আজ বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৯ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আজ ১ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
যে দলের অনুসারীরা হবেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক-বাহক, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত। তিনি নিজেও এসব গুণের অধিকারী ছিলেন। জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে শুরু হয় উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। রাজনীতিতে আসার আগেও এই মহান নেতার একটি ঘটনাবহুল জীবন রয়েছে। সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সবত্রই তাঁর একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে, যা জাতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। এখন দেশ ও জাতি এক চরম হতাশায় নিমজ্জিত, দিশেহারা, চরম সংকটে পতিত। ঠিক সেই মুহূর্তে এ দেশের সিপাহী জনতা একই বছরের ৭ নভেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন করান। এভাবেই একজন কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আবির্ভাব ঘটে। তিনিই প্রথম দেশে আওয়ামী লীগের গড়া একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের পাশাপাশি এনে দেন আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ পাঁচবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মতায় আসীন হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগসন্ধিক্ষনে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী উপাধি পান। তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়।
বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করে মিথ্যা সাজানো মামলায় বেগম খালেদা জিয়া কারাদন্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার দন্ডাদেশ শর্ত সাপেক্ষে স্থগিত করা হলেও কার্যত তিনি গৃহবন্দী হয়ে আছেন। মূলত: দেশে একটি তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ভোট অনুষ্ঠিত করতেই দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করা হয়। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, নেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। ভয়াবহ দু:শাসনের কবলে পড়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। ঠিক এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি আজ তাদের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে।
বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বিএনপির দাবি সেই সময়কার সেনা সমর্থিত সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে এবং তার দুই ছেলেকে আটক করা হয়। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাবে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করে। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে তারা দুর্বল করেত পারেনি। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি নেতাদের দাবি, দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে। তারা অভিযোগ করছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাই জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নামে নামকরণকৃত সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে তার স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে জোর করে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়। উচ্চ আদালত থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাসহ অন্যান্য মামলায় জামিন দেওয়া হলে নতুন নতুন মামলায় তাঁকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। জামিন পাওয়া তাঁর অধিকার হলেও সরকারের নির্দেশে আদালত তাঁর জামিন দেননি।
এমনকি এখনও তাঁকে পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে নানাবিধ জটিলতায় ভুগলেও তিনি তাঁর পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাঁর বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা ঘোষনা করা হয়েছে। যদিও একই মামলায় নিন্ম আদালতে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। এছাড়াও তাকে একাধিক মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আদালতের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তার বাকস্বাধীনতা। মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও। এরই মধ্যে সরকারের নির্যাতনে বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।
বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে যে বিএনপির প্রচেষ্টা দীর্ঘ ৪৩ বছর পরও সে লক্ষ অর্জনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দাবি দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, কৃষি, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সব সাফল্য বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে। জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজনসহ ইসলামী মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছেন।
বিএনপির ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দলের প্রতিষ্টাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্টবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে বিএনপি ওঅঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করবে।
বিএনপির ঘোষণাপত্র : প্রায় ২৮টি বিষয়কে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নির্ধারণ করে বিএনপি তার ঘোষণাপত্র আজ থেকে ৪৩ বছর আগে নির্ধারণ করে যা আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ববহ। ১. বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত ও সংহত ইস্পাত কঠিন ঐক্য, ২. উৎপাদনের রাজনীতি, ৩. জনগণের গণতন্ত্র ও রাজনীতি, ৪. রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ৫. সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূরীকরণ, ৬. সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় বিচার ও দ্রুত উন্নয়ন, ৭. মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন, ৮. বিলুপ্ত মানবিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন, ৯. স্থানীয় সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা, ১০. সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থনীতি, ১১. জনসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার, ১২. নারীর সার্বিক মুক্তি ও প্রগতি, ১৩. জাতিগঠন সমাজসেবা ও যুবশক্তির ব্যবহার, ১৪. পল্লী উন্নয়ন, ১৫. গণমুখী কৃষিনীতি, ১৬. সমবায় ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন, ১৭. সৃজনশীল, উৎপাদনমুখী এবং গণতান্ত্রিক শ্রমনীতি, ১৮. জীবনমান উন্নয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, ১৯. গণমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, ২০. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ২১. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, ২২. অনুন্নত এলাকা ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, ২৩. সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ হবে সশস্ত্রবাহিনী, ২৪. জাতীয় প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা, ২৫. বাংলা ভাষা, সাহিত্যের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার, ২৬. বাংলাদেশি সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ, ২৭. ধর্মীয় শিক্ষা, ২৮. জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রীতি ও সখ্য।
