নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহবান ড. খন্দকার মোশাররফের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৩ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৫ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস এন্ড প্রসপারিটি সোসাইটির উদ্যোগে আজ রবিবার বেলা ১১টায় “নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ” শীর্ষক একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সাজ্জাদুল হকের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় ওয়েবিনারটিতে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কেবলমাত্র আইনের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা যাবে না। ঘুণে ধরা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় দলীয় সরকারের অধীনে কোনভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস সুদীর্ঘ নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অঙ্গসমূহ ঘুণে ধরা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বর্তমান দলীয় সরকারের পতনের আন্দোলনে সকলকে রাজপথে নামতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশের জনসাধারণ যেভাবে শক্তিশালী, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চান তা কখনোই বর্তমান আওয়ামী সরকারের দ্বারা পূরণ হবে না। এই বিষয়ের সমাধান রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে প্রযুক্তি অসচেতনমূলক ভোটারদের জন্য ইভিএম ব্যবস্থা একেবারেই অনুপযুক্ত।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথের মত আচরণ করছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচনগুলোয় ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য করা সার্চ কমিটি একটি প্রহসন মাত্র, যার মাধ্যমে মূলত সরকার দলের পছন্দের লোকজন কমিটিতে জায়গা পান। এর মাধ্যমে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও তিনি ইভিএম বা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটে জালিয়াতির যে সুযোগ তৈরি হয় সে বিষয়েও আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, নৈতিক চরিত্রসম্পন্ন মানুষের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এই সকল অসঙ্গতি দূর করা সম্ভব। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ অথবা সুুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে সরকার যদি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনে রাজি না হয় তাহলে রাজনৈতিক আন্দোলনই একমাত্র সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।
আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনারবৃন্দ কারা হবেন তা সাংবিধানিকভাবে সংসদে পাস হতে হবে। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের জন্য যে আইন আছে, বর্তমান দলীয় সরকারের আজ্ঞাবহ এই নির্বাচন কমিশন সে আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ এবং পালন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভ্যাকসিন হল নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার তার আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রিক কোনো পূর্ণাঙ্গ আইন নেই। এই আইন না থাকার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন দলসমূহ এই কমিশনকে প্রভাবান্বিত করার সুযোগ পেয়েছে। পূর্বের নির্বাচন কমিশনসমূহ তাদের হাতে থাকা আইনি ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কার না করে বাতিল করে দেয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বর্তমানে সার্চ কমিটি যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে তাতে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সার্চ কমিটির উচিত হবে রাজনৈতিক দলসমূহ যে নামগুলো দেয় তা আমলে নেয়া।
তিনি আরও বলেন, এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিহিংসাপরায়ণ। তাই এই সময়ে রাজনৈতিক দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং নৈতিক অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিকল্প নেই। এর নাম তত্ত্বাবধায়ক হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, টেকসই গণতন্ত্রের জন্য সৎ, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক এবং আন্তরিক লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। পাশাপাশি ইলেকশন কমিশনের মত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের ধারা ফিরিয়ে আনতে তরুণ সমাজকে সচেতন হতে হবে। এবং সমাজের সর্বস্তরকে রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।