সেলফিতে অস্ত্র হাতে চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা ফের আলোচনায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:০৬ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
অস্ত্র উঁচিয়ে ‘শোডাউন’ দেওয়া একটি ছবি তুুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এক উপনির্বাচনে। এর মধ্যে কেটে গেছে তিনটি বছর। কিন্তু এতো দিনেও উদ্ধার হয়নি সেই অবৈধ অস্ত্র। আটক করা হয়নি সেই অস্ত্রের মালিক মাহমুদুর রশিদ বাবুকেও। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
সম্প্রতি আরও একটি অস্ত্র নিয়ে সেলফি তুলতে দেখা গেল মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য বাবুকে। বীরদর্পে অস্ত্র হাতে গোপনে তোলা সেই ছবিটি । ছবিটিতে দেখা যায়, একটি বিদেশি পিস্তল হাতে সেলফি তুলছেন বাবু।বারবার অস্ত্র হাতে দেখা গেলেও অজানা কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান তিনি। উদ্ধার হয় না অবৈধ অস্ত্রগুলোও।
নগর ছাত্রলীগের সদস্য বাবু থাকেন হালিশহরের ছোটপুল এলাকার শান্তিবাগে। এলাকাতেও রয়েছে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ। তিনি কমার্স কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে বাবুর বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডের বেচাশাহ রোডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরপ্রার্থী বিবি মরিয়মের বাসার সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় বহিরাগতরা। এ কারণে তখন অনেক ভোটার কেন্দ্রেও যেতে পারেননি। ওই সময়ে চার যুবককে অস্ত্র হাতে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার ছবি চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
বিবি মরিয়ম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের বড় বোন। তার পক্ষে মহড়া দেওয়া ওই অস্ত্রধারীদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মাহমুদুর রশিদ বাবুÍ কালো শার্ট ও নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট পরে দেশি বন্দুক নিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন। অস্ত্রধারী অন্যজন পাঠানটুলীর বাসিন্দা থানা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। তার নাম রাকিব হায়দার। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত রাকিবকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ নিয়ে দলের ভেতরেই তৈরি হয় তীব্র সমালোচনা। এমন এক অস্ত্রবাজকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনায় ওই সময় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তৃণমূলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
অবৈধ অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) শামসুল আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে অনেকজনকে আটক করেছি। যাদের এখনও আটক করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত তিন বছরে শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই রাজনৈতিক পেশীশক্তির ব্যবহার ও আধিপত্য বিস্তারে অস্ত্রবাজির অন্তত দেড় ডজন ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এসব ঘটনায় ১৯ জনের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পর এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনকে আটক করা হয়। তবে বেশিরভাগ অস্ত্রবাজই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অভিযোগ রয়েছে, তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে পায় না। অবশ্য সাধারণ মানুষ মনে করেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।