শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘ভয়ংকর ক্ষতি’ করছে সরকার - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১১ এএম, ২৪ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:০৫ পিএম, ৬ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘ভয়ংকর ক্ষতি’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার দুপুরে দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির পরিচালিত কোভিড-১৯ হেল্প সেন্টারের জন্য ওষুধ সামগ্রী হস্তান্তর উপলক্ষে জিয়া পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। করোনায় ওষুধপত্র দেয়ার জন্য জিয়া পরিষদকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেখেন- হঠাৎ করেই কঠোর লকডাউন-টকডাউন সমস্ত উধাও হয়ে গেলো। এখন খুললাম- যে যেমন খুশি চলো। হাজার হাজার মানুষ একসাথে চলছে, ফিরছে-সব কিছুই করছে। একটা জিনিসই চলছে না এটা হচ্ছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন শিক্ষা না পায় সেই ব্যবস্থা তারা (সরকার) করছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই করোনার একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেমন তারা টিকার জন্য পরিকল্পনা করেছে, টিকা ভ্যাকসিনেশনের জন্য পরিকল্পনা করেছে, তেমন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জীবন-জীবিকার পরিকল্পনা করেছে এবং একই সঙ্গে কিভাবে শিক্ষা প্রদান করা যায় সেটার জন্য তারা পরিকল্পনা করেছে। আমাদের এখানে কোনো পরিকল্পনা নাই। এই যে একটা ভয়ংকর ক্ষতি হচ্ছে প্রজন্মের, ক্ষতি করছে প্রজন্মের। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, অনলাইনে কারা পড়ে? একমাত্র যারা বিত্তশালী মানুষ তারাই অনলাইনে পড়া-শুনা করতে পারে, আর তো কারো পক্ষে সম্ভব নয়। একটা কম্পিউটার যোগাড় করা, একটা মোবাইল সেট যোগাড় করা- সারা দেশে সেটা নাইও। গ্রামে স্কুল যেগুলো আছে সেগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ। পত্রিকায় দেখেছেন যে, ছেলেরা এখন বেলুন বিক্রি করছে, বাদাম বিক্রি করছে। স্কুল বন্ধ এখন তারা বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য এগুলো করছে। অর্থাৎ দে হেভ বিন অলরেডি ডাইভার্টেড। এই যে একটা ভয়ংকর ক্ষতি হচ্ছে প্রজন্মের সেই ক্ষতিটা সরকারকে মোকাবিলার করার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা তারা সেভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। তারা আছে শুধু বিভিন্ন রকম ভুল ব্যাখ্যা ও তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে।
টিকা নিয়ে তেলেসমাতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনা মোকবিলায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে সব দিক দিয়ে। না পেরেছে তারা চিকিৎসা দিতে, না পেরেছে তারা আমাদের জনগণকে আগাম একটা প্রিভেনটিভ তৈরি করার জন্য একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে, না পেরেছে তারা মানুষের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি করতে যে, আমি এখানে চিকিৎসা পাবো। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে শুধু দুর্নীতির কারণে। টিকা নিয়ে তেলেসমাতি কান্ড। এতো মিথ্যা কথা, এতো মিথ্যা অপপ্রচার যে মিথ্যা অপপ্রচার ও ভুল তথ্য দিয়ে পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। যারা বিশেষজ্ঞ আছে তারা বলছেন যে বয়সে মানুষের টিকা দেয়া দরকার আমি ধরে নেই সেটা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত টিকা দেয়া দরকার। তাহলে আপনার টিকার প্রয়োজনীয়তাটা হয় মোটামুটিভাবে ১৩ কোটি। ১৮ কোটির দেশে ১৩ কোটি টিকা দরকার হয়। তাহলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। আনে ২ লাখ, ৩ লাখ, ১ লাখ। তাও আবার দান, অনুদান আসে। সেখানে বলে যে, আমরা গণটিকা প্রদানের অভিযান করছি এবং প্রতিদিন এক কোটি করে টিকা দেবো। অনরেকর্ড বলেছে। অথচ টিকা নাই।
তিনি বলেন, এই যে মিথ্যা তথ্য-প্রচারণা। এদের লজ্জা-শরমও নেই। তারা ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্য কথা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আমি একদিন বলেছি যে, এটা একটা ফ্রড গভমেন্ট। করোনার শুরু পর প্রথম দিকে চীন ও রাশিয়া টিকা প্রদানের প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, চীন ও রাশিয়া প্রথম দিকে এখানে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। তখন তারা (সরকার) নেয়নি। কেনো নেয়নি? তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতম ইতিহাসের সর্বোচ্চ সম্পর্ক যাদের সঙ্গে আরকি। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিলো যে চুক্তিটাও সম্পূর্ণ জনবিরোধী চুক্তি। সেই টিকার দাম বেশি, আবার টিকার অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করে দেয়া হয়েছিলো। পরে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সম্ভবত এক কোটি ২০ লাখ টিকা এসছিলো আর কোনো টিকা আসেনি। এখন চীনের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছে। আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, এখানে টিকা বোতলজাত করবে। আমি জানি না এই চুক্তির ভেতরে ডিটেলস কি আছে, কখন শুরু করবে। আমার কথা হলো চীনের টিকাই যদি নিতে হয়, ওইটাই যদি উৎপাদন করতে হয় তাহলে প্রথমে করলেন না কেনো? একটা বিশেষ প্রাণী যখন পানি খায় ঘোলা করে। এরা হচ্ছে সেই প্রাণী যারা ঘোলা করে খায়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গোটা দেশের মানুষ যখন করোনার টিকা ও জীবন-মৃত্য নিয়ে লড়ছে সেই সময়ে তারা এটাকে ডাইভার্ট করে দিতে চান বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। আমি মনে করি ওনার (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত। কোনো দায়িত্বশীল নেতার কাছ থেকে এই বিষয় নিয়ে এতো কথা বলার আছে বলে আমি মনে করি না। একইভাবে ওরা শহীদ জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেই চলেছে। বন্ধ হচ্ছে না, চলছেই। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকেরাই জড়িত, জিয়াউর রহমানের প্রশ্নই উঠতে পারে না। এভাবে জাতিকে ধোঁকা দিয়ে, মিথ্যা কথা বলে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার ভয়ে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই তারা (ক্ষমতাসীনরা) এসর মিথ্যাচার করছে। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। যতকিছু বলো না কেনো তাকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক এমতাজ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জিয়া পরিষদের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম, সহকারী মহাসচিব শরিফুজ্জামান, নুরুন নবী খান, শহীদুল ইসলাম শহিদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ প্রমুখ নেতারা ছিলেন।