কর্তৃত্ববাদী সরকার নিরাপরাধ মানুষকে বেআইনীভাবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে- এমরান সালেহ প্রিন্স
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৩ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২০ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার যখন ইচ্ছে তখন নিরাপরাধ মানুষকে বেআইনীভাবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, দীর্ঘ সময় গোপন রেখে আষাঢ়ে গল্প বানিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যাচার করা যেন সরকারের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার সেতু, বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক এস এম আশরাফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম রাহুলসহ পাঁচজনকে গত রাত ১১-১৫ মিনিটে সাদা পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর রাইফেলস স্কয়ারের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় গোপন রেখে ধানমন্ডি থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে রাজিব আহসানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবী করছে। এই ঘটনার পরপরই দীর্ঘক্ষণ যখন রাজিব আহসানসহ অন্যদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন গতরাতেই অবিলম্বে তাদেরকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবী জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে তিনি গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তিও দাবী করেছেন।
সম্প্রতি সরকার নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এবং আন্দোলন ও পতনের ভয়ে ভীত হয়ে বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নতুন করে গ্রেফতার ও হয়রানী শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ দেশব্যাপী নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করেছে।
আওয়ামী জনবিচ্ছিন্ন কর্তৃত্ববাদী ভোটারবিহীন সরকারের অবস্থা সন্ত্রাসীদের মতো। এই অবৈধ সরকার গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, সন্ত্রাস চালিয়ে রাষ্ট্রে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করছে। এজন্য তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রাইভেট বাহিনীতে পরিণত করে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রিত করেছে। স্বাধীনভাবে রাজনীতি যেন এখন অতীত ইতিহাস। মানুষের জানমাল ও চলাচলে কোন স্বাধীনতা নেই, কোন নিরাপত্তা নেই। আইন-প্রশাসন ও আদালতকে নিজেদের অনুগতদের দিয়ে সাজিয়ে তুঘলকি শাসন কায়েম করে তা দীর্ঘস্থায়ী করার নানা কৌশল ও ফন্দি আঁটছে।
জনগণের ভালোবাসা ধন্য রাজনৈতিক দল জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরিচালনা করবে এটাই হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র। কিন্তু নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার এখন সম্পূর্ণরুপে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যারা দুর্নীতি ও বেআইনী কাজের সাথে জড়িত। নিশিরাতের সরকারের পাহারাদার পুলিশের হুংকার ও কর্মকান্ডে প্রতীয়মান হয় যে,বাংলাদেশ সম্পূর্ণরুপে অবৈধ ক্ষমতাদখলদারদের দ্বারা বন্দী। বর্তমান আওয়ামী সরকার এখন পাপেট সরকারের চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। সরকার ফ্যাসিবাদী শাসন চালাতে গিয়ে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, গ্রেফতার ও দমন-নিপীড়ণ চালাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার জনসমর্থন হারিয়ে এবং দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে এখন চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দানবীয় সরকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দমন-পীড়ণ, গ্রেফতার, মিথ্যাচার তাদের নিত্যসঙ্গী। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে প্রতিদিন তারা মিথ্যাচারের পাশাপাশি নীতিবাক্য উচ্চারণ করছেন, অথচ তারাই অনৈতিক কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য মন্ত্রীদের মতোই কথা বলছেন।
গতকাল তিনি যা বলেছেন তা তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নামে দুর্নীতি ও লুটপাটে ব্যস্ত। তারাই জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ‘ডান্ডা মেরে ঠান্ডা’ করে নির্বাচনকে ব্যর্থ করে দিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। জনগণের প্রতি তাদেরই কোন দায়বদ্ধতা নেই, কারণ তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। তাদের দায়বদ্ধতা অনুগত ‘আমলা লীগ” ও তাদের অবৈধ সুবিধাভোগী দুষ্টুচক্রের প্রতি-যারা রাতে ভোট ডাকাতি করে তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়েছে। তেমনি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রচরিত্র হরণ করে দেশকে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে-যা আন্তর্জাতিকভাবে আজ স্বীকৃত।
গতরাতে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসানকে সাদা পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ফ্যাসিবাদী সরকারের চলমান অপকর্মের ধারাবাহিকতা। জনগণকে ভয় পাইয়ে দিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চালু রাখতেই সরকার আইন শৃঙখলা বাহিনীকে দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে অপহরণের পর গুমের মতো লোমহর্ষক কর্মকান্ড চালু রেখেছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা আটক রাজীব আহসান, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমরা আবারো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবী করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।