জনগণকে ভিন্নপথে পরিচালনা করতেই জিয়ার কবরকে ইস্যু করছে সরকার - ফখরুল ইসলাম আলমগীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩২ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকায় তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দলের মধ্য থেকেই বিভিন্ন পদে ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। নির্বাসনে থেকেও তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দলকে সুসংগঠিত করছেন। তাই দলের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্নই আসে না। তিনিই আমাদের দলের নেতা। তার নেতৃত্বেই আগামীতে আন্দোলন- সংগ্রাম পরিচালিত হবে।
আজ সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরস্থ কালীবাড়ির নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন মহলের কথার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিভিন্ন সময়ে চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের পর অনেকেই মনে করেছিল বিএনপির অবস্থা বোধহয় শেষ। কিন্তু বিএনপি উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং তিন-তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনায় এসেছে। গত ১২ বছর ধরে দেশ বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের যে অর্জন ছিল আওয়ামী লীগ সরকার তা নষ্ট করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বলতে গিয়ে আমি বলবো যে, দেশের সকল ধরনের নির্বাচনের ওপরে দেশের মানুষের আস্থা উঠে গেছে। বিগত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই আমরা এর প্রতিফলন দেখেছি। গণতন্ত্রের প্রথম যে স্তম্ভ, সেটিকেই সরকার অবৈধভাবে নিজেদের মতো করে পরিচালনা করে অবৈধভাবেই ক্ষমতায় বসে রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথা শুনলে মনে হয় যেন তিনি সরকারের সকল চাওয়া-পাওয়া, আদেশ-নিষেধ মানার জন্যই বসে রয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা যাবো কি না দলগতভাবে আমরা সে সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি।
শহীদ জিয়ার কবর বিষয়ে তিনি বলেন, এ ইস্যুটিই একটি কুরুচিকর ও অরাজনৈতিক ইস্যু। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং শাহাদাতবরণের পর সেনাবাহিনির তত্ত্বাবধানেই পোস্টমর্টেম করে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না। এ বিষয়টি ধ্রুবতারার মতো সত্য। লুইকানের নকশাটি ছিল পাকিস্তানি আমলের। এ নকশায় ওপর থেকে লক্ষ করলে দেখতে পারবেন এখানে পাকিস্তানের পতাকার চাঁদ-তারার নকশা রয়েছে। আইউব খানের আমলে এটিকে সেকেন্ড ক্যাপিটাল করার চিন্তাধারা ছিল। এর পরে তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গণভবন, স্পিকার ও ডিপুটি স্পিকারের বাসা তৈরি হয়েছে। মেট্রোরেলের বিশাল একটা অংশ এতে ঢুকেছে। দেশের জনগণকে ভিন্নপথে পরিচালনা করতেই শহীদ জিয়ার কবর নিয়ে ইস্যু তৈরি করছে সরকার। করোনাতে ফেইলিওর, ডেঙ্গুতে ফেইলিয়র, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ফেইলিওর। মানুষের আসল সমস্যা নিয়ে মনোযোগ না দিয়ে ভিন্নপথেই চিন্তা-ভাবনাকে পরিচালনা করছে তারা। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মনোবল ভেঙ্গে দিতে সরকার নেতাকর্মীদের ওপর জুলুমের স্টিমরোলার অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেপরোয়া গতিতে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নানা কায়দায় জুলুম-নির্যাতন চালাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলাধীন শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক হায়দারীর বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দায়ের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কয়েক দফায় তার নিজ বাড়ি ও শ^শুরবাড়িতে তল্লাশির নামে পরিবারের লোকজনদের হয়রানির ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের চলমান দুর্বিষহ অবস্থায় বর্তমান শাসকগোষ্ঠী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সচেষ্ট না হয়ে বরং নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘ মেয়াদে আঁকড়ে থাকার লক্ষ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুমের স্টিমরোলার অব্যাহত রেখেছে। এর ধারাবাহিক অংশ হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক হায়দারীর বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে সরকার দিনের পর দিন হিংস্র থেকে আরও হিংস্ররূপ ধারণ করছে। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে বিনা কারণে নানা কায়দায় শায়েস্তা করা যেন ফ্যাসিবাদী সরকারের দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দল দমনের লক্ষ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারই শিকার হয়েছেন শহিদুল হক হায়দারী। বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহিদুল হক হায়দারীর বিরুদ্ধে ভুয়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগে মামলা দায়ের এবং তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে নাজেহাল করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির জোর দাবি করেন।