আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ সরকারকে পরাজিত করতে হবে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৮ এএম, ২৭ আগস্ট,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১০ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকার হটানোর আন্দোলনের জন্য আগাম প্রস্তুতির ডাক দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ এক অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি এই আহবান জানান।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গোরানে ফ্রেন্ডস কনভেনশন সেন্টারে ঢাকা-১০ আসনের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ‘করোনা হেল্প সেল’-এর উদ্বোধনে উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশকে যদি আমরা মুক্ত করতে না পারি, আওয়ামী লীগকে যদি সরাতে না পারি, আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবো না, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করতে পারব না। আমরা হাজার হাজার মানুষ যে মিথ্যা মামলা নিয়ে চেপে বসে আছি আমরাও মুক্ত হতে পারবো না। সেজন্য আমি আগাম আন্দোলনের প্রস্তুতির আহবান জানাচ্ছি। আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে, রাস্তায় নেমে আসতে হবে, সোচ্চার হতে হবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ সরকার তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। তাদেরকে বাধ্য করতে হবে যে, নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনেরে পরিচালনায় দেশে একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার মধ্য দিয়ে জনগণ ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবে, সরকার গঠন করবে।
তিনি বলেন, এখন আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। আমরা ১০/১২ বছর ধরে সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, আমাদের ৫‘শ বেশি ভাই গুম হয়ে গেছে, আমাদের হাজারের ওপর মানুষ খুন হয়ে গেছে, আমাদের অনেককে হাটুতে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। সুতরাং আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য, আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে তরুণ য্বুক যারা আছেন তাদেরকে জেগে উঠতে হবে। পরিবর্তনে আসে সবসময় তরুণদের মাধ্যমে, তাদের নেতৃত্বে, তাদের বীরত্ব ও তাদের সাহসিকতার মধ্য দিয়ে। এখন কাজ করতে হবে তরুণ যুবকদের।
গণটিকার নামে গণসংক্রমণ বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণটিকার কথা বলে তারা গণসংক্রমণ বাড়িয়েছে। টিকা ঠিক মতো দিতে পারে নাই। এই যে টিকা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ধরা পড়ে চ্যালেঞ্জ করেছে র্যাব ধরে নিয়ে গেছে-পত্রিকায় উঠেছে। দিস আর ফ্যাকটস। আজকে চীন থেকে টিকা আনছেন, তাদের সাথে চুক্তি করছেন। অথচ চীন অনেক আগেই এসেছিলো ২০২০ সালে-আমার সাথে চুক্তি করো টিকার ব্যবস্থা করে দেবো। তখন আপনি সেটা করেন নাই। যখন ভারত থেকে টিকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তখন আপনি চীনকে বলছেন আমাকে টিকা দাও। টিকা এখানে উৎপাদন হবে না শুধু বোতলজাত করা হবে। আমাদের কথা পরিষ্কার, যেখান থেকেই টিকা আনেন সেই টিকা হতে হবে মানসম্পন্ন, টিকা যেন কাজ করে। আপনারা মানুষকে এককথা বলবেন আর কাজ করবেন আরেকরকম। এভাবেই আপনারা জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন।
তিনি বলেন, কথা বললেই বলে যে, আমরা সমালোচনা করি। সরকারের দোষ-ত্রæটি দেখিয়ে দেয়া বিরোধী দলের দায়িত্ব। আপনারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছেন মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করতে। আপনারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এই করোনা মোকাবিলা করতে এবং আপনারা জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন, মিথ্যা কথা বলেছেন। টিকা নিয়ে যে তেলেসমাতি কান্ড তারা করেছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে-চুরি করা। টিকা নিয়ে দুর্নীতি করেছে, টিকা নিয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছে, মানুষের জীবনকে জিম্মি করে তারা টিকা নিয়ে ব্যবসা করছে। টিকার দাম বলে না- কত দিয়ে কিনছে তা বলে না। যে বলে তার আবার চাকরি যায়-পত্রিকায় দেখেছেন। আজকে যে টিকা ৩ ডলারে পাওয়া যায় সেই টিকা তারা কিনছে ১০ ডলারে।
