আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিবের বাণী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৫ পিএম, ৩০ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৭ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
গতকাল রবিবার (২৯ আগস্ট) বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতরের চলতি থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, সারাবিশ্বে বিভিন্ন সময়ে গুম হয়ে যাওয়া মানুষদের স্মরণে ৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস। নিখোঁজ হওয়া মানুষদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসটি ২০১১ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে শত শত গুমের ঘটনায় বাংলাদেশিরা উদ্বিগ্ন। বিএনপি নেতাকর্মীসহ অন্য যারা গুম হয়েছেন তাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং নিখোঁজ মানুষদের পরিবারের প্রতি জ্ঞাপন করছি সহমর্মিতা। পৃথিবীজুড়ে গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য এই দিবসটি পালন করা হয়। গুম এখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীরা এই হাতিয়ার ব্যবহার করে যথেচ্ছভাবে।
বাংলাদেশে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই গুমের শিকার হয়েছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। দেশে বিরোধী দল-বিরোধী মত ও বিরোধী রাজনৈতিক বিশ্বাস দমন করার জন্য সমাজে সন্ত্রাস ও ভয় সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকার নির্বিচারে গুমকে ব্যবহার করে আসছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অব্যাহতভাবে গুম করা হচ্ছে সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিক, সাধারণ ছাত্র-যুবক এমনকি গৃহবধূও। এদের মধ্যে কয়েকজনকে ফেরত দিলেও বাকিরা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলমসহ ছাত্র, যুবক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, মুক্তমনা মানুষকে গুম করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দুই মাস গুম করে রাখার পর অন্য দেশে পাচার করা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিমূর্লের এই মনুষ্যত্বহীন সংস্কৃতি বাংলাদেশে ছিল না, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই কেবলমাত্র এই পৈশাচিক সংস্কৃতি চালু করে। মানুষের এখন জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। যেদেশে জীবন্ত মানুষ অদৃশ্য হয়ে যায় সেই দেশের মানুষরা যেন আদিম অরণ্যেই বাস করছে। এইসব গুমের সাথে সরকার ও তাদের অনুগত রাষ্ট্রযন্ত্র জড়িত।
ফ্যাসিবাদী অবৈধ ও নিশিরাতের আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশে শত শত গুমের হোতা হচ্ছে সরকারি এজেন্সীগুলো। গুম হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী বর্বর শাসনেরই অনুসঙ্গ। গুম হওয়া পরিবারগুলো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয়জনকে ফেরত পাওয়ার জন্য। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কন্ঠে বর্তমান অপশাসনের অবসানের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। গুম মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। গণতন্ত্র ফিরে আসলেই মানবতা-জবাবদিহিতা ফিরবে এবং গুমের অবসান হয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৩০ আগস্ট ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে আমি গুমের মতো ভয়াবহ ও লোমহর্ষক পরিস্থিতির শিকার মানুষদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
বাংলাদেশে গুমের আতঙ্ক এখন সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে সৃষ্টি হয় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতা বিরোধী হিংস্রতা। ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের দ্বারা গড়ে তোলা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিরোধী দলের প্রতিবাদী নেতাকর্মী ও স্বাধীনচেতা মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া এখন নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা বিরোধী দল ও মতের মানুষদের অল্পদিন-দীর্ঘদিন অথবা চিরদিনের জন্যে নিখোঁজ করে দেয়। যাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়নি, তারা জীবিত না মৃত তা অজানাই থেকে যাচ্ছে। গুম হচ্ছে একদলীয় ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের নমুনা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।
বাংলাদেশে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিরোধী দল ও মতশূন্য একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্যই গুমকে পথের কাঁটা দূর করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে একের পর এক মানবতা বিরোধী অপরাধ করে যাচ্ছে। এই নৃশংস গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, সাবেক কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, সুমন, জাকির, মুন্নাসহ অসংখ্য মানুষ।
আরেকটি অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে অন্য দেশে। এইসব ঘটনা দেশবাসীকে অজানা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। গুম হওয়া মানুষদের বেদনার্ত পরিবাররা এখনও পথ চেয়ে বসে আছে প্রিয়জনদের ফিরে আসার সম্ভাবনায়। রাষ্ট্র সমাজে মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির জন্যই গুমকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠী। মূল লক্ষ্য বিরোধী কন্ঠকে নির্মূল করা, সমালোচনার অবসান ঘটানো এবং ফ্যাসিবাদী শাসনকে নিষ্কন্টক করা।
গুমের অব্যাহত পরিস্থিতিতে দেশে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য। জনসমর্থনহীন ও ভোটারবিহীন সরকারের টিকে থাকার অন্যতম প্রধান অবলম্বনই হচ্ছে গুম। এই ধারা চলমান থাকার কারণে বাংলাদেশ অরাজকতার ঘন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে।
আসুন, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হই। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার, নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠন এবং সুশাসন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই গুম, অপহরণ, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ দূর হবে, জন-জীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে।