বিএনপির জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারে ‘হৃদকম্প’ শুরু হয়েছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৭ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪০ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিএনপির জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারে ‘হৃদকম্প’ শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরশাসক, একনায়ক, ফ্যাসিস্ট শাসক টিকে থাকতে পারেনি। জনতার উত্তাল রোষের মধ্যে তাদেরকে পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। তখন আর তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারও টিকে থাকতে পারবে না। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই আমি সরকারকে বলবো এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখনগুলো পড়ুন। মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন, মানুষের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনাদের ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করুন।
আজ বুধবার মহানগর দক্ষিণের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে করোনা ও ডেঙ্গু হেলপ সেন্টারের কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিএনপি মহাসচিব এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশি আক্রমণ চলছে, হয়রানি হচ্ছে, তল্লাশি চলছে। কেনো কারণ কী? কারণ বিএনপি জেগে উঠছে। আজকে এই যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে নতুন করে বিএনপিকে সাজানো হচ্ছে, কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে করে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই জন্যেই আজকে তাদের (সরকার) হৃদকম্প উপস্থিত হয়েছে। তারা ভয় পেয়েছে, কাঁপছে। এজন্য তারা বিএনপির ওপরে চড়াও হয়ে আক্রমণ করছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার, কোনো একনায়ক, কোনো ফ্যাসিবাদী শাসক বা কোনো অত্যাচারী শাসক কোনোদিনই টিকে থাকতে পারে নাই। জনতার উত্তাল রোষের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। তখন আর তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে, আপনারা দেয়ালের লিখনগুলো পড়–ন, মানুষের চোখের ভাষা দেখুন, মানুষের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করেন। এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করেন আপনাদের ব্যর্থতার জন্য, পদত্যাগ করেন। আপনারা যে অপরাধ করেছেন সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগণের ভোটের অধিকারকে বন্ধ করে দিয়ে, আগের রাতে ভোট নিয়ে চুরি করে আপনারা যে অপরাধ করেছেন সেখানে থেকে যদি রক্ষা পেতে চান অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণ যাতে তাদের পছন্দ মতো সরকার নির্বাচন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, কথা একটাই- এখন সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার। এখন সময় এসেছে এই সরকারকে পরিষ্কার করে বলে দেয়ার যে, তোমাকে আমরা চাই না। এখন বিদায় নিতে হবে এবং নির্বাচন দিয়ে দিতে হবে। জনগণের নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় জনগণই তোমাকে সরাতে বাধ্য করবে।
আমাদের নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া- এমনটি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নেতার কথা বলে ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সাহেব। আরে নেতা তো একজন আমাদের বাংলাদেশে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি এই দেশে দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারকে পরাজিত দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে, লড়াই করতে গিয়ে গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার টেস্ট, করোনার টিকা সংগ্রহ, বিতরণ সব প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কীরকম তেলেসমতি কান্ড তারা ঘটিয়েছে এটা আপনারা নিজেরাই সব দেখেছেন। একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আছেন যার প্রতিটি কথায় মিথ্যা ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক কথাবর্তা। আজকে তারা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু করোনা নয়, তারা আজকে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছেন। এখন যদি কেউ হঠাৎ অসুস্থ হন, জরুরীভাবে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার পড়ে অন্য কোনো রোগেও হাসপাতালে আপনি কোনো চিকিৎসা পাবেন না। বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, বাংলাদেশে সমস্ত ক্ষেত্রে একটা চরম অরাজগতা, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কারণ যারা দেশ চালাচ্ছে এখন, তারা দেশ চালানোর জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। ফলে কোনো জবাবদিহিতা নেই। রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মানুষজনের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুবরণ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এরজন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন তিনি।
আবার এক নেতার পূজারী শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, সুচতুরভাবে প্রথমে সংবিধানকে তারা কেটে কুটে এরকমের তাদের মতো করে করে নিয়েছে। পরে সমস্ত বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সকলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে দলীয়করণ করেছে। আজকে আমাদের যে গণমাধ্য্যম আছে, সংবাদ মাধ্যম আছে তাদেরকেও তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আপনারা দেখেছেন এখন ওই ১৯৭৫ সালে বাকশাল হয়েছিলো তার আগে যেমন এক ব্যক্তির পুজো চলছিলো আজকে আবার সেই একইভাবে এক ব্যক্তির পুজো শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার পত্র-পত্রিকাগুলো যদি দেখেন তাহলে দেখবেন যে, কীভাবে আপনার সমস্ত গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমরা আজকে সমগ্র দেশের যেটা দেখতে পারছি, আবার সেই পুরনো স্লোগান তারা আবার নিয়ে এসেছে-এক নেতা এক দেশ, এখন হচ্ছে যে, হাসিনার বাংলাদেশ। এরকম একটা তারা নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার শুরু থেকে আমরা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ত্রাণ দিয়ে আসছি। কিন্তু যারা আজকে অস্ত্র দেখিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তারা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে জনগণের সমস্যা সমাধানে এই সরকারের কোনো আগ্রহ নাই। সরকার সব ক্ষেত্রে কি রকম তেলেসমতি কান্ড ঘটিয়েছে তা আপনার নিজ চোখে দেখেছেন। তারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলছে। এর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির শাসনামলে একটা সেøøাগান উঠেছিলো এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দাবি তুলেছিলো জামায়াতে ইসলাম, সমর্থন দিয়েছিলো এই আওয়ামী লীগ। জামায়াত-আওয়ামী লীগ মিলে দাবি তুললো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেনে নিলেন। আজকে আমরা দাবি করছি, এই মুহূর্তে দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ওই নির্বাচন কমিশন বদলাবেন, সার্চ কমিটি, মার্চ কমিটি করবেন। সার্চ কমিটি-মার্চ কমিটি আমরা বিশ্বাস করি না।
আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশের গণমানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এই সরকারকে রেখে কোনো নির্বাচন করা যাবে না। সুতরাং জনগণের দাবি মেনে নিয়ে দয়া করে পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, নিজেদেরকে ভালো রাখুন। নইলে দেশে যে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেই পরিস্থিতির জন্য আপনাদের ওপর দায়-দায়িত্ব্ বর্তাবে।
মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, মহানগর পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশ্যে আমি বলব, আমাদের উন্মুক্ত জায়গায় সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন করার অনুমতি দিন। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আওয়ামী লীগ তার অফিসের সামনে সভা-সমাবশ করবে, তাদেরকে করতে দেবেন। আমাদেরকেও দিতে হবে। নইলে জনগণ রাজপথেই নামতে বাধ্য হবে।
মহানগর দক্ষিণ করোনা হেলপ সেন্টার পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে ও মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ নবী।