আমাদের আন্দোলন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার - গয়েশ্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৭ এএম, ২৪ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৩২ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
সরকার নানাভাবে ফাঁদে ফেলে ২০১৮ সালের মতো বিএনপিকে আবারও নির্বাচনের মাঠে নামানোর চেষ্টা করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, এখন বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে তারা নির্বাচনে যাবেন কিনা? শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে না নিয়ে নূরুল হুদাকে রেখে নির্বাচনে গেলে একটি ফেরেশতা এনেও যদি নির্বাচন করানো হয় তাহলেও সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবার কোনও উপায় নেই।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, এক দফা এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি। জনগণের দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই পদত্যাগে যদি সব সমস্যার সমাধান হয় তাহলে প্রতিটি সমস্যা নিয়ে আমরা কেন কথা বলবো। তিনিতো (প্রধানমন্ত্রী) ইচ্ছে করে খুকুমণি-পরীমনির মতো ইস্যু কয়েকদিন পরপর সামনে নিয়ে আসছেন। এটা বুঝতে হবে না আমাদের। আর আমরা সব বুঝেও গেছি।
তিনি বলেন, একটাই কথা রাখি, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে আমরা বাধ্য করবো। এক দফার আন্দোলনেই সুরাহা হবে। জনগণের আন্দোলন কখনোই বৃথা যায় না। আমাদের আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার। আমাদের আন্দোলন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার। আমাদের আন্দোলন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার। আমাদের আন্দোলন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট ব্যাখ্যা দিতে পারবেন, কোন আইনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেননি? কোন আইনের বলে? স্বাধীনতা-উত্তরকালে ফাঁসির আসামির জামিন হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজার আসামির তো প্রায়ই হয়। যেনতেন আসামিরও জামিন হয়, খালেদা জিয়ার জামিন হয় না কেন? বিচারপতিদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আপনারা একটু ব্যাখ্যা করবেন খালেদা জিয়াকে কোন আইনের বলে জামিন দেন নাই? এটা জনগণ জানতে চায়? আদালত প্রশাসন সব শেখ হাসিনার আঁচলের গিট্টায় বাঁধা, এই আঁচল কাটতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঘরে বসে করোনায় না মরে রাজপথে গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়ে ইতিহাসের বুকে নিজের নামটা লিখে যাই। চাকরি করলে আরও ১২ বছর আগে বড় সচিব থেকে অবসরে যেতাম, ব্যবসা করলে ওই দরবেশের মতো আমরাও ব্যবসায়ী হতাম। আমরা আসছি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য। কার কত টাকা হয়েছে এতে আমাদের কোনো হিংসা নেই। সময় মতো হিসেব দিতে হবে টাকাটা কিভাবে হলো। কোন পথে হলো। বড়লোক হওয়াটা অপরাধ নয়, কারণ বড় লোক কি করে হলেন, এটাকি পকেট মেরে হলেন, নাকি ছিনতাই করে হলেন নাকি প্রতারণা করে হলেন সেটা দেখার বিষয় রয়েছে।
গয়েশ্বর আরও বলেন, তারেক রহমান দেশে আসবেন, আর সেদিনতো বিমানবন্দরে মানুষের জায়গা হবে না, এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। তারেক রহমানের নাম মাতৃক্রোড়ে শিশুর কানে পৌঁছে দিচ্ছে আমরা যতটা না, তার থেকে বেশি সরকার। তারেক রহমানকে নিয়ে যতটা প্রচার তারা করছে, ততটা প্রচার আমরা করতে পারছি না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়, প্রশাসনের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের নামে মামলা হয়েছে। গতকাল মামলা হয়েছে ইউএনও ও ওসির নামে। আমি বিস্মিত হচ্ছি যে, আন্দোলন যখন চলছে তখন মনে হয়েছে প্রশাসনের এই লোকেরা আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় ক্যাডার। তারাতো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান কিন্তু এটা মনে হয়নি। আওয়ামী লীগের গুন্ডাতন্ত্র প্রতিহত না করে এখন নিজেরা আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের আন্দোলনে যশোরের এসপি বলেছিলেন- কি ব্যাপার আমি মিছিলের শব্দ শুনি, গুলির শব্দ শুনি না কেন। তিনি শেখ হাসিনার প্রিয় পাত্র হতে চেয়েছেন। ওই সময় শুনেছি পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তারা বলেছেন, আমরা বন্দুক গুলি দিয়েছি পকেটে রাখার জন্য? এটা ব্যবহার হচ্ছে না কেন? যে দল সরকার পরিচালনা করেছে, সংসদে বিরোধী দল ছিল, জনগণের স্বার্থ রক্ষা করেছে সেই দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর কথা বলছে, অদ্ভুত ব্যাপার। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, সমাজে কোথায় আপনাদের ভিত্তি রেখেছেন? যারা গুন্ডামি করে ক্ষমতা দখল করে আছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে, তাদের রক্ষা করার জন্য এমন কোনো কাজ নাই, আপনারা করেন নাই।
তিনি বলেন, আমরা জানি যে, প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। যদি সরকার অত্যাচারী হয় তাহলে প্রশাসনের কাছে বিরোধী দল শেষ আশ্রয় স্থল ও বিচারকের কাছে সঠিক বিচার পাবে। কিন্তু এখন সেই জিনিসটা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। একজন বিচারক সঠিক রায় দেয়ার কারণে তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। আর প্রধান বিচারপতিকে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আর নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান প্রশাসন তারা কোনো ভূমিকাই পালন করেনি। আজ আপনাদের (প্রশাসনের) ওপর আক্রমণ হচ্ছে, জনগণ নীরব ভূমিকা পালন করছে কারণ আপনাদের জনগণকে রক্ষা করার যে দায়িত্ব তা পালন করেন নাই।
রিজভী বলেন, আজ সকলে মিলে এই গুন্ডাতন্ত্রকে প্রতিহত করার দরকার ছিল। কিন্তু আপনারা (প্রশাসন) আপনাদের দিক থেকে এগিয়ে আসেননি। এখন আপনারা সে গুন্ডাদের শিকার হচ্ছেন। তারা আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ইউএনওর বাসায় গুলি করছে। সেই দিন যদি আপনারা (প্রশাসন) দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতেন তাহলে আজকে এসব ঘটনা ঘটতো না।
তিনি বলেন, মিথ্যাই এ সরকারের সম্বল। তারা করোনাকে রাজনীতিকরণ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যখন দেখছে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে না তখন তারা আরেকটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এই সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে চারদিকে মানুষ মারা যাচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনরা মারা যাচ্ছে। এই সরকার কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করতে পারে নাই। তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। শুধু তাই নয়, এই করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে এই সরকার যে দুর্নীতি করেছে তা পৃথিবীর মধ্যে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। তারা যে মাস্ক আমদানি করেছে সেটা তাদের নিজের লোকদেরকে দিয়ে করিয়েছে, নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করেছে আর তাদের পকেট ভারী করেছে। আর বলেছে এন৯৫ সরবরাহ করেছি। তারা মিথ্যার ওপর মিথ্যা বলে।
তিনি বলেন, এই সরকার দুর্নীতির যে পরিকাঠামো নির্মাণ করেছে সেই কাঠামো ঠিক রাখতে যা মন চায় তাই করছে। মানুষের লাশের ওপর দিয়ে, রক্তের ওপর দিয়ে। একটি সরকার যদি সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর পরিচালিত হয় তাহলে মানুষ দুর্ভিক্ষে থাকবে। আজ দেশের মানুষের অবস্থা তাই হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী, সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএস জিলানী, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমুখ।