাকলে তাকে আইনের আওতায় নেয়া হোক। গুলি করে মারার এখতিয়ার কারও নেই। বিএসএফের বিতর্কিত শ্যুট-অন-সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বহাল আছে, যার প্রেক্ষিতে বিএসএফ বিনা কারণে বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করতে পারে। কারণ সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধে বর্তমানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা নেই। দেশের জনগণ মনে করে, ১৯৬৮ সালে আইয়ুব-মোনেমের ছাত্র সংগঠন এনএসএফের নেতা আব্দুল মোমেন এখন নিজের মন্ত্রিত্ব রক্ষায় সরকারকে খুশি করতে বাংলাদেশের মর্যাদা নিয়েই টান দিয়েছে। নিশিরাতে বিনাভোটে এমপি হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে প্রথমেই বিশ্বে এক নতুন ধরনের কূটনীতির ঘোষণা দিয়েছিলেন আব্দুল মোমেন। বলেছেন, বাংলাদেশ ভারত নাকি ‘স্বামী-স্ত্রীর কূটনীতি’। আবার বলেছেন রক্তের সম্পর্ক। এসব আবার কোন ধরণের কূটনীতি? বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন এমন আজগুবি ও মেরুদন্ডহীন কুটনীতির জন্ম দিয়ে আব্দুল মোমেন লজ্জিত না হলেও দেশের জনগণ লজ্জিত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল মোমেন এমন কূটনীতি চালু করেছেন তা শুধু উজাড় করে দেয়ার, নেয়ার নয়। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। পদ্মা, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, নিশিরাতের সরকারের আমলে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অনেকের মৃত্যু হয়। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে কাউকে ধরে নিয়ে গিয়েও ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে। এই কারণে এই গণবিরোধী সরকারের কাছে মানুষের মৃত্যু কোনো গুরুত্ব বহন করে না। কিন্তু আত্মমর্যাদাহীন এই সরকারকে কে বোঝাবে, সীমান্তে হত্যাকান্ডের সঙ্গে অন্য কোনো মৃত্যুর তুলনা চলে না। ভিনদেশের কেউ সীমান্তে আমাদের দেশের নাগরিককে হত্যা করার সাহস কিংবা ঔদ্ধত্ব দেখালে সেটি কোনো সাধারণ হত্যাকান্ড নয়। সেই হত্যাকান্ড শুধু লাশের সংখ্যা দিয়ে বিবেচ্য নয়। বরং, ওই হত্যাকান্ডের সঙ্গে আমাদের দেশের মান মর্যাদা, সম্মান ও সম্ভ্রমবোধ জড়িত। এই নিশিরাতের সরকার দিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচি : “সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে” আজ সোমবার দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ/কালো পোশাক পরিধান করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম ররি, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, সাবেক ছাত্রনেতা মেহবুব মাছুম শান্ত প্রমুখ ।