ভাস্কর্য বিতর্ক : সজীব ওয়াজেদ হেফাজতকে ‘রাজাকার’র সাথে তুলনা করায় প্রতিবাদ মামুনুল হকের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৫ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:৪৪ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস নামে একটি ইসলামি সংগঠন বলছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ভাস্কর্য না ভাঙ্গার কোনো অবকাশ থাকবে না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ ‘হেফাজত নতুন রাজাকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে’ বক্তব্য দেয়ার পর ইসলামি সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বলছে, যদি তারা ক্ষমতায় আসে তাহলে ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় থাকবে না। শুক্রবার রাতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং পুত্র সজীব ওয়াজেদ হেফাজতে ইসলামের সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার বক্তব্যে বলা হচ্ছে, একাত্তরে জামায়াত ইসলামের ভূমিকা এখন হেফাজতে ইসলাম নিচ্ছে।
বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক, একই সাথে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেছেন, ভাস্কর্য বিরোধিতার সাথে রাজাকার হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলছেন, ‘ভাস্কর্য বিষয়ের সাথে রাজাকারের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমরা মনে করি না। কোরআন, সুন্নাহর আলোকে ভাস্কর্য বা মূর্তি বা যেকোন প্রাণীর দেহ বিশিষ্ট অবয়ব সেটা ইসলাম গ্রহণ করে না। এটা রাজাকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না’।
তিনি বলেন ‘এটা রাজাকার বা স্বাধীনতার চেতনার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত না আদৌ’।
বাংলাদেশের ঢাকার ধোলাইপাড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর কট্টর অবস্থানের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর টানাপোড়েন শুরু হয়। আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকতে হলে বাংলাদেশের সংবিধান মানতে হবে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা আছে, আর ইসলামী দলগুলো ইসলামী অনুশাসন চাচ্ছে।
তিনি বলছেন, তারা একাত্তরের রাজাকারদের মানসিকতা পোষণ করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হলে আগে আপনাকে সংবিধান মানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যা অর্জন করেছিলাম স্বাধীন রাষ্ট্র এবং সংবিধান, সেই সংবিধানে যেগুলো আছে সেগুলাই তো মানে না। এরা একাত্তরে রাজাকার ছিল, এখনো আছে। সেই মন-মানসিকতায় পোষণ করে বলছিলেন হানিফ।
এদিকে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস নামে একটি ইসলামি সংগঠন বলছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ভাস্কর্য সরিয়ে না ফেলার অবকাশ থাকবে না। সংগঠনটির মহাসচিব মামুনুল হক, যিনি একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব, তিনি বলছেন, তারা একটা নিবন্ধিত সংগঠন হিসেবে রাজনীতিতে আছেন। যদি ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে ইসলামী আইন অনুসারে দেশে ভাস্কর্য রাখার অবকাশ থাকবে না।
তিনি বলছেন ‘আমি একটা নিবন্ধিত সংগঠন খেলাফত মজলিসের মহাসচিবের দায়িত্বে আছি, আমরা তো রাজনীতি করছি। এবং আমাদের অনেকগুলো ইসলামী সংগঠন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধিত হয়ে রাজনীতি করছে’। আমাদের সকলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং ঘোষণা হল আমরা দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে চাই। আমাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হলে, ইসলামি হুকুমত বাস্তবায়িত হলে ভাস্কর্য সরিয়ে না ফেলার কোনো অবকাশ থাকবে না বলছিলেন মামুনুল হক।
এদিকে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি এক বিবৃতিতে বলছে, ধর্মভিত্তিক দলগুলো ভাস্কর্য বিরোধিতাকে কোনো ধর্মীয় নয় বরং পরিপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে নিয়েছে।