রাস্তায় সাইড না দেওয়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে চড় এমপি রিমনের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১৫ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সংসদ সদস্যের মোটরসাইকেল বহরকে সাইড না দেয়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মাছ ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম (৩৮) কে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে।
গতকাল বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা পৌর শহরের শেখ রাসেল স্টেডিয়াম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার মাছ ব্যবসায়ী নজরুল ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিএফডিসি মৎস্য পাইকার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। মারধোরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য রিমন।
মারধোরের শিকার নজরুল ইসলাম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, পাথরঘাটা শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে বুধবার উপজেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী পাথরঘাটা প্রিমিয়াম লীগ ফুটবল খেলায় ঢাকা থেকে বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড়রা মাইক্রোবাসে স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছিলেন। এই খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন। তিনি মটর সাইকেল বহরে যে তাদের মাইক্রোর পিছনে ছিলেন তা মাইক্রোর চালক দেখেনি।
এসময় পিছন থেকে একটি বাইকে ছাত্রলীগের কর্মীরা উঠে এসে গাড়ি সাইড দিতে বলেন। সরু রাস্তার এক পাশে অটো রিক্সার দখলে থাকায় সাইড দিতে কিছুটা দেরি করেছে গাড়ির চালক। এরপর রাস্তার বাম পাশে চালক গাড়ি থামিয়ে এমপির বহরকে সাইড দেয়। কিছুক্ষণ পরে তিনি খেলোয়াড়দের নিয়ে মাঠে যান।
এসময় ছাত্রলীগ নেতা মধুসহ ৭/৮ জন জানান, এমপি রিমন তাকে মঞ্চে ডেকেছেন। এসময় তিনি মঞ্চে যাবার সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রকাশ্যে চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করেন রিমন। প্রায় এক মিনিট অসংখ্য চড় দেয়ার পরে তার পা ধরে ক্ষমা চাইতে বললেন। এ সময় অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করেন। মঞ্চে থাকা পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেনসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সবাই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তারা কেউ-ই এমপির এমন আচরণের প্রতিবাদ করেননি। শেষে ক্ষমা চেয়ে মঞ্চ থেকে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, মঞ্চ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা মধুসহ কয়েকজন তাকে পাথরঘাটা এলাকা ত্যাগ করতে বলেন। থানায় অভিযোগ করতে গেলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম আরও বলেন, যদি গাড়ির চালক ভুল করে তবে গাড়ির চালককে তিনি মারধোর করতেন। কিন্তু আমাকে কেন মারলো। আমি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আমি মাছের ব্যবসা করি। সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপন করি। খেলার মাঠে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের সামনে আমাকে মারধোর করলো এমপি। সে একজন সাংসদ, তার অনেক ক্ষমতা। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় আমি যেতে পারিনি। যদি আমাকে নিরাপত্তা দেয়া হয় তবে, আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
সেই সময়ে মঞ্চে উপস্থিত পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাবির হোসেন বলেন, এমপির এমন আচরণে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এছাড়া আমার কিছু বলার নেই। এ বিষয়ে এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন বলেন, নজরুল খারাপ লোক তাই আমি তাকে চড় মেরেছি, তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। চড় মারা আমার অপরাধ হলে আমার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করুক।
পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মারধোর করা এমপি রিমনের অভ্যাস। তিনি নিজেই আইন হাতে তুলে নেন। প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা আমরা শুনে থাকি মিডিয়ার মাধ্যমে। পাথরঘাটা হাসপাতালের এক কর্মচারীকে মারধোর, এলজিইডির উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে মারধোর, শালিসের নামে এক নারীকে মারধোর করে মাথায় ময়লা দিয়ে বেঁধে রাখাসহ অসংখ্য ঘটনা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। তবে তার বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ নেই।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তবে মৌখিকভাবে ঘটনা জানতে পেরেছি। থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি অভিযোগ দেয় তবে, তদন্ত করে আইনগত প্রক্রিয়ায় যাবেন তারা। যদি অভিযোগকারীর নিরাপত্তা দরকার হয় সে বিষয়েও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ব্যবস্থা করে দেবো।