অপহরণের সাথে জড়িত থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখবেন দিনাজপুরে একজন এএসপিসহ ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছে। কেনো? অপহরণ করার দায়ে। যাবে কোথায় মানুষ। পুলিশের অফিসাররা যদি অপহরণ করে, ৫০ লক্ষ টাকা চায় দেশের মানুষ যাবে কার কাছে? চট্টগ্রামের কক্সবাজারে মেজর সিনহা হত্যা মামলা শুরু হয়েছে। কী ভয়ংকর? যে একজন পুলিশ অফিসার সে সারাসরি গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পা দিয়ে গলা চেপে ধরেছে। চিন্তা করতে পারা যায় না কী অমানবিক? আমরা জানি আমাদের অনেক পরিবার আছে, অনেক ভাই-বন্ধু আছেন যাদের ছেলেরা গুম হয়ে গেছে, যাদের সন্তান গুম হয়ে গেছে। এই পুলিশ বাহিনী, এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তারা এসব করিয়েছে। সেজন্য এদেশের মানুষ অসহায়ের মধ্যে পড়েছে তারা কোথায় যাবে? বিচারালয়ে যাবে, কোর্টে যাবে সেখানেও দলীয়করণ, দল হিসেবে মানুষের বিচার হয়।
তিনি বলেন, এই সরকার সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ করেছে। যেটাকে আমি বলি- তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। আজকে এই অনুষ্ঠানে অনেক সাংবাদিক ভাইয়েরা এসেছেন, অনেক ক্যামেরা। নিজেরা কিছু লিখতে পারবেন না, সাহস করে লেখার শক্তি নাই। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন আইন দিয়ে গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা কোনোভাবে একটা গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারে না, এটা সম্পূর্ণভাবে একটা কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী দেশে পরিণত হয়েছে। এখন আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
করোনার শুরু থেকে বিএনপি জনগণের পাশে রয়েছে উল্লেখ মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি প্রথম দিকে সেই সময়েও জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রায় ৪ কোটি মানুষের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা পৌঁছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। বিএনপি একমাত্র দল যে দল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।
এই হেল্প সেলের উদ্বোধন করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই করোনা নিয়ে দেশে রাজনীতি হচ্ছে, এই করোনা নিয়ে ব্যবসায়িক রাজনীতি হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় রাজনীতি হচ্ছে, জাতীয় রাজনীতি হচ্ছে। আমরা করোনা নিয়ে কোনো রাজনীতি করতে চাই না। আর করোনা নিয়ে রাজনীতি নয়, টিকা নিয়ে রাজনীতি নয়। আমি আজকে আহবান জানাব, আসুন সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করে এই করোনাকে প্রতিহত করি। অন্যান্য দেশের মতো আমার দেশে কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা হয় নাই। মাঝে মাঝে কিন্তু আর যেন খারাপ অবস্থা না হয়। আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাব বিষয় যে ভেবে চিন্তে দেখেন। মানুষকে মরতে দেয়া যাবে না। শুধু লকডাউন দিলে শেষ হয়ে যাবে না, লকডাউনে দিয়ে গরীব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
টিকা সংগ্রহে বিলম্বের প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কেনো আমাদের টিকা দিতে এতো দেরি হলো, আমরা এতো দেরিতে শুরু হলো কেনো? কেনো ভারতীয় গিফটের মাধ্যমে শুরু হলো? আমরা এডভান্স পুরো টাকা দিয়েছে সেই টিকা কেনো দেশে আসে নাই। এখন খুঁজে খুঁজে ভ্যাকসিন আনতেছে, আজকে মর্ডানার, কালকে ফাইজার, পরশু সিনোভ্যাক্স। কেনো আমরা একসাথে এসাথে আনতে পারছি না। কারণ একটাই বিশেষ ব্যক্তিদের সুবিধা দেয়ার কথা ছিলো, সেই বিশেষ ব্যক্তিদের সুবিধা দিতে না পেরে দেরি হয়ে গেছে, সেই বিশেষ ব্যক্তিদের খবর নাই, আমাদের ওষুধেরও খবর নাই। এই হচ্ছে অবস্থা।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও খিলগাঁও থানা সভাপতি ইউনুস মৃধার পরিচালনায় ঢাকা-১০ আসনের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ‘করোনা হেল্প সেল’-এর উদ্বোধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিব, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে ইউসুফ বিন জলিল কালু, আবদুল মানায়েম মুন্না, মাসুদ আহমেদ মিলন, গোলাম হোসেন, জামিলুর রহমান নয়ন, মাহবুবুল আলম বাদল, এনামুল হক এনাম, আল-আমীন প্রমুখ।