১৯৭৯’র ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচন : বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। সাধারণ নির্বাচনের পর দেশ থেকে সামরিক আইন ও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সুবেহ সাদিকের সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কুচক্রী সেনাসদস্য কর্তৃক শহীদ হন।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোসনহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। বিগত কিছুকাল যাবৎ আমি বিএনপির কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। দলের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে, এমন মনে করে আমাকে দলের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তাই দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি ও দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া আমার লক্ষ্য।’
১৯৮৩, ১ এপ্রিল : এই দিনে বিএনপির বর্ধিত সাধারণ সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসীন করা হয়।
আগস্ট ১৯৮৪ : বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসে। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাকে ব্যর্থ করে দেয়ার। কিন্তু অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গণতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৮৬’র সাধারণ নির্বাচন : বিএনপি ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগেরও বয়কট করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ এ প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেয় ও জাতীয় বেঈমান খেতাব প্রাপ্ত হয়।
১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন : এরপর আরো ৫ বছর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা পথ চলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। ১৯৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। বেগম খালেদা জিয়ার গণআন্দোলন সফল হয়। ফিরে আসে গণতন্ত্র। বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয় এবং তিনি ‘দেশনেত্রী’ আখ্যায়িত হন।
১৯৯১ সাধারণ নির্বাচন : বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে গণতন্ত্রের বিজয়ের ফলে এ সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এককভাবে সরকার গঠন করে ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে সংসদে হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারের মেয়াদের ৫ বছরে শতাধিক হরতাল ও অসহযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাধারণ নির্বাচন : সংবিধান রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালে নির্বাচন হয়। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে এবং সাধারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন করা হয়। এ নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ছিল শুধু সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা। : ৩ জুন ১৯৯৬, সাধারণ নির্বাচন : প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পায়। বিরোধী দল হয়েও সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে বিএনপি মানুষের কাছে আবারো নতুন পথের সন্ধান দেয়।
১ অক্টোবর ২০০১, সাধারণ নির্বাচন : নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ৫ম বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয় এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৩য় বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১১ জানুয়ারি ২০০৮ জরুরি অবস্থা জারি : বিএনপি সরকার ২৮ অক্টোবর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের লীগ-বৈঠার সন্ত্রাসের নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যায় লিপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ বিচারপতি কে এম হাসানকে মেনে নেয়নি। ফলে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। এক পর্যায়ে মরহুম রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক করে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নমিনেশন পেপার জমা দেয়। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ৩ জানুয়ারি হঠাৎ আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়।
এ পরিস্থিতিতে ১১ জানুয়ারি ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে তৎকালীন সামরিক বাহিনী সমর্থিত মঈন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। বর্তমান তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাগে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দল প্রায় দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে ও গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে তারা পরিশেষে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৯, সাধারণ নির্বাচন : দীর্ঘ ২ বছর সামরিক বাহিনীর সমর্থিত অবৈধ সরকারের অধীনে কারচুপির সাধারণ নির্বাচনে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে মেনে নিতে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে বহুল জনপ্রিয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কথা না থাকলেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে তারা দেশের ৯০ ভাগ জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে সে ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশের বিশিষ্টজন, বুদ্ধিজীবী, বিদেশি কূটনীতিকরা এ রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বারবার সরকারের কাছে দাবি জানালেও আওয়ামী লীগ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এমনকি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, তার বিশেষ দূত এবং মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগীদের আহবানও আমলে নেয়নি সরকার। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হন। একতরফা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বয়কট করে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হয় ১৫৪ সংসদ সদস্য। বাকি আসনে ভোট পরে মাত্র ৫ ভাগ। ভোটারবিহীন সে নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় নির্বাচন: ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তার আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ তারিখ রাতেই সারাদেশের কেন্দ্র দখল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহায়তায় জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ করে। দলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে ফলাফল ঘোষণা করে। যা সারাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচারিত হয়। যে নির্বাচনে শতাধিক ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ে। তাছাড়া ৮০ থেকে ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে শতশত কেন্দ্রে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎদল বিএনপিকে দেওয়া হয়েছে ৬ টি আসন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে ও আগে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করে।
