আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে জাপা নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৬ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:২৮ এএম, ২৬ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার আলোচিত মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম (৫৮) স্বপনকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনের শিকার মো.সাইফুল ইসলাম স্বপন গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট- কোম্পানীগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মোখলেছের রহমান পন্ডিত বাড়ির জিয়াউল হক জিয়ার ছেলে।
গতকাল বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বসুরহাট বাজারের ডাচ বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন মসজিদের সামনে থেকে জাতীয় পার্টির এ নেতাকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা ধরে নিয়ে যায়।
পরে রাত ১০টা পর্যন্ত বসুরহাট পৌরসভ ভবনে তাকে আটক রেখে কাদের মির্জা নিজে এবং তার অনুসারীরা দফায় দফায় নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীর ছেলে শাওন। পরে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনোয়ার খাঁন মেডিকেলে ভর্তি করে তার পরিবারের সদস্যরা। তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানান তার স্ত্রী।
নির্যাতনের স্বীকার স্বপনের ছেলে বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম শাওন অভিযোগ করে বলেন, বসুরহাট বাজারের ডাচ-বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন সামনের মসজিদে বাবা আছর নামাজ পড়ে বাজারের দিকে আসেন। ওই সময় মেয়র কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা আামর বাবাকে তুলে নিয়ে যায় বসুরহাট পৌর ভবনে । বাবার সাথে থাকা দুই লাখ টাকা, মোটরসাইকেল, মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় মির্জার লোকজন। পৌর ভবনে নিয়ে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেধে ওপরের দিকে ঝুলিয়ে মাথাসহ পুরো শরীর বেধড়ক পেটানো হয়। পাঁচ ঘন্টা টানা সেখানে বাবাকে দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়। কাদের মির্জা নিজেও আমার বাবাকে মারধর করেন। মারধর করে আমার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়েছে, ভিডিও রেকর্ড করেছে। বাবাকে বলতে বাধ্য করা হয় যে, তিনি যে সব কথা বলেছেন,এসব কথা নিজের ইচ্ছায় বলেছেন। ওরা যা যা বলছে বাবা বাঁচার জন্য শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছে।
শাওন আরও অভিযোগ করেন, কোম্পানীগঞ্জে রাজনীতিতে মির্জার বিরুদ্ধে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দেয় কাদের মির্জা। তার প্রতিপক্ষরা যে সকল অনিয়ম করে নাই, সেগুলো করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলে বাবাকে। এসব কথা বলতে বাধ্য করে তারা ভিডিও চিত্র ধারণ করে। এক পর্যায়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি লতিফ মেম্বারকে পৌর ভবনে ডেকে এনে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। স্বাক্ষর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাকেও নির্যাতনের হুমকি দেয়া হয়। তখন ঊনি ভয়ে স্বাক্ষর দিয়ে রাত ১১ টার দিকে বাবাকে বসুরহাট পৌরসভা ভবন থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ও নির্যাতনের স্বীকার স্বপনের স্ত্রী নাজমা ইসলাম জানান, বেধড়ক মারধর করে আমার স্বামীর মাথা থেতলে দিয়েছে, হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে কাদের মির্জা ও তার অনুসারীরা। এ সময় তারা তাকে ফ্যানের সাথে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। আগে থেকেই কাদের মির্জা তাকে মুঠোফোনে গালিগালাজ করত, হুমকি দিত। গত পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে আমার স্বামী বসুরহাটে যায়নি। গতকাল বিকেলে এক কাজে তিনি বসুরহাট বাজারে যান। খবর পেয়ে কাদের মির্জা তাকে আটক করে নির্মম নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় আমি কাদের মির্জার বিচার দাবি করছি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি লতিফ মেম্বার জানান, কাদের মির্জা বসুরহাট পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতির মাধ্যমে আমাকে ডেকে নেয়। এরপর আমার থেকে স্বাক্ষর নিয়ে স্বপনকে ছেড়ে দেয়। তিনি আরও জানান, সেন্ট্রাাল কমিটিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে তিনি ভয়ে এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে গণমাধ্যম কর্মিদের এড়িয়ে যান। নির্যাতনের বিষয়ে তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি বা তার সহকারী ফোন রিসিভ করেননি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান,বিষয়টি আমি শুনেছি। এখনও কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।