রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছাত্রলীগ নেতা আকুলের যত অপরাধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৭ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৪ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ভারত থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র এনে বাংলাদেশে বিক্রির অভিযোগে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন আকুল হোসাইন নামে একজন। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের যশোরের শার্শা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। যদিও অপকর্মে ধরা পড়ার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানা গেছে, আকুল পশ্চিমবঙ্গের তিন মহাজনের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতেন। মহাজনের লোকজন সীমান্ত এলাকার আবাদি জমিতে পুঁতে রাখতো অস্ত্র। হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেয়ে মাটি খুঁড়ে অস্ত্র বের করতো আকুলের লোকজন। এমনকি নজরদারি এড়াতে পানির জারের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হতো অস্ত্র। অস্ত্রগুলো আগে ডেলিভারি হতো এবং পরে অর্থ পরিশোধ হতো।
বাংলাদেশি চোরাচালানকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এবং মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মেটানো হতো পাওনা। ১০ দিন আগেও ঘিবা সীমান্ত দিয়ে বিদেশি পিস্তলের একটি বড় চালান আকুল পাচার করে নিয়ে আসেন। আকুল যাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতেন তাদের অধিকাংশই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যাতে আকুল জড়িত নন।
মেয়রের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে তিনি এসব কাজ করে থাকেন ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই দুই শতাধিক অবৈধ অস্ত্র ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেছেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাকারবারি দলের সদস্যরা। আকুলও এই কারবারই করতেন।
স্থনীয় সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটনের আস্থাভাজন ও ডান হাত হিসেবে পরিচিত আকুল হোসাইন। শার্শা-বেনাপোলে আকুল ছিলেন অনেকের কাছে আতঙ্কের নাম। মেয়রের রাজনীতিতে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। সেই সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ তার পেছনে ছিলেন। অস্ত্রসহ আকুলের গ্রেফতারের ঘটনা মেয়রের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় বেশ কিছুদিন ধরেই শার্শাসহ যশোরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ডিবি সূত্র বলছে, সীমান্তে সতর্কতা কিছুটা শিথিল হলে ভারতের চোরাকারবারিরা বাংলাদেশিদের কাছে চালান পাঠায়। এই কাজে অপরাধীরা স্থানীয় দিনমজুরদের কাজে লাগায়, যারা অর্থের একটি অংশ পায়। ভারত থেকে ৫০ হাজার টাকায় কেনা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজর এড়িয়ে চোরাকারবারি ঢুকতো বাংলাদেশে। দেশে এনে সেগুলো বিক্রি করতো ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ দামে। এসব অস্ত্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহার হচ্ছিল।
ডিবি জানায়, বাংলাদেশি চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটা তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাদের সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আকুল যশোর এমএম কলেজে রাজনীতি করতেন। এরপর শার্শা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এলাকায় যান।
জানা যায়, রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করে আকুল অস্ত্র ও গুলির ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি মাদক ও সোনা চোরাচালানেও জড়িত হয়ে পড়েন তিনি। দেশে অবৈধপথে যত গুলি আসে, তার একটি বড় অংশ এই ছাত্রনেতার নেটওয়ার্কেই আসতো। এ কাজে বাংলাদেশ-ভারতে ২৪ সদস্যের এক বাহিনীও গড়ে তুলেছেন তিনি। এসব কাজে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বড় নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা। এর আড়ে গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা আকুলসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।
রাজধানীর মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে আটটি বিদেশি পিস্তল, আট রাউন্ড গুলি, ১৬টি ম্যাগাজিন ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করে ডিবি। এই পাঁচজনের মধ্যে আকুল ছাড়া ছিলেন ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল আজিম, ফারুক হোসেন ও ফজলুর রহমান। আকুলসহ সবাই যশোরের বেনাপোল ও শার্শা থানা এলাকার বাসিন্দা। রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় একজন ঠিকাদারকে গুলির ঘটনার ব্যবহৃত অস্ত্র এবং সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া কয়েকটি অস্ত্রের উৎসের সন্ধানে নেমে চক্রটির সন্ধান পায় ডিবি। পরে গোপন সংবাদে অভিযান চালানো হয়। বিক্রির জন্য অস্ত্র ও গুলি সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গাবতলী হয়ে ঢাকায় ঢুকছিলেন তারা।
