নাটোর ও কুলিয়ারচরে টেন্ডার শিডিউল ছিনিয়ে নিলেন যুবলীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৭ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:২৬ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নাটোর সদর হাসপাতালের প্রায় চার কোটি টাকার টেন্ডার শিডিউল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপনের কাছ থেকে শিডিউল ছিনিয়ে নেন তিনি। এ সময় স্বপনের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বরও বগুড়ার আলিয়া কর্পোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিডিউল ক্রয় করে বের হওয়ার সময় জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া তার শিডিউল ছিনিয়ে নেন।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর সদর হাসপাতালের টেন্ডারের শিডিউল ক্রয় করেন নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন। শিডিউল ক্রয় করে বের হওয়ার সময় হাসপাতালের ফটকের সামনে জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া শিডিউল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় স্বপন শিডিউল না দিলে এহিয়ার সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। পরে যুবলীগ সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া শিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে নাটোর সদর হাসপাতালের ছয়টি গ্রুপের দুটি কাজের টেন্ডার শিডিউল ক্রয় করি। খবর পেয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া দলবল নিয়ে আমাকে ঘিরে ধরে। এ সময় তিনি বলেন, আমি ছাড়া কেউ টেন্ডার জমা দেবে না। আমাকে শিডিউল উত্তোলন এবং জমা দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু আমি শিডিউল ক্রয় করে বের হওয়ার সময় এহিয়া চৌধুরী তা ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই। তবে নাটোর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবু সাদাদ জানান, কেউ টেন্ডার সংক্রান্ত অভিযোগ থানায় দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাটোর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নাটোর সদর হাসপাতালের ওষুধ, খাবার, আসবাবপত্রসহ মোট ছয়টি গ্রুপে প্রায় চার কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত মোট ১৮টি শিডিউল বিক্রি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শিডিউল ক্রয় এবং ৩ অক্টোবর জমা দেয়ার শেষ দিন। তবে সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় বলেন, এ বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তাছাড়া টেন্ডারের শিডিউল ক্রয় করে বাইরে কোনো ঘটনা ঘটলে এতে আমাদের করার কিছু নেই।
কুলিয়ারচরে টেন্ডার ছিনিয়ে নিলেন যুবলীগ নেতারা : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির কাছ থেকে স্থানীয় যুবলীগের দুই নেতার ‘ক্যাডাররা’ টেন্ডার ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে টেন্ডার জমা দিতে গেলে সেটি ছিনিয়ে নেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সিসিটিভিতে সেই চিত্র ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় গতকালই (সোমবার) ইউএনওর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সালুয়া ইউনিয়ন এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করে বালি ও মাটির ইজারার জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহবান করে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিস। এর ইজারামূল্য ধরা হয় ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮ টাকা। তৃতীয় টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। প্রথম দুই দফায় আশানুরূপ দর না পাওয়ায় তৃতীয়বারের মতো টেন্ডার আহবান করা হয়। শেষবার তিনটি শিডিউল বিক্রি হয়। এর মধ্যে যুবলীগ নেতাদের মালিকানাধীন রতন এন্টারপ্রাইজের শিডিউলটি যথারীতি জমা পড়ে। আজ দুপুরে মহিমা এন্টারপ্রাইজ শিডিউল জমা দিতে গেলে সেটি ছিনতাই হয়। অন্য শিডিউলদাতা চাঁদনি এন্টারপ্রাইজের পক্ষে কেউ শিডিউল জমা দিতে আসেনি। নির্ধারিত সময়ের আগেই শিডিউল জমা দিতে নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে যেতে চাইলে মহিমা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার রেনু মিয়াকে বাধা দেন প্রভাবশালীরা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের পিএস ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে বাক্সে দরপত্র জমা দিতে গেলে তার কাছ থেকে দরপত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ইকবাল হোসেন।
কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী বলেন, দরপত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াসির মিয়া বলেন, মহিমা এন্টারপ্রাইজের রেনু মিয়া দরপত্র জমা দিতে গিয়ে বাধা পেয়ে আমার শরণাপন্ন হন। পরে আমার পিএসকে দিয়ে টেন্ডারের দরপত্র জমা দিতে পাঠাই। তখনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তদন্ত সাপেক্ষে ন্যক্কারজনক এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।