মামলা থেকে বাদ যায়নি মৃত্যু ব্যাক্তি, হজপালতরত ব্যাক্তিসহ বিদেশে থাকা ব্যাক্তিরাও। হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক করে কারাবন্দি করা হয়। এমন একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন সম্পন্ন করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামরায় সাজা দিয়ে আগেই কারাবন্দি করা হয়। আইন আদালত, গণমাধ্যমে সবই নিয়ন্ত্রন করা হয় আগে থেকেই। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রনে নিতে দেশের প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এমন ভোট ডাকাতির নির্বাচন আগে কখনই দেখেনি। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে দেশের গণতন্ত্র আজ মৃতপ্রায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে বিরোধী দলের ওপর চালাচ্ছে দলন নিপীড়ন। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়ে সরকার সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। মিডিয়ার ওপরও চলছে দলন-নির্যাতন। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়,
আজ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল-বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঐতিহাসিক প্রয়োজনে জাতির এক যুগ সন্ধিক্ষণে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৪৩ বছরের পথযাত্রায় শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বিএনপি তার রাজনৈতিক আদর্শ ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এর পতাকা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অভিষ্ট লক্ষ্যে। দেশ ও জাতির প্রতি অঙ্গিকারাবদ্ধ এই দল ৪৩ বছরে দেশবাসীর সমর্থন ও ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।
আমাদের অঙ্গীকার- ইস্পাত কঠিন গণঐক্যের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে স্বনির্ভর, গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন। এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে; যার ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তমূলক মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসী রায় দিয়ে তাঁকে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এখনো নানা শর্তে তিনি বন্দি। দলের অগণিত নেতাকর্মীকে পোশাকি-অপোশাকি ঘাতকের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে। ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। তবুও থেমে থাকেনি বিএনপি’র অগ্রযাত্রা। বর্তমানে চরম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মৌলিক অধিকার হরণের মাধ্যমে রাজনীতির পথকেই সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে।
দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, লুটপাট, অনাচার আড়াল করতে একদিকে যেমন ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, অন্যদিকে মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে ব্যস্ত। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে নিয়ে চলছে মিথ্যার বেসাতি। এমন অবস্থায় দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার হতে হবে- যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতীতের মতোই ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় থেকে কাজ করতে হবে নিরলসভাবে। জনগণের সাথে আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত থেকে তাদেরকে সাথে নিয়ে লড়াই করতে হবে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। মহান স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন করে বিএনপি দেশের সমৃদ্ধি, গণতন্ত্রায়ণ ও দেশগঠনে কাজ করছে। একইভাবে দুঃশাসন, দুর্যোগ, দুর্বিপাকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিএনপি সবসময় জনগণের পাশে ছিল, থাকবে।
৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই ক্ষণে আমি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধার সাথে। অভিনন্দন জানাই-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি, যিনি শত নির্যাতন, দমনে অবিচল থেকেছেন এবং এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন। সম্মান জানাই দলের একনিষ্ঠ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের, যারা গুম-খুন ও পঙ্গুত্বের ভয়কে জয় করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নৈতিক লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আমি বিএনপি’র সকল প্রয়াত-নিহত নেতাকর্মীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। নির্যাতিত-নিপীড়িত নেতাকর্মীর প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। সেইসাথে এই যুগসন্ধিক্ষণের দিন উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ থেকে ৪৩ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের অন্ধকার যুগ থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। আমি তাঁর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বারবার দেশ ও গণতন্ত্রের সঙ্কটকালে অসীম সাহসিকতার সাথে জুলুম-নির্যাতনকে সহ্য করেও দুর্বার আন্দোলনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন আমি সেই অদম্য সাহসের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। এই দিনে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতৃবৃন্দ মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতিও জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতাকর্মীরা আত্মদান করেছেন তাদের প্রতিও জানাই আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।
আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই শুভদিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশ ও মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দলকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানাচ্ছি।
বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। এর ওপর করোনা মহামারীর আক্রমণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের মানুষ। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাবী, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ্বং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে হয়রানির খড়গ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার শিকার। কারণ তিনিই গণতন্ত্রের প্রতীক এবং জনগণের নাগরিক ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে প্রধান কন্ঠস্বর। পাশাপাশি দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আমি দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য উদাত্ত আহবান জানাই।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তাঁর বাসভবনে গৃহবন্দী থাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১ সেপ্টেম্বর আজ বুধবার বেলা ১১ টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। সাড়ে এগারটায় ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর দক্ষিন জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়াও নয়াপলটনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হেলথ ক্যাম্প উদ্বোধন করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পোষ্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।