সরকার হটানোর আন্দোলনে জোটবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২২ এএম, ৩০ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৬ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সরকার হটানোর আন্দোলনে জোটবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘শত নাগরিক’ জাতীয় কমিটির উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য মরহুম সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। গত ২০ আগস্ট কোভিডে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহাঙ্গীরনগর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শত নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব কবি আবদুল হাই শিকদার।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে একটা দানবীয় শক্তি ওরা আমাদের সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে। আজকে সত্যিকার অর্থেই একটা ফ্যাসিবাদী যে একটা রাষ্ট্র তৈরি করেছে তারা যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ দিতে চাই তাহলে আমাদের সকলকে জোটবদ্ধ হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের কোনো বিকল্প নেই এখন রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া। এটা শুধু রাজনৈতিক দল বিএনপি নয় বা শুধুমাত্র বিরোধী দলগুলো নেমে আসতে হবে, সবাইকে নেমে আসতে হবে। আজকে যারা এখানে আছেন সুধীজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আছেন, সংবাদসেবীরা আছেন প্রত্যেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ বাদ পড়ছেন না। সুতরাং সবাইকে নেমে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ওপরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হামলার ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ছেলেরা তাদের একজন সহকর্মীর মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে গেছে। সেই খানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশ সহকারে তাদের ওপর নির্মমভাবে আঘাত করেছে, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। কিছুদিন আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাহেবের মাজারে ফুল দিতে গেলো আমাদের ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ। কোনো উস্কানি ছাড়া কোনো রকম ঘটনা ছাড়াই সেখানে ভয়াবহ তান্ডব সৃষ্টি করলো পুলিশেরা। প্রায় ১৮৭ রাউন্ড গুলি করেছে এবং প্রায় ৪২ জনকে আহত করেছে। আপনরা দেখেছেন যে, আমাদের আমান উল্লাহ আমান, আমিনুল হকসহ ৭২ জন নেতা সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সদ্য মরহুম শিক্ষাবিদ খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানের বর্ণাঢ্য শিক্ষা ও কর্মজীবন তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, মুস্তাহিদুর রহমানকে হারিয়ে শুধু পরিবার নয়, আমরা যারা বন্ধু-সহকর্মী-শুভানুধায়ী শুধু তারা নয়, গোটা জাতির জন্য শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। মুস্তাহিদুর রহমানরা সব সময় জন্মায় না। আজকে এমন এক সময় তিনি চলে গেলেন যখন তাকে আমাদের দরকার ছিলো। আসুন আমরা তার জন্য দোয়া করি তিনি যেন বেহেস্ত নসিব হয়। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল করতে পারলেই তার আত্মার শান্তি পাবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা সকলে কাজ করি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কোনো বিকল্প নেই এখন রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া। এটা কেবল মাত্র রাজনৈতিক দল বিএনপি নয় এবং শুধু মাত্র বিরোধী দলগুলো নয় সবাইকেই নেমে আসতে আসতে হবে। আজকে কিন্তু প্রত্যেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ কিন্তু বাদ যাচ্ছেন না। তাই সবাইকেই রাস্তায় নেমে আসতে হবে। এই একটা ভয়ংকর দেশবিরোধী শক্তি। এরা একটি দেশ বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই দেশবিরোধী শক্তিকে সরাতে হলে অবশ্যই আমাদের সকলকেই আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তাদেরকে পরাজিত করবার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। জনজনকে সংগঠিত করতে হবে এবং এদেরকে পরাজিত করতে হবে। খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, খন্দকার মুস্তাহিদরা সবসময় জন্মান না। এটা অত্যন্ত বাস্তবতা। এমন একটা সময়ে তিনি চলে গেলেন যখন তাকে আমাদের খুব দরকার ছিলো। আমরা একটি ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছি।
শত নাগরিকের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও মরহুম খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানের ছেলে খন্দকার আশফাকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।