ডিবি বলছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো গোষ্ঠী এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে কি-না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা ২০১৪ সাল থেকে ভারত থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র আনার সঙ্গে জড়িত। ২০১৬ সালের আগে যে অস্ত্র ভারত থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কেনা হতো, সেগুলো দেশে এনে বিক্রি করা হতো ৫০ হাজার টাকায়। আর বর্তমানে ভারতে ৫০ হাজার টাকায় কিনে দেশে এনে সেগুলো বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের চোরাকারবারিরা একটি ৯ এমএম পিস্তলের জন্য ৬১ হাজার রুপি, ৫ ইঞ্চি ব্যারেলের ৭.৬৫ এমএম পিস্তলের জন্য ৫১ হাজার রুপি ও ৩ ইঞ্চি ব্যারেলের ৭.৬৫ এমএম পিস্তলের জন্য ৪১ হাজার রুপি রাখে। আকুল এগুলো বাংলাদেশে যথাক্রমে এক লাখ ২০ হাজার, ৯০ হাজার ও ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতার আকুল প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন যে, ভারতের তিনজন ডিলারের কাছ থেকে তিনি অস্ত্র আনতেন। এক্ষেত্রে অস্ত্র ও গুলি প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে রাখতেন তারা। হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেয়ে মাটি খুঁড়ে অস্ত্র বের করতেন আকুলের লোকজন। এই অস্ত্র চোরাকারবারিরা সোনা ও মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত।
তিনি বলেন, অস্ত্র ও গুলির মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছিল হুন্ডির মাধ্যমে। বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা স্থানীয় কিছু কসমেটিকসের দোকানে টাকায় মূল্য পরিশোধ করেন। পরে ভারতীয় চোরাকারবারিরা ওই অংশের কিছু দোকান থেকে তা রুপিতে গ্রহণ করেন। এর মধ্যে আমরা বাংলাদেশি চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা পেয়েছি। আমরা এখন তাদের গতিবিধি বিশ্লেষণ করছি। তাদের সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি।
এসব অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মশিউর রহমান জানান, তালিকায় অপরাধীদের পাশাপাশি ভূমিদস্যুরাও আছে। ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, অস্ত্র কারবারি চক্রটির মূলহোতা আকুল নিজে বা তার বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সেগুলো সরবরাহ করছিলেন। আকুল ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক অবৈধ অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছেন। অস্ত্র চোরাচালানসহ চক্রের সদস্যরা তক্ষক প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, স্বর্ণ চোরাচালান, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা ও নতুন মাদক আইস কারবারেও জড়িত ছিলেন বলে জানান ডিবি প্রধান।
ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার, আলোচনায় জেলার রাজনীতি : এদিকে আকুলকে গ্রেফতারের পর জেলাজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সম্প্রতি আকুলকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর সুপারিশ করা হলে কেন্দ্র থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর-১ আসনে (শার্শা) আওয়ামী লীগের রাজনীতি বেশ কয়েক বছর ধরে দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন। অন্য অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম। বিভক্তির কারণে শার্শা উপজেলা থেকে শুরু করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে। দুই পক্ষই নিজেদের পছন্দমতো এ কমিটি দিয়েছে।
আকুলের বিরুদ্ধে ৮ মামলা : ২০১২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শার্শার বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের দেয়া কমিটিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন আকুল। রাজনীতির বাইরেও আকুলের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতেন এই নেতা। যদিও আকুলেল বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই, মারামারি, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা সংক্রান্ত আটটি মামলা রয়েছে। তবে অভিযোগ আছে, আকুলের আগের মামলাগুলো রাজনৈতিকভাবে বেনাপোল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ নিষ্পত্তিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
সূত্রমতে, যশোরের শার্শা ও বেনাপোলের অগ্রভুলোট, পুটখালি, দৌলতপুর, সাদীপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আসে। এসব সীমান্তের ঘাটমালিকরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ঘাট চালান। এসব ঘাট দিয়ে অন্যান্য মালামালের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে আসে চোরাকারবারিরা। আবার অনেকে সীমান্ত সংলগ্ন মাঠে কাজ করতে গিয়ে অস্ত্র এনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। আবার অনেকে টাকার বিনিময়ে রাতে ভারত সীমান্ত থেকে অস্ত্র আনে। অস্ত্র বাহকরা ধরা পড়লেও মূল মালিকের নাম বলে না। বাজারের ব্যাগে, স্কুল ব্যাগে, মোটরসাইকেলের সিটের নিচে, কোমরে গুঁজে, বইয়ের পাতা কেটে তার মধ্যে রেখে অস্ত্র গন্তব্যে পৌঁছে দেয় তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেনাপোল পৌরসভার এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির হয়ে ছাত্রলীগ নেতা আকুল লক্ষণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন ও বাহাদুরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা আশানুর রহমান আশাকে কুপিয়ে, বোমা মেরে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। তখন বন্দরের কার্যক্রম শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় মারাত্মকভাবে আহত হন শ্রমিক শাহাদত, গুলিবিদ্ধ হন ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম।
২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি পুটখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আহত করার অভিযোগও ওঠে আকুলের বিরুদ্ধে। এই বিষয়টি বেনাপোল মেয়রের মধ্যস্থতায় মীমাংসা হয়। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অফিস চলাকালীন বেনাপোল কাস্টমস হাউসে গিয়ে একটি টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান ও উপকমিশনার নিতিশ চন্দ্র বিশ্বাসের ওপর হামলা চালান আকুল ও তার বাহিনীর সদস্যরা।
এ ঘটনায় বেনাপাল পোর্ট থানায় মামলা হয় এবং দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলেও মেয়রের হস্তক্ষেপে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। ২০১৯ সালের ১৩ জুন বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টুর ওপর বোমা হামলার ঘটনায় ১৪ জুন আকুলের বেনাপোলের ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালান নাভারণ সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরানের নেতৃত্বে পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ সময় তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ তিন রাউন্ড গুলি, ১২টি ম্যাগাজিন, আটটি দেশীয় অস্ত্র ও ৩৩ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও মামলায় কিছুই হয়নি আকুলের।
বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু বলেন, ১০ দিন আগেও ঘিবা সীমান্ত দিয়ে বিদেশি পিস্তলের একটি বড় চালান আকুল পাচার করে নিয়ে আসেন। আকুল যাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতেন তাদের অধিকাংশই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যাতে আকুল জড়িত নন। মেয়রের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে তিনি এসব কাজ করে থাকেন।
আকুল মূলত জেলা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখে চলতেন। সেই সুবাদে ২০১৪ সালে শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। শাখার সভাপতি হন আব্দুর রহিম। রহিমকে সভাপতি পদে মেনে নিলেও শার্শা উপজেলায় ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ আকুলকে মেনে নিচ্ছিল না। পরে তারা ইকবাল হোসেন রাসেল নামে এমপি শেখ আফিলউদ্দিনের অনুসারী এক নেতাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে।
যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের আমরা প্রশ্রয় দেবো না : আকুল হোসাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং শার্শার বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, আকুল যশোর এমএম কলেজে রাজনীতি করতেন। এরপর শার্শা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এলাকায় যান। আমার সঙ্গে মেশেন, নাকি অন্য কারও সঙ্গে মেশেন বিষয়টি সেখানে নয়। আমার কাছে শত লোক আসে, শত লোক যায়। এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কে কিসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে আর কে কিসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে না তা আমি কিংবা আপনি বলতেও পারবো না। আর এই দায়িত্ব নিয়ে আমরা রাজনীতি করতে পারবো না। কেউ যদি খুন করে এসে আমার টেবিলে বসে থাকে সেটি কি আমার জানার কথা? আমরা পলিটিকস (রাজনীতি) করি, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব অপরাধীকে শনাক্ত করা। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের আমরা প্রশ্রয় দেবো না।
একই উপজেলায় ছাত্রলীগের দুজন সাধারণ সম্পাদক কী করে হন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি একটাই এবং সেই কমিটিতে আকুল ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। রহিমকে সভাপতি ও আকুলকে সাধারণ সম্পাদক করে শার্শা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছিল জেলা কমিটিই। কিন্তু আকুলকে না মেনে আরেকজনকে সাধারণ সম্পাদক বানায় অন্যরা।
ডিবি বলছে ২০১৪ সাল থেকে আকুল অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিষয়টি জানতেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বিষয়টি আমার জানার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আগে আমার সম্পর্কে আপনার জানতে হবে। আমিও ‘প্রতিদিনের কথা’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক। এছাড়াও আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ চার বছর ছাত্রলীগ করেছি। ১৬ বছর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। ২০১৫ সালে যশোর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০২০ সাল থেকে যুগ্ম-সম্পাদক। এরপর বেনাপোলের পৌর মেয়র নির্বাচিত হই। ছাত্রলীগের নেতা আমি তৈরি করি না, ছাত্রলীগের নেতা তৈরি করে ছাত্রলীগ। আকুল যে অপরাধ করেছে তা প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, আকুল হোসাইনের নামে বেনাপোল পোর্ট থানায় বিস্ফোরক, মারামারি ও